নিজস্ব সংবাদদাতা: “আমার যখন ১৫বছর বয়স তখন দেখতাম, পান থেকে চুন খসলেই ঘটনা স্থলে পৌঁছে যেতেন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমার এক কাকা কলকাতায় হকারি করতেন। হকার উচ্ছেদ হচ্ছে তখন। কাকারা ১০জন মিলে উল্টো ডাঙায় আন্দোলন শুরু করল। সবাই বলল, মাত্র ১০জন? পুলিশ মেরে হটিয়ে দেবে। কাকা বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেনা! ওনার ভরসায় আন্দোলন শুরু করব বাকিটা উনি দেখে নেবেন। সেই মমতা ব্যানার্জীর রাজত্বে আমরা ৬৮দিন পড়ে রয়েছি রাস্তায়। চলছে অনশন, অনেকেই মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো দূরের কথা তার একজন প্রতিনিধি আসেনি আমরা কী চাই জানতে। আমরা ভুলেই গেছিলাম যে এটা বাংলা। এখানে কেউ কিছু করতে না পারুক অন্ততঃ পাশে এসে দাঁড়াতে পারে। হয়ত ভুলেও যেতাম যদি না ম্যাডাম ভারতী ঘোষ এসে দাঁড়াতেন!” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে দম নিলেন আন্দোলনরত এক কলেজের এক অস্থায়ী কর্মী।
শুক্রবার, ৬৮ দিনে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ অস্থায়ী কর্মচারীরা। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের আশিক্ষক কর্মচারীরা অবস্থান ও রিলে অনশন শুরু করেছেন পুজোর আগে থেকে। দাবি কর্ম সুনিশ্চয়তা এবং নূন্যতম বেতন। সরকার শুধু এই টুকু জানিয়ে দিক যে ৬০বছরের আগে কাউকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া যাবেনা। এই নিয়ম পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত ক্যাজুয়েল কর্মীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ইতিমধ্যে। সেটা এঁদের ক্ষেত্রে লাগু করে দিলেই মিটে যায়। কিন্তু মেটাবে কে? ৬৮দিন মানুষগুলোর পাশে কেউ দাঁড়ায়নি।
এক আন্দোলনকারী জানালেন, ‘ডেবরা বালিচক রাজ্য সড়কের ওপর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সামনে বসে রয়েছি। এভাবেই কেটে গেছে শারদোৎসবের দিন। বাড়ি যেতে পারিনি বরং বউ বাচ্চারা এই মঞ্চে এসে কাটিয়ে গেছে পুজোর দিন গুলো। এই রাস্তা দিয়েই এক মন্ত্রী আর সাংসদ দুবেলা সাইরেন বাজিয়ে চলে যায়। কেউ একজন নেমে দাঁড়ায়নি। দাবি নিয়ে কথা বলার দরকার নেই কিন্তু এসে জিজ্ঞাসা করে যেতে পারতেন কেমন আছি আমরা”
৬৮ দিনের মাথায় অবশেষে মঞ্চে হাজির হলেন প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিক তথা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলাতে একটি জনসভা সেরে ফেরার পথে সন্ধ্যায় ভারতী ঘোষ গিয়ে বসলেন অবস্থান ও আন্দোলনরত শিক্ষা কর্মীদের মঞ্চে। ভারতী বললেন, ‘রাজ্যে ১৯জন আইপিএস আধিকারিকের অবসর নেওয়ার পরেও তাঁদের মোটা টাকায় পুষছে এই সরকার। ৬০বছরে অবসর নেওয়ার পরও বেতন দিয়ে রাখা হচ্ছে সরকারি কর্মীদের। খেলা মেলা ক্লাবে টাকার হরির লুট হচ্ছে আর যাঁরা না হলে কলেজ অচল সেই শিক্ষকর্মীদের কথা ভাবছেনা এই সরকার। এই অমানবিকতা মমতা সরকারকেই মানায়।”
জেলার প্রাক্তন সুপার ও বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি জানিয়েছেন, এই সরকারের পতন আসন্ন। তাঁর আশ্বাস, ‘ আমি আমাদের নেতৃত্ব সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত জায়গায় এই দাবিগুলি জানাবো। নতুন সরকার আসছে। সেই সরকার যাতে এই বিষয়টি দেখে তা নিয়ে আমি সচেষ্ট হব।”
আন্দোলনকারীরা জানালেন, “আবারও বলছি দাবি পূরণের ক্ষমতা অনেকের না থাকতেই পারে, দাবিগুলি নিয়ে আলোচনা চেয়েছি আমরা। চেয়েছি সরকারের প্রতিনিধিরা এসে অন্ততঃ কথা বলুন কিন্তু সরকারের মনোভাবটাই উপেক্ষা আর অবজ্ঞার। আমাদের অস্তিত্বটাই অস্বীকার করা হচ্ছে। ভারতী ঘোষ না আসলে তো বোঝাই যাচ্ছিলনা বাংলায় নাকি অন্য কোথাও আছি?”