🖊️কলমেঃ আশিস মিশ্র
( পর্ব –২৫)
পঁচিশের হলুদ আড্ডাটি যখন তারুণ্যের শক্তি সঞ্চয় করেছে, তখন একটু বাঁক বদলের প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে। সেই বাঁকের কাছে এসে দেখলাম বাংলা ভাষায় নতুন নতুন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। অবশ্যই তা রাজনৈতিক দলের বদান্যতায়। যেমন ‘ অস্মিতা ‘,
‘ ভোট গরু ‘, ‘ অনুগামী ‘। এর মধ্যে আরও কতকগুলি আছে। তা সকলেই জানেন।
বাণিজ্যিক বড়ো পত্রিকাগুলি বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করে। যা রাজনীতির প্রেক্ষিতে পাবলিককে ভালো খাওয়ানো যায়। যেমন এখন বেশি করে পাবলিক খাচ্ছেন ‘ অনুগামী’ শব্দটি। যেমন
‘ আমরা দাদার অনুগামী ‘ ‘ আমরা দিদির অনুগামী ‘।
রাজ্য- রাজনীতি এটা নিয়ে বেশ সরগরম।
এখন মুশকিল হচ্ছে, আমরা যারা কারুরই অনুগামী নই–আমরা কী ভাবছি। নাকি দু’পক্ষের লড়াই চলছে, আমরা শুধু ঢাক বাজাচ্ছি?
একটা গল্প মনে পড়লো। বেশ কয়েক বছর আগে
‘ দেশ ‘ পত্রিকার একটি সংখ্যা হয়েছিল। তাতে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারটি নেবেন একসঙ্গে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। মানে সে সময় বাংলা সাহিত্য জগতের হালচাল নিয়ে আলোকপাত। অবশ্য প্রত্যেকের মতামত ছিলো নিজস্ব। এবং কিছু কিছু কথা ছিল বেশ বিস্ফোরক। যা গোটা বাংলা ভাষার কবি – সাহিত্যিক মহলে আলোড়ন তুলেছিল। সম্পাদক তখন শ্রদ্ধেয় সাগরময় ঘোষ।
এই যে আলোড়ন ফেলে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার, তা কীভাবে সুসম্পাদিত হলো সেটাই বড়ো কথা।
তেমনি এখনকার রাজনৈতিক কথাবার্তা আলোড়িত হলেও তা কতটা সুসম্পাদিত হবে তাই এখন দেখার।
তবে আমরা যারা শুধু ঢাক বাজিয়ে চলেছি, আমরা কি শুধু ঢাকই বাজাবো? নাকি অন্য কিছু করবো। বাজাতে বাজাতে যখন ঢাকটি ফেটে যাবে, তখন ভোটপর্বটি শেষ হয়ে যাবে। শেষ হাসি যেই হাসুক, আবার তো আমরা ঢাক বাজাবো। মানে, পাবলিক যে চিরকাল ঢাক বাজাবে, আর নেতা- নেত্রীরা নেচে বেড়াবেন, তাই তো হয়,নাকি?
সে যাই হোক, সাগরময় বাবুর কথা যখন এলো, তখন একটি কথা এসে যায়, তা হলো — তেমন সম্পাদক এখন কোথায়? যিনি বা যাঁরা নতুন লেখক -লেখিকা খুঁজবেন। বা তাঁদের তৈরি করবেন। সত্যি তেমন সম্পাদকের সত্যি এখন বড় অভাব। ফলে সাহিত্য জগতও ধূসর হয়ে গেছে। সেখানেও অনুগামীদের ভিড়। এতো অনুগামী যে, কে যে কার দিকে বোঝা মুশকিল।
অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন, অমুক দাদাই আমার এখন অবিভাবক। আমরা দাদার অনুগামী। আবার অনেকেই ভাবছেন, আমার কোনো দাদা নেই। আমি একা। যা করবো নিজের মতো।
এটাই শেষ কথা। নিজের আইডেন্টিটি নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। সবক্ষেত্রেই। মানুষের ছোট ছোট স্বপ্নগুলি মানুষ নিজেই পূরণ করে। বাকি সব ফাঁকা আওয়াজ। গাছের মতোই একা প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে দাঁড়িয়ে থাকার মতো সত্য আর কিছু নেই। গাছ যেমন কারুর কাছে যায় না, গাছের কাছে সবাই আসে।
তাই তো কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন –” আসলে কেউ বড় হয় না / বড়র মতো দেখায়/ নকলে আর আসলে তাকে / বড়র মতো দেখায় / গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াও / দেখবে কতো ছোট / সোনার তাল তাঙড়ে ধরে / পেয়েছ ধুলিমুঠো…”।