অশ্লেষা চৌধুরী: দুই মেদিনীপুর আর ঝাড়গ্রাম মিলিয়ে বিজেপির ৫ সংগঠিনক জেলা। সেই পাঁচ সভাপতিদের নাম ধরে ধরে শুভেন্দু অধিকারী তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি দলে মাতব্বরি করতে আসেননি। বলেছেন, ‘ আশ্বস্ত করছি আপনাদের। শুভেন্দু মাতব্বরি করার জন্য বিজেপিতে আসেনি। শুভেন্দু আপনাদের ওপর খবর দারি করতে আসেনি। শুভেন্দু কর্মী হিসেবে কাজ করবে। দেওয়াল লিখতে বললে লিখব। দল যা নির্দেশ দেবে তাই করব।”
ঝানু রাজনীতিবিদ শুভেন্দু অধিকারী বুঝেছেন যে তাঁর বিজেপিতে আসার ফলে বিজেপির পুরানো নেতারা শঙ্কায় ভুগছেন। তেমনই পুরানো বিজেপি নেতারাও বুঝছেন সামনের দিন গুলো খুব একটা সুখকর নাও হতে পারে। না, বিজেপি সভাপতিরা তাঁদের নিজেদের পদ নিয়ে ততটা আশঙ্কিত নন। তাঁদের আশঙ্কা নিচু তলার নেতা কর্মীদের অবস্থান নিয়ে। শুভেন্দুর অনুগামী হিসাবে যাঁরা দলে এসেছেন তাঁদের সঙ্গে বিজেপির নিচু তলার নেতা কর্মীদের সম্পর্ক কী হবে?
শনিবারের মেদিনীপুরে অমিত শাহের মিটিং থেকে বলেছেন, এবার থেকে শুভেন্দু বলবে, ‘ তোলাবাজ ভাইপো হটাও!’ মিটিংয়ের পর এক বিজেপি নেতা বললেন, ‘উনি না হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোলাবাজ বলছেন কিন্তু হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, কাঁথি সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় আমাদের ছেলেদের যে স্থানীয় তোলাবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে তাঁরা তো ওনারই অনুগামী। ওই লোকগুলো বিজেপিতে আসবে আর আমাদের ছেলেদের অবস্থা কী হবে বলুনতো? আর জনগনকে আমরা কী জবাব দেব যখন ওই তোলাবাজরা আমাদেরই ঝান্ডা ধরে আমাদের সাথে মিছিল করবে?”
পূর্ব মেদিনীপুরের এক বিজেপি নেতা আক্ষেপ করে বলছেন, ‘তৃনমূল দলটা এমনিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছিল। শুভেন্দু অধিকারী আমাদের দলে না আসলেও আমরা জিততাম। উনি বিজেপিকে জেতানোর জন্য তো আসেননি এসেছেন অভিষেক ব্যানার্জীকে হারাতে। তাতে আমাদের জয় না হয় কিছুটা সহজ হবে কিন্তু ওনার জন্য আমাদের যে শত শত কর্মী মার খেয়েছে, মামলা খেয়ে বসে আছে সেই কর্মীদের কাছে আমাদের মুখ দেখানোটাই মুশকিল হয়ে পড়বে।”
বিজেপির হয়ে মেদিনীপুরে প্রথম জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অমিত শাহ আমার বড় দাদা। মুকুল রায় বলেছেন, আত্মসম্মান থাকলে তৃণমূলে থাকিস না। যাদের জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি, তারা কেউ খোঁজ নেয়নি। কিন্তু করোনা হয়েছিল যখন তখন অমিত শাহ খোঁজ নিয়েছেন।’ কড়া ভাষায়, একপ্রকার তাচ্ছিল্যের সুরেই তিনি বলেন, ‘আমি নিজের মায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি? কে আমার মা? আমার জন্মদাত্রী মা গায়ত্রী অধিকারী, অন্য কেউ নয়। মা বলতে হলে ভারতমাতাকে বলব, অন্য কাউকে নয়।‘
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে! আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসেছি, আমাকে বলছে বিশ্বাসঘাতক! প্রতিষ্ঠার পর এনডিএ-র শরিক ছিল তৃণমূল। সেবার কাঁথিতে দ্বিতীয় হয়েছিল তৃনমূল প্রার্থী নীতিশ সেনগুপ্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকদিন আগে মেদিনীপুরের সভায় সে কথা এমন ভাবে বলেছেন যেন আমাদের জন্য, অধিকারীদের জন্যই তৃনমূল দ্বিতীয় হয়েছিল। আমি বলছি এবারও দ্বিতীয় হবেন মমতা, প্রথম হবে বিজেপিই। এবার বাংলায় বিজেপিরই সরকার হবে। যেখানে বিশ্বাস নেই, সম্মান নেই, সেখানে থাকব না।’
বিজেপির এক নেতার কটাক্ষ, “অধিকারী পরিবারের সমস্যা এটাই যখন মনে হয় দ্বিতীয় হয়ে পড়বে তখনই শিবির বদলায়। তৃনমূলে ওনারা তখনই এসেছিলেন যখন তৃনমূলের প্রথম হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সুতারং বিজেপিই এবার প্রথম হচ্ছে সন্দেহ কী?”