নিজস্ব সংবাদদাতা: যাঁকে জঙ্গলমহলের ‘মুক্তিসূর্য’ বলে অভিহিত করেন তাঁর অনুগামীরা তিনি আজ মুক্তির আশায় ঈশ্বরের কাছে আকুল প্রার্থনায়! যে মমতা ব্যানার্জীকে একদিন নিজেই বাংলার ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার’ নেত্রী বলে মনে করতেন, মনে করতেন বাংলার জনগনমন অধিনায়িকা সেই মমতা শাসন থেকেই কী আজ বাংলার মুক্তি প্রার্থনায় আকুল হয়ে উঠেছেন সদ্য পদত্যাগী মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী? অন্ততঃ রাজনীতিকরা তেমনি মনে করছেন।১৮ দিন আগে মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু দলের সদস্যপদ কিংবা বিধায়ক পদ এখনও ছাড়েননি আর সরাসরি দলের বিরুদ্ধে কোনও বক্তব্যও রাখেননি। কিন্তু রবিবার একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে শুভেন্দু যা বললেন তার সারমর্ম শুধু বর্তমানেই নয়, ২০২১য়ের লড়াইতেও শাসকদলকে ভুগতে হবে বলেই মনে হচ্ছে।
রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে হাজির ছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। আপাদমস্তক একটি সাহিত্য সংস্কৃতির অনুষ্ঠান যেখানে প্রাক্তন এই মন্ত্রী বললেন, ‘আশা করব ঈশ্বর আমাদের ২০২১ সালটা খুব ভাল দেবে, মুক্তির সাল দেবে, আনন্দের স্বাদ দেবে৷’ অর্থাৎ খুব পরিষ্কার যে শুভেন্দু মনে করেন বর্তমান শাসনে বাংলা ভাল নেই, বাঙালি পরাধীনতায় আবদ্ধ, বাংলা নিরানন্দময়। এটা ঠিকই যে, শুভেন্দু অধিকারী কারও নাম করেননি, বলেননি কিসের থেকে বা কার থেকে এই মুক্তি প্রার্থনা কিন্তু বুঝে নিতে অসুবিধা হয়না কী বলতে চাইছেন তিনি।
তাঁর পরের শব্দগুলি অবশ্য অনেকটাই পরিষ্কার যেখানে তিনি বলছেন, “আমি মানুষের সঙ্গে কোনওদিন বিশ্বাসঘাতকতা করব না৷ মানুষের উপরে যদি অন্যায়, অত্যাচার হয়, বেকার যুবকরা যদি কর্মসংস্থান না পেয়ে যন্ত্রণায় কাতরায়, কৃষকরা যদি যন্ত্রণায় কাতরায়, যদি মানুষের মধ্যে উন্নয়নের জন্য আরও প্রত্যাশা থাকে, তাহলে শুভেন্দু অধিকারী সেটা করবে।” অর্থাৎ সামনের দিনের লড়াইটা অন্যায়, অবিচার, বেকারত্ব, কৃষকের যন্ত্রণার বিরুদ্ধে। আর এখান থেকেই চ্যালেঞ্জটা শুরু তৃণমূল কংগ্রেসের।
শুভেন্দু তৃণমূলে থাকছেননা আর রাজনৈতিক সন্ন্যাসও নিচ্ছেননা। লড়াই সামনা সামনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে, মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে এবং অভিষেক ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে। তৃণমূলের কাছে বিষয়টা চ্যালেঞ্জের এই কারনেই যে শুভেন্দু এই দলের প্রায় ২নম্বর ব্যক্তিত্ব ছিলেন, মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ফলে ভেতরের অলিগলি তাঁর জানা আর কী কারণে, কার বাধায় মন্ত্রি থাকা স্বত্ত্বেও কাজ করা যায়নি।
আগামী দিনে এসবই আসবে আর আসবে সরকারের ‘সব করে দিয়েছি’ মনোভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করা হয়নি এই প্রসঙ্গ। আসবে কৃষকের সঙ্গে, বেকারের সঙ্গে আর বাকস্বাধীনতার সঙ্গে কী ভাবে এই সরকার ‘বিশ্বাসঘাতকতা’করেছে সেই প্রসঙ্গ। এদিনের অরাজনৈতিক সভা থেকে আগামীদিনের রাজনৈতিক লড়াইয়ের সিলেবাসটা বোধহয় বলেই দিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী।