নিজস্ব সংবাদদাতা; কাঁথি:শুভেন্দু অধিকারীর খাস তালুকে তাঁকে ফের ইঁদুর বনে যাওয়া বাঘের সঙ্গে তুলনা করলেন তৃনমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। বুধবার কাঁথি শহরে প্রথম শুভেন্দু ছাড়া এই জনসভার দুই প্রধান বক্তা ছিলেন সৌগত রায় এবং ফিরহাদ হাকিম। আর সমগ্র সভারই আক্রমনের লক্ষ্য ছিল শুভেন্দু অধিকারীই। সেখানেই সৌগত রায় বলেন, ‘ আমার সেই মুণির গল্প মনে পড়ছে। মুণির আশীর্বাদে একটা ইঁদুর থেকে বেড়াল, কুকুর, বাঘ হয়েছিল। তারপর বাঘ হয়ে মুণিকেই খেতে আসছিল। তখন মুণি বলেছিলেন, যা আবার তুই ইঁদুর হয়ে যা। মানুষ ওঁকে আবার বাঘ থেকে নেংটি ইঁদুর বানিয়ে দেবে।’
সৌগত রায় আজকের অর্থাৎ বুধবারের জনসভাকে তাঁর জীবনে কাঁথির শ্রেষ্ঠ জনসভা বলে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন,
” আমি ৪৪ বছর ধরে কাঁথি আসছি। আজ যে মিছিল হয়েছে তা কাঁথিতে সর্বকালের সর্ববৃহৎ মিছিল। কাঁথির লোক বলছেন, এমন মিছিল তাঁরা আগে দেখেননি।
আজকের এই মিছিল প্রমাণ করে দিল, কাঁথি কোনও পরিবারের জমিদারি নয়। তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবাসেন। দিঘার সমুদ্র থেকে দু’চার বালতি জল তুললে যেমন সমুদ্রের জল কমে না। তেমন তৃণমূল দু’চার জন চলে গেলেও তৃণমূলের কিছু যায় আসে না।”
তৃনমূলের জামানা থেকে যে ‘অধিকারী পরিবারের তালিকা মুছে গিয়ে অখিল গিরির নাম লেখা হতে চলেছে সেই ইঙ্গিতও মিলেছে রায়ের বক্তব্য থেকে। শুভেন্দুকে খোঁচা দিয়ে এদিন রায় বলেছেন, ” অনেকে বলত শুভেন্দু বড় পালোয়ান। ওঁর থেকে তো অখিল বড় পালোয়ান। ২০০১-এ জিতেছিলেন রামনগর থেকে। কিন্তু শুভেন্দু ২০০১-এ হেরেছিলেন। ২০০৪-এর লোকসভায়ও হেরেছিলেন। ২০০৬-এ শিশিরদা কাঁথি দক্ষিণ আসন ওঁর জন্য ছেড়ে দিলেন তখন জিতলেন। বিধানসভায় ওঁর সঙ্গে প্রথম পরিচয়। আমায় জিজ্ঞেস করত কী ভাবে রাজনীতি করবে, কী ভাবে বিধানসভায় প্রশ্ন করবে। ২০০৯-এ সাংসদ হলেন। ২০১৪তে সাংসদ হলেন। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন তোমায় নন্দীগ্রামে প্রার্থী করবে। ২০১৬-তে শহীদের মা ফিরোজা বিবিকে পাঁশকুড়ায় টিকিট দিয়ে শুভেন্দুকে নন্দীগ্রামে টিকিট দেওয়া হল। মন্ত্রী করে দুটো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দেওয়া হল। তারপরেও ও দল ছাড়ল!”
এদিন নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দুর ভূমিকা অস্বীকার করে সাংসদ বলেছেন, ” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাত বার সাংসদ হয়েছেন, দুবার বিধায়ক হয়েছেন। মমতা যদি সেদিন নন্দীগ্রাম না যেতেন সারা ভারত জানত না। শেখ সুফিয়ানের মতো নেতারা নন্দীগ্রামের সেদিন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমরা বাইরে থেকে এসেছিলাম। কোনও সরস্বতীর বরপুত্র এসে সুন্দর চেহার নিয়ে নেতৃত্ব দেননি।”
অন্যদিকে ফিরাদ হাকিম বলেছেন,”কোলাঘাটে ঢোকার পর থেকেই মনে হচ্ছিল মুক্ত বাতাস বইছে। যারা এতদিন গান্ধীবাদ, সুভাষবাদ জিন্দাবাদ বলে এল তারা গিয়ে গান্ধী হত্যাকারীদের দলে ভিড়েছে। যারা কৃষকদের বেচে দিতে চাইছে তাদের দলে গিয়ে নাম লিখিয়েছেন।” শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে ফিরহাদ বলেন, “পরিবাররতন্ত্রের কথা বলছেন? ২০০০ সালে নমিনেশন পেয়েছিলেন, ২০০১-এ পেয়েছিলেন, ২০০৮ এ নমিনেশন পেয়েছিলেন, কিসের জন্য পেয়েছিলেন? কোনও আন্দোলন করেছেন? শিশির অধিকারীর জন্য পেয়েছিলেন । আন্দোলন করেছিল সুফিয়ানরা। তোমাকে ধরে যাঁরা নেতা করেছিল। তাঁদের সঙ্গে বেইমানি। তবে শুভেন্দু চলে যাওয়ায় তৃণমূল কর্মীরা খুশি। আজকের জনসভা প্রমান করল নিশ্চিত পূর্ব মেদিনীপুরের সব আসন তৃণমূল জিতবে।”