ঘুরে এলাম ওড়িশা-১
মীর হাকিমুল আলি
বছরের শুরুতেই একটা ছোট্ট ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকি আমরা। সেবার আমাদের টার্গেট ছিল ‘দীপুদা’ কভার করা অর্থাৎ দি দিয়ে দীঘা, পু দিয়ে পুরি আর দা দিয়ে দার্জিলিংl দীঘা অলরেডি হয়ে গেছে 2017 এর 17 জানুয়ারী l তাই এবার পুরি l ডেট ঠিক হলো পয়লা জানুয়ারি l পরিকল্পনা মাফিক 31 ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খড়্গপুর স্টেশন এ হাজির হলাম সবাই l রাতের ট্রেনে উঠে আমরা খেয়ে নিলাম রাতের খাবার ওই শুকনো রুটি আর তরকারি l ট্রেন যখন ওড়িশা ঢুকলো তখন ট্রেনে রীতিমতো ভিড় জমে গেছে l
আমরা খুব আরাম করে শুয়ে ছিলাম কিন্তু তা হারাম করে আমাদের উঠিয়ে বসার মত জায়গাটুকু দিয়ে তারা বাকিটা দখল করে ওপরে নিচে বসল l এমনকি দাঁড়িয়ে বহু লোক l বেশি অল্প বয়সী ছেলে মেয়ে সবাই ওই নতুন বছর উপলক্ষে ঘুরতে যাচ্ছে পুরি সেটা তাদের ওড়িয়া কথা থেকে আন্দাজ করা গেলো l আমাদের আসে পাশে যারা বসেছিল তারা যেন এক মুহূর্ত ও তাদের মুখ বন্ধ রাখতে পারছিলো না, ওড়িয়া ভাষাতে কানের কাছে বেশ বিরক্ত শুরু করলো l কিছু করার নাই l আমার পাশের ভাই টা তো শুধু খেয়েই যাচ্ছে এত রাতে l আমার দিকে একটা কলা বাড়িয়ে বললে “কদলী খাও “আমি বললাম না না, থ্যাংকস l কি জানি সে হয়তো ভেবেছিলো আমি তার খাওয়া দেখে খেতে চাইছি l
ট্রেন ভোরের দিকে পুরি স্টেশন এ পৌঁছে গেলো নেমে দেখি 4 টা বাজে l স্টেশনে নামতেই আরো ঠান্ডা লাগছে l শীতের ভোর মানে সকাল হতে বেশ দেরি আছে l তাই আমরা স্টেশনেই মুখ হাত ধুয়ে নিলাম দিয়ে বিস্কুট খেতে খেতে স্টেশন এর বাইরের দিকে বেরোলাম l বেরিয়ে আবার চা খেলাম একটা দোকানে, বেশ ভালোই বানিয়েছিলো l ওখানে জিজ্ঞেস করলাম বিচ কতদূরে? বলল বেশ খানিকটা, তাই আমরা অটো করে বিচে পৌছালাম l তখন ও চারদিকে অন্ধকার l সমুদ্রের গর্জন আর ঠান্ডা বাতাস l দীঘার বিচের থেকে পুরি বিচ বেশ বিস্তৃত, আর বালুকাময় l হাঁটতে পারছিলাম না বেশি l মানুষের গলার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে গেলাম, দেখলাম এটাই আসল বিচ, এত ভোরেই অনেকে স্নান করতে নেমে গেছে দেখেই ঠান্ডায় আমার শরীর কেমন করতে লাগলো l আমার অনেক শখ সূর্য ওঠা দেখবো আর ক্যামেরা বন্দি করবো l
সেই শখ আমার পূর্ণ হলো না, কারণ আকাশে মেঘ আর ঘন কুয়াশা চারদিকে ঢেকে রেখেছিলো l তাই সূর্য উঠলেও দেখার জো নেই l আরো কিছুক্ষন পর বেশ সকাল হয়ে এলো, ছিন্ন মেঘের ভেতর থেকে সূর্যের আলো ঠিকরে পড়লো l কুয়াশাও সেই সাথে কোথায় অন্তর্ধান করলো l চারদিকটা এবার বেশ দৃষ্টিগোচর হতে লাগলো l দেখি মানুষের ভিড় জমতে শুরু করেছে l এদিকে সেদিকে ত্রিপলে ঢাকা দোকান পাট l কোথায় ছিল সারে সারে সুসজ্জিত উটের দল আর তাদের চালক এসে হাজির l আমরাও কয়েকটা ছবি তুলে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম l
আমাদের হোটেল ছিল মডেল বিচে l সেটা বেশ কিছুটা দূরে, রাস্তা বরাবর হেঁটে হেঁটে চললাম l সন্তোষ দা গুগল ম্যাপ দেখে দেখে নিয়ে গেল হোটেলে l হোটেলেই আমাদের ব্রেকফাস্ট আর চা দিলো l খেয়ে দেয়ে আমরা বেরোলাম l তখন বেলা প্রায় দশ টা l বিচে বেরিয়েছি খুব রোদ, কিন্তু এই বিচটা বেশ সুনসান, বুঝলাম এখানে খুব কম লোক স্নান করে, তাই সৈকত বরাবর হেঁটে চললাম গোল্ডেন বিচে l সেখানে মানুষের উপচে পড়া ভীড় l আমরাও নেমে পড়লাম, প্রথমে খুব ঠান্ডা লাগলেও পরে তা ঠিক হয়ে গেল l স্নান সেরে রুমে ফিরলাম সারে বারোটায় l আবার একবার স্নান করে খেতে বেরোলাম l একটা হোটেলে সবজি ভাত খেলাম, তবে খুব একটা ভালো না, দামও নিলো বেশি l এসে ঘুমিয়ে গেলাম l বিকেলে আবার বেরোলাম সমুদ্র সৈকতে l
খুব সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে, সূর্যের পড়ন্ত মিষ্টি রোদ গায়ে মাখতে মাখতে গল্প করতে করতে হাঁটছি l কিছুদূর গিয়েই দেখি সুদর্শন পট্ট নায়েকের স্যান্ড আর্ট l সেখানে ঢুকে ছবি নিলাম কিছু l হঠাৎ বৃষ্টি এলো l অবশ্য থেমেও গেল তখনই l ওখান থেকে বেরিয়ে আবার হাঁটতে লাগলাম, স্থির করলাম জগন্নাথ মন্দির আজ ই যাবো l আস্তে আস্তে সূর্য দেখি ডুবতে বসল দিগন্তহীন ওই নীল জলরাশির বুকে l তখনো মানুষের স্নানের কোলাহল আর সমুদ্রের আনন্দের শব্দে আকাশ বাতাস মুখরিত হতে লাগলো l আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, চারদিকে ল্যাম্প পোস্টের আলো জ্বলে উঠলো l আবার ঝম ঝম করে বৃষ্টি এলো, আমরা তো ছুট দিলাম l একটা চা দোকানের ত্রিপলের ভেতরে ঢুকে দাঁড়ালাম l তারপর ওই ঠান্ডায় গরম গরম চা এ চুমুক দিয়ে বললাম, আঃ l
(ক্রমশ….. পরের পর্ব )