নিজস্ব সংবাদদাতা: কার্যত দলীয় কর্মীদের তীব্র চাপের মুখেই পদত্যাগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ট হলদিয়া পৌরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান শ্যামল আদক। যদিও প্রকাশ্যে তিনি পদত্যাগের কারন হিসাবে সেসব কিছু উল্লেখ করেননি কিন্তু ঘটনা এটাই যে দলের মধ্যে তীব্র চাপের মধ্যেই ছিলেন তিনি। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পৌরসভায় আসছিলেন না তিনি এমনটাই জানা গেছে পৌরসভা সূত্রে। এরপরই হঠাৎই তিনি শুক্রবার পদত্যাগ করলেন।
গত এক সপ্তাহে হলদিয়া পৌরসভার সামনের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শুভেন্দু আর তাঁর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপক সমস্ত ব্যানার। পরিবর্তে এলাকা প্রায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্মিলিত ব্যানারে। গত ২দিন ধরে আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করার মত যে পৌরসভার গেট জুড়ে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেতন বাড়ানো, অবসর কালীন ভাতা, ইনক্রিমেন্ট ইত্যাদি নিয়ে কর্মচারীদের পোষ্টার পড়েছে এবং সেই পোষ্টার দিয়েছেন পুরসভার তৃনমূল কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। বোঝাই যাচ্ছিল চাপ বাড়ছিল চেয়ারম্যান শ্যামল আদকের ওপর। আর তারপরেই এই পদত্যাগ।
শুধু তাই নয় শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই দলীয় কর্মীদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছে তাঁকে। ব্যাপক কর্মী বিক্ষোভের মুখে মাস খানেক আগে দুর্গাচকে অনুষ্ঠিত দলীয় কর্মসূচি ‘বঙ্গধ্বনি’র মঞ্চ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। দিন কয়েক আগেই টাউনশিপে আইএনটিটি ইউসির একটি সভায় শ্যামল আদকের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন দলীয় কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই সভাতেই তৃনমূল যুব কংগ্রেসের কর্মীদের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙে যায় শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ আরেক নেতা শিবনাথ সরকারের।
এরপর শ্যামল আদক বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মন্ডল আদকের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার পরিকল্পনা করলেও সে যাত্রায় রাজ্যের হস্তক্ষেপে বেঁচে যান শ্যামল কিন্তু দলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠী ফের তাঁকে সরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে অনুমান করেই সম্ভবত পুরসভার পদ ছাড়লেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্রের খবর, শিল্প শহর হলদিয়ার পুরসভার নতুন চেয়ারম্যান হতে চলেছেন সুধাংশু মণ্ডল। তিনি ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে তৎকালীন বাম পুরবোর্ডের কাউন্সিলরদের ভয় দেখিয়ে, পুলিশি হেনস্থা ও মামলার হুমকি দিয়ে পুর বোর্ড ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। তারপর চলতি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন দেবপ্রসাদ মন্ডল। শ্যামল আদক তখন শুভেন্দু অধিকারীর হয়ে শিল্পাঞ্চল শাসন করছেন শ্রমিক নেতা হিসাবে। ২০১৭ সালের পুর নির্বাচনে হলদিয়ার ২৯টি ওয়ার্ডই দখল করে তৃণমূল। কিন্তু এবার দেবপ্রসাদের পরিবর্তে চেয়ারম্যান করা হয় শ্যামল আদককে। তখন থেকেই দলের মধ্যে সংঘাত চলছিল কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর দাপটের জন্য কেউ কিছুই করতে পারেননি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ২৯ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে বোর্ড গঠন করে রাজ্যের শাসকদল। আর তার চেয়ারম্যান হন শ্যামল আদক। এবার তিনিই সেই পদ ছাড়লেন।
শুক্রবার পদত্যাগ করার পর শ্যামল আদক জানিয়েছেন, জেলা রাজনীতির হাওয়া বুঝে নিজে থেকেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে এখনই দল ছাড়ছেন না হলদিয়া পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান। শ্যামল আদকের পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে হলদিয়া পৌরসভার সংলগ্ন এলাকায় ওপর থেকে শুভেন্দু অধিকারীর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রন খর্ব হয়ে গেল। মন্ত্রীত্ব এবং বিধায়ক পদ ছাড়ার আগেই শুভেন্দু হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এরপর কার্যত শ্যামল আদকের মাধ্যমেই তিনি হলদিয়ার ওপর নিজস্ব আধিপত্য বজায় রাখতেন। আর এই কাজে আদকের সহায়ক ছিল চেয়ারম্যান পদটি। দলের মধ্যে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন আদক এবার প্রশাসনিক পদটি ছাড়ার ফলে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা আর তার কোনোও উপায় রইলনা উল্টো দিকে দলের মধ্যে থাকা কট্টর শুভেন্দু বিরোধীরা হলদিয়ার নিয়ন্ত্রণে আরও এগিয়ে গেল।