ফ্রেম বন্দি সলাজ মিমোসা |
নিজস্ব সংবাদদাতা: রাত আড়াইটায় হোস্টেলে ফিরেছে মিমোসারা। মিমোসা, সৌরেন, শ্রুতি, অঙ্কিতা, দীপ্রজিৎ সহ কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী প্রেসিডেন্সির গেট থেকে কফিহাউস ছুঁয়ে কলেজ স্কয়ার থেকে মেডিক্যাল কলেজ গোটা চত্ত্বর হেঁটেছে। লাল আবির মাখা দীপ্ত যৌবন কাঁপিয়েছে কলকাতার মধ্যরাত। সামনে মিমোসা ঘোড়াই। ৪৭২ ভোটের ব্যাবধানে প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাত্র সংসদের সভাপতি পদে জিতেছেন মিমোসা। যা প্রেসিডেন্সির সেন্ট্রাল প্যানেলে এখনও অবধি রেকর্ড।
নিজের গ্রাম সবংয়ের সুন্দরপুর |
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার কেলেঘাই নদির কোলে সুন্দরপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক পরিবারে জন্ম মিমোসার। সেই পরিবারের অসীম দারিদ্র্য কিছুটা সুরাহা হয়েছিল মিমোসার বাবা বসন্ত কুমার ঘোড়াই শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত হওয়ার পর। মিমোসা যখন মায়ের গর্ভে তখন মা স্বপ্না রানী ঘোড়াই মণ্ডল শিক্ষিকা হয়ে যোগ দেন পুর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি চন্দ্রমনি ব্রাহ্ম গার্লসে। মিমোসার পড়াশুনা সেখানেই।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পড়াশুনোয় তুখোড় মিমোসা ৯২ ও ৯০শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে জীবন বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয় প্রেসিডেন্সিতে। প্রথম বছরেই ছাত্র ইউনিয়নের ছাত্র প্রতিনিধি পদে জয়। তার পরের দু’বছর নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সংসদগুলিতে। অনার্সে ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়ে মিমোসা এবছরই এমএসসির প্রথম বর্ষে আর নির্বাচন হতেই ৬৪শতাংশ ভোট পেয়ে ছাত্রসংসদের সভাপতি।
নাচের দেশে |
শুধুই পড়াশুনা নয়, প্রেসিডেন্সির মহিলা ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন মিমোসা। নাটক সংগীত নৃত্যে অসামান্য দখল তাঁর। রবীন্দ্র নৃত্য এবং রবীন্দ্র সংগীত দুটোতেই রীতিমত পেশাদারি দক্ষতা রয়েছে মিমোসার। আর আরও অবাক করে দিয়ে কালো মাটির দেশের কন্যা পি.সি.চন্দ্র আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ফ্যাশন শো তেও জিতে নিয়েছে বিজয় মুকুট।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
গল্প উপন্যাস পড়তে পড়তে বুঁদ হয়ে যায় মিমোসা। বাড়ি ফিরলে দশম শ্রেনীতে পড়া বোন প্রত্যাশার সঙ্গে চলে খুনসুটি। তার মধ্যেও জেগে থাকে সংগ্রামের বীজ যা অঙ্কুরিত হয়েছিল বাবা বসন্ত কুমারের অনুপ্রেরনায়। হা ভাতে পরিবার থেকে উঠে আসা বসন্ত জড়িয়ে পড়েছিলেন লাল পতাকার আন্দোলনে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ভয় উড়িয়ে জয় এবং কয়েকটি মুহুর্ত |
শুক্রবার সাত সকালে মিমোসাকে যখন ‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’ থেকে ফোন করা হয় তখন কলেজে হোস্টেলের বিছানায় সে। রাত জাগার ক্লান্তি নিমেষে ঝেড়ে ফেলে জয়ের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মিমোসা বলেন, ” এই জয় প্রেসিডেন্সির ২০০০ ছাত্র ছাত্রী সকলের জয়, গোটা ছাত্র সমাজের জয়। সারা দেশ জুড়ে মানুষে মানুষে, ধর্মে ধর্মে যে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ভালোবাসার জয় ।এই জয় শিক্ষার অধিকার হরণ ও শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রআন্দোলনের জয় ।
এই জয় শিক্ষা ও সংষ্কৃতি জগতের উপর ফ্যাসিস্ট শক্তির নির্লজ্জ আক্রমণের প্রতিবাদে প্রগতিশীলতার জয় ।
এই জয় ভয়ের পরিবেশ কাটিয়ে নিজের মনের কথা বুক উঁচিয়ে বলার মতো গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জয়।”
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
একটু থেমে তিনি বলেন, ” আর এই জয় ১০বছর পর প্রেসিডেন্সির প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর ইতিহাস সৃষ্টির জয় ।সুদীপ্ত গুপ্ত ও রোহিত ভেমুলাদের রক্তঋণ ও স্বপ্ন পূরণের জয় ।” .