Homeরাজ্যউত্তরবঙ্গশুভেন্দুর দলত্যাগের পর দক্ষিণের সাথে পদত্যাগের ঝড় উত্তরবঙ্গ জুড়ে, দেখে নিন উত্তরে...

শুভেন্দুর দলত্যাগের পর দক্ষিণের সাথে পদত্যাগের ঝড় উত্তরবঙ্গ জুড়ে, দেখে নিন উত্তরে দল ছাড়ল কারা

অশ্লেষা চৌধুরী: বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগের সাথেই তৃনমূলের বড় উইকেট পড়েছিল আসানসোলে। পদত্যাগ করেছিলেনন আসানসোল কর্পোরেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এরপর বড় উইকেট পড়েছে বাঁকুড়ায়। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান, বাঁকুড়া জেলা কমিটির সহ সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পদত্যাগ করেন। এরপর একের পর এক পদত্যাগের ঝড় বইতে থাকে। তবে ঝড়ের বড় দাপট ছিল উত্তরবঙ্গেও।

উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে দলের বিরুদ্ধে এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন নিতীশ রঞ্জন সরকার। প্রশান্ত কিশোরের টিমের সংগঠন পরিচালনার কাজ নিয়ে ক্ষুদ্ধ হন জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি নিতীশ রঞ্জন সরকার। শুভেন্দু অধিকারীর সাথে আছেন বলেই সাংবাদিক বৈঠক করে জানান নিতীশ রঞ্জন সরকার। নিজেকে শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বলে দাবী করেন তিনি। সেপ্টেম্বর মাস থেকে অনেকবার কথা হয়েছে শুভেন্দুর সাথে তার, বলে জানান তিনি ৷ গত ১৪ ডিসেম্বরও কথা হয় বলেই জানান তিনি। পিকের টিমের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে দল ছাড়তেও রাজি তিনি। পিকের টিমের পরিচালনায় দলে গুরুত্ব হারাচ্ছেন বলে তার অভিযোগ। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর বুধবারে কোচবিহার রাসমেলা ময়দানের সভায় তাকে ডাকাও হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ নিতীশ বাবু একজন অনুরাগী হয়ে শুভেন্দু অধিকারীর পাশে থাকার বার্তা দেন এবং তার সাথে জেলার কয়েক হাজার কর্মী আছেন বলেও দাবী করেন তিনি।

কোচবিহারের পরেই শিলিগুড়িতে বিদ্রোহী হন আরও একজন দাদার ভক্ত। শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে দল ছাড়েন তৃণমূলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর অরোরা, ওরফে মানিক। তার সাথে আরও অনেকে এদিন দল ছাড়েন। দীপঙ্কর অরোরা স্পষ্ট জানান, ‘শুভেন্দু অধিকারী যেদিকে যাবেন, আমরা সেদিকে যাবো। কারণ তাকে দেখেই আমরা দলটা করতাম। উনি যে দলে যোগ দেবেন, সেই দলেই আমরাও যোগ দেবো। আমরা দলটাকে ভালোবেসে কাজ করতাম কিন্তু এই দলে স্বচ্ছ কর্মীদের কোনও জায়গা নেই। তাই অনেকেই এই দল ছেড়ে চলে যাবে। দলের অনেক নেতাই নিজেদের বিশাল বড় কিছু ভাবে। কয়েকজন মিলেই দলটা চালাচ্ছেন। অন্যদের কোনও গুরুত্ব নেই দলে। তবে নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি আমার পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।‘ ‘জানুয়ারী মাসে শুভেন্দু অধিকারী যখন শিলিগুড়ি আসবেন তখন আমরা দেখিয়ে দেবো আমাদের কত ক্ষমতা রয়েছে’- এমন হুমকিও শোনা যায় দীপঙ্করের গলায়।

একই ভাবে শুভেন্দুর দল ত্যাগের আঁচ গিয়ে পড়েছে মালদা জেলাতেও। মালদহের বামনগোলা ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সভাপতি একসাথে ইস্তফা দিয়ে বসেন। বামনগোলার পাকুয়াহাট অঞ্চলের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শ্যামল মন্ডল, বামনগোলা অঞ্চল সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তফিউর রহমান, গোবিন্দপুর মহেশপুর অঞ্চল সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিলেন মানিক মাহাতো, চাঁদপুর অঞ্চলে সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সাহেব হাঁসদা, জগদলা অঞ্চল সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন নারায়ন মন্ডল।

পদত্যাগী অঞ্চল সভাপতিদের অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেস করে আসছেন। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতির কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়ে পাকুয়াহাট অঞ্চলের শ্যামল মন্ডল, বামন গোলা অঞ্চলের তফিউর রহমান বলেন, তারা দলকে ভালবাসেন, তারা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন, থাকবেন ও কাজ করবেন কিন্তু পদে থাকবেন না বলেই পদত্যাগ করলেন। বামন গোলা পর এবার মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর। দল থেকে পদত্যাগ করলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূল নেতা দ্রোণাচার্য ব্যানার্জি।

শুরুটা হয়েছিল কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর হাত ধরে। তারও আগে লোকসভা নির্বাচনের সময় দলত্যাগ করে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন নিশীথ। এরপর শুভেন্দুর দল ত্যাগের খবর চাউর হতেই একে একে উত্তরবঙ্গে ঝড় বইতে থাকে পদত্যাগের। আর একুশের লক্ষ্যে উত্তরবঙ্গে নিজের দলের মাটি শক্ত করে মুখ্যমন্ত্রী যে সফর করে গেলেন, তা কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেটা নিয়ে অনেকটাই ধন্ধে রাজনৈতিক মহল।

RELATED ARTICLES

Most Popular