নিউজ ডেস্কঃ রুদ্ধশ্বাস কয়েকটি মুহুর্ত! চিতাবাঘের (লেপার্ড) থাবার তলায় পড়ে রয়েছেন হামলায় বন আধিকারিক, তাঁর শরীরে কামড়ে ধরে রয়েছে বাঘটি। কয়েকজন মিলে লাঠি পেটা করে বাঘটিকে সরানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু নাছোড় বান্দা চিতাবাঘ। মাটিতে থেকে উঠতেই দিচ্ছেনা পঞ্চম শিকারকে। রক্তাক্ত আহত অবস্থায় বাঘের কবল থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই আধিকারিক, অন্যরা তখনও দমাদম লাঠি চালাচ্ছেন। অবশেষে কোনও রকমে উঠে দাঁড়িয়ে একটা গুলি চালালেন ওই আধিকারিক, অব্যর্থ লক্ষ্য! থুবড়ে পড়ে গেল বাঘটি। প্রবল যন্ত্রনা আর রক্তপাতে পাশেই বসে পড়লেন বন আধিকারিক। বুধবার সন্ধ্যায় এই রুদ্ধশ্বাস লড়াই হয়ে গেল শিলিগুড়ি মহকুমার অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের রাঙ্গাপানি রেলগেট এবং বেসরকারি ক্যান্সার হাসপাতাল সংলগ্ন শিমুলতলা গ্রামে। কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে বটে কিন্তু তার আগের প্রায় ঘন্টা খানেকের বাঘ তান্ডবে আহত হয়ে গেছেন আরও ৪গ্রামবাসী যার মধ্যে একই পরিবারের তিনজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফাঁসিদেওয়া ব্লকের রাঙাপানি এলাকার ধোতিজোত গ্রামে চিতার বাঘের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। ওই গ্রামের ঘরে শুয়ে ছিলেন কমলবাবু। ঘরে ঢুকে পড়ে বাঘটি। বাঘ দেখে চিৎকার করে উঠতেই প্রথমে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চিতাবাঘটি। বাঘের আক্রমণে তার মুখে, ঘাড়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর চিৎকার শুনে ছেলে শুভ এবং শ্যালক দিবাকর সরকার বাঁচাতে ছুটে আসে। সেই সময় চিতাটি তাদের উপর আক্রমণ করলে তারাও জখম হয়। এরপর গ্রামবাসীরা চিৎকার শুনে লাঠিসোটা নিয়ে আসে। চিতাটি গৌতম ঘোষ বলে আরও একজনকে আক্রমন করে পাশের একটি ঘরে ঢুকে পরে। সুযোগ বুঝে বাইরে থেকে ঘর বন্ধ করে খবর দেওয়া হয় বনদপ্তরে। বনদপ্তরের বাগডোগরা এবং শালুগাড়া রেঞ্জের বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বাগডোগরা থানা এবং রাঙ্গাপানি ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়।
বাড়ির দরজা খুলে জাল পেতে বাঘটিকে ফাঁদে ফেলতে গিয়েই ঘটে যায় বিপত্তি। জালের আওতার বাইরে কোনোভাবে বেরিয়ে চিতাবাঘটি ঝাঁপিয়ে পড়ে সামনে থাকা বন আধিকারিকের ওপরে। তাঁকে মাটিতে পেলে কামড়ে ধরে দুপায়ে চেপে রাখে বাঘ। বনকর্মী ও স্থানীয় মানুষ বাঘকে লাঠি পেটা করে ওই অধিকারিককে বাঘের কবল মুক্ত করার চেষ্টা করেন। মিনিট কয়েকের চেষ্টায় কোনও ক্রমে বাঘের আওতামুক্ত হয়ে গুলি চালান ওই আধিকারিক।
পরে ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বাঘটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত গ্রামবাসীদের উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। পাশাপাশি, বনদপ্তরের রেঞ্জারকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বন দপ্তর মনে করছে চিতা বাঘটি ঘোষপুকুর সংলগ্ন গঙ্গারাম চা বাগান থেকে লোকালয়ে চলে এসেছিল।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কার্শিয়াং বনদপ্তরের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার জে শেখ ফারিদ। তিনি জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে মারা গিয়েছে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। ঘটনায় কতজন আহত হয়েছে তা তদন্তের পরই বলা যাবে। যদিও, পরে বনদপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, বনকর্মীরা নিজেদের বাঁচানোর তাগিদে এক রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। ঘটনাস্থলেই চিতাটি মারা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই, নিহত বাঘটিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে, ওই এলাকায় আরও একটি চিতাবাঘ রয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। ওই চিতাবাঘটিকে ধরার জন্য বন দপ্তরের কাছে আর্জি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।বাগডোগরা ফরেস্ট রেঞ্জার সমিরণ রাজ বলেন, “চিতাটিকে সাফারিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছে। এলাকায় আর চিতা রয়েছে কিমা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে খাচাঁ বসানো হবে।”