নিত্য দিনের সুস্থতায় উষ্ণ জল
ডাঃ সুমিত সুর (RBSK – আয়ুর্বেদ মেডিকেল অফিসার, পাত্রসায়ের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র , বাঁকুড়া )
.
জল ই জীবন , পৃথিবীর তিন ভাগ জল একভাগ স্থল , পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণ , পুব থেকে পশ্চিম জল ছাড়া জনজীবন বিপর্যস্ত , জনজাতি , এই জীবকুল কোনোভাবেই বাঁচতে পারবে না , এই অপরিহার্য জল ও বিভিন্ন প্রকার এর , আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায় , কিন্তু আপনি কি জানেন কি আপনার নিত্য দিনের পানীয় জলের মধ্যে কিছু পরিমান নিয়মিত গরমজল রাখেন লাভবান হবেন আপনি , সুস্থ থাকবে আপনার শরীর। আপনি যদি সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণের জল পান করেন, তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য অমৃত সমান হয়ে উঠতে পারে। সেই সঙ্গে, জল খাওয়ার লাভজনক উপায় সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন । অর্থাৎ গরম জল কখন কীভাবে খাবেন, সেটা জানা খুব জরুরি।
গরম জল খাওয়ার উপকারিতা গুলি কী কী ? ১. যারা কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা, সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য গরম জল খুবই উপাদেয় । খালি পেটে গরম জল খাওয়ার অভ্যাস আপনার শরীরের এই ধরনের অভ্যাসকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারে।
২. অনেকেরই হজম সম্পর্কিত সমস্যা আছে। এই রকম সমস্যা থাকলে, প্রতিদিন খালি পেটে এক গ্লাস করে গরম জল খেলে, আপনি এই সমস্যার হাত থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারেন। এতে করে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, আপনি সহজেই খাবার হজম করতে সক্ষম হবেন।
৩. উষ্ণ জল রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. ঋতুস্রাবের দিন গুলিতেও পেটে ব্যথার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গরম জল খুবই উপকারী।
৭. মাথা ব্যথার সমস্যা থাকলেও গরম জল পান আপনাকে সেই কষ্টের থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে। গরম জল মাংসপেশিতে জমে থাকা বেদনাও দূর করতে সাহায্য করে।
৮. গলার সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় এই গরম জল। আপনার গলা শুকিয়ে আসলে পান করুন সামান্য গরম জল, সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি পাবেন।
৯. সর্দি-কাশি হলে শ্বাসনালিতে সর্দি জমে যায়। সেই জমে থাকা সর্দি বের করতে গরম জল অব্যর্থ। গরম জল খেলে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।জমে থাকা কফ বেরিয়ে আসে।
১০. গরম জল ত্বককে আর্দ্র রাখে। নিয়মিত গরম জল খেলে শরীরে বলিরেখা পড়া বা ব্রণর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১১. ঈষদুষ্ণ জল পান, গার্গল, অনুপান, স্নান সহ অন্যান্য উপায়ে ব্যবহার করা হয় যার বহুরোগে আয়ুর্বেদ এ নির্দেশ আছে ।
১২. শরীরের মেদ ঝরাতেও সাহায্য করে ঈষদুষ্ণ জল। তাই স্থূলত্ব বা ওবেসিটির রোগীরা নিয়মিত গরম জল পান করলে উপকার মেলে।
১৩. অনেকেরই মাঝেমধ্যে হেঁচকি ওঠার সমস্যা থাকে। এক্ষেত্রেও ঈষদুষ্ণ জল পানে উপকার মিলতে পারে।
১৪. গলা খুসখুস, গলা বসে যাওয়া সহ কন্ঠের যে কোনও সমস্যায় ঈষদুষ্ণ জলের গার্গল খুবই উপকারী।
১৫. দাঁতে ব্যথা এবং মুখে ঘায়ের অসুখেও দিনে এক থেকে দু’বার ঈষদুষ্ণ জলে গার্গল করলে সমস্যা অনেকটাই কমে।
১৬. অনুপান: আয়ুর্বেদ ওষুধ খাওয়ার জন্য ঘি, দুধ, গরম জলের মতো খাদ্য ও পানীয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। এগুলিকে বলে অনুপান। নির্দিষ্ট জায়গায় ওষুধকে দ্রুত পৌঁছে দিতেও সাহায্য করে অনুপান। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, অন্যসব অনুপানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অনুপান হল ঈষদুষ্ণ জল।
১৭. বাতের বিভিন্ন সমস্যার আয়ুর্বেদিক ওষুধ নির্দিষ্ট করে ঈষদুষ্ণ জলের সঙ্গেই পান করার কথা বলা হয়। তখনই ওষুধগুলি সবথেকে ভালো কাজ করে।
১৮. স্নান: ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করলে শরীরের নিজস্ব তাপমাত্রা শরীর থেকে বেরতে পারে না। তাই যে কোনও সুস্থ মানুষ চাইলেই ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করতে পারেন।
১৯. বাতের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করলে সমস্যা বেশকিছুটা কমে। বিশেষত, বর্ষা এবং শীতে বাতের সমস্যা বাড়ে। তাই অন্তত এই দুই ঋতুতে বাতব্যাধিতে ভুক্তভোগী মানুষ রোজ নিয়ম করে ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করতে পারেন।
কখন ঈষদুষ্ণ জল নয় ?
ঈষদুষ্ণ জলের গুণ প্রশ্নাতীত হলেও কিছু ক্ষেত্রে এই জল ব্যবহার চলবে না। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে ঈষদুষ্ণ জল সবসময় এড়িয়ে চলা দরকার। এছাড়া আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, পিত্তজ প্রকৃতির মানুষ (গরম খাবার সহ্য হয় না এমন মানুষ), বিষ ঘটিত রোগে ভুগছেন এমন রোগী উষ্ণ জল এড়িয়ে চলতে হয় সবসময় ।