নরেশ জানা: দ্বাদশ দিনেই লগ্ন স্থির হল শেষ অবধি! ৭ই ডিসেম্বর মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট ময়দানে সভা করে গেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১য়ের বিধানসভার আগে সেটাই হল মূখ্যমন্ত্রীর প্রথম রাজনৈতিক জনসভা। ২৬তারিখ হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনের (HRBC)চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এটাই ছিল তাঁর প্রথম তৃনমূল পরিচালিত সরকারের দেওয়া পদ ছাড়ার দিন আর পরের দিনই দুটি মন্ত্রীত্ব আর বকেয়া পদ গুলিও ছেড়ে দেন, ছেড়ে দেন সরকারি নিরাপত্তাও। সে দিনই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে তড়িঘড়ি সভা ডাকেন মূখ্যমন্ত্রী। সেখানেই ঠিক হয় শুভেন্দু মোকাবিলার রন কৌশল আর সেই কৌশলের অঙ্গ হিসাবেই ২৬তারিখের ১২দিন পরে শুভেন্দু গড় মেদিনীপুরেই প্রথম সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ঠিক তারই ১২দিনের মাথায় সেই মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত সরকারকে উৎখাত করতে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সভা করতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী, ১৯ শে ডিসেম্বর!
ঘটনাটি হয়ত কাকতলীয় কিন্তু বড়ই অর্থবহ।
অমিত শাহের ঘোষিত বঙ্গ কর্মসূচিতে প্রথমে ঠিক হয়েছিল বনগাঁয় সভা করবেন কিন্তু পরে ঠিক হয় মেদিনীপুর শহরের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ঝাড়গ্রাম ও দুই মেদিনীপুরের বিজেপির ৫টি সাংগঠনিক জেলার( ঝাড়গ্রাম ও দুই মেদিনীপুর ছাড়াও ঘাটাল ও কাঁথি) কর্মকর্তাদের নিয়ে নির্বাচন সক্রান্ত পর্যালয়ে বসবেন। কিন্তু হিসাবটা বদলে গেল মঙ্গলবারই। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে এদিনই শুভেন্দু অধিকারীকে ফোন করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয় বর্গীয়।
ঘটনা চক্রে ১৫ই ডিসেম্বর শুভেন্দুর ৫০বছর পূর্ন হয়েছে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি কথা হয় বিজেপিতে তাঁর যোগদানের বিষয়টিও। মাত্র ৪মিনিট ২০ সেকেন্ডের কথা বিনিময়ে চূড়ান্ত হয়ে গেল বিষয়টি। আর তারপরই কৈলাশের ফোন ছুটে গেল নতুন দিল্লি এবং ফের বদলে গেল অমিত শাহের কর্মসূচি। স্পোটর্স কমপ্লেক্সের সাংগঠনিক কর্মসূচি বদলে হয়ে গেল মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠের জনসভায়, যে সভা পূর্ন করতে তিন জেলাতেই এত্তেলা পাঠানো হয়েছে মঙ্গলবার বিকালেই। ফলে ৫সাংগঠনিক জেলাতেই সাজো সাজো রব।
শনিবার মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট ময়দানে দু’ধরনের জবাব দিতে তৈরি হচ্ছেন শুভেন্দু। প্রথমত, ৭তারিখে এই মাঠে যে পরিমান লোক হয়েছিল মূখ্যমন্ত্রীর সভায় তার দ্বিগুন মানুষের জমায়েত করতে পারলেই অর্ধেক জয় আসবে আর দ্বিতীয়ত, এতদিন যাবৎ তাঁর বিরুদ্ধে, তাঁকে উপলক্ষ্য করে তৃনমূলের তরফ থেকে যে আক্রমন নেমে এসেছে তা কড়ায় গন্ডায় জবাব দিতে হবে। এতদিন ধরে তিনি বলে এসেছেন অরাজনৈতিক সভা থেকে তিনি রাজনৈতিক কথা বলবেননা এবং দলে থেকে তিনি দলের বিরুদ্ধে তিনি কোনও কথা বলবেননা। শনিবারের আগেই তিনি তৃনমূল মুক্ত হয়ে যাবেন এবং শনিবার রাজনৈতিক সভাই হচ্ছে ফলে কড়ায় গন্ডায় জবাব দিতে আর কোনও বাধা থাকছেনা।
এখনও অবধি ঠিক হয়েছে ১৭তারিখ একটি অরাজনৈতিক সভার পরই দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক এবং তার আগেই ছেড়ে দিচ্ছেন বিধায়ক পদ এবং দলের প্রাথমিক সদস্য পদটুকুও। ওই দিনই দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দেবেন এরপর অমিত শাহের সঙ্গেই বাংলার মাটিতে পা রাখছেন এবং দুজনে মিলেই চলে আসবেন মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট ময়দানের জনসভায়।
অন্য একটি মত অবশ্য বলছে বাংলার মাটিতেই দলবদল করে শনিবার কলকাতা বিমানবন্দরে অমিত শাহকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন তিনি তারপর সেখান থেকে দুজনেই চলে আসবেন মেদিনীপুরের ময়দানে। অর্থাৎ ঘটনা যাই হোক না কেন শনিবার মেদিনীপুরের মাটি থেকেই ২০২১য়ে তৃনমূলের বিরুদ্ধে রন দামামা বাজাতে চলেছেন অমিত আর শুভেন্দু। দ্বাদশ লগ্নের সেই দামামা কী তবে পরিবর্তনের পরিবর্তন আনবেই ? প্রশ্ন এখন সেটাই।