নিজস্ব সংবাদদাতা: বিরোধী দলের নেত্রী হিসাবে কার্যত বনধ ডাকায় রেকর্ড করেছিলেন মমতা ব্যানার্জী কিন্তু রাজ্যপাট সামলানোর দায়িত্ব হাতে আসতেই বনধের বিরোধিতায় নেমেছেন। বহু সময় বনধ ডাকার পেছনে দাবি গুলিকে গুরুত্বপূর্ণ এবং সমর্থন যোগ্য মনে করলেও বনধের পক্ষে দাঁড়াননি বরং বহু ক্ষেত্রেই বনধ ভাঙার জন্য তাঁর পুলিশ অতি সক্রিয় হয়েছে এমনটাই অভিযোগ ছিল বনধ সমর্থকদের। কিন্তু সোমবার সমস্ত হিসাব বদলে দিয়ে বনধের সমর্থনেই কার্যত কথা বললেন মূখ্যমন্ত্রী।
মেদিনীপুর শহরের মাটি থেকে আদ্যপান্ত নির্বাচনী জনসভায় মূখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন দিল্লির প্রবেশ মুখে দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক কৃষি বিল প্রত্যাহারের দাবি তে মঙ্গলবার যে ভারত বনধ ডেকেছে তাকে সমর্থন করছেন তিনি। মনে করা হচ্ছে নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে বিজেপি বিরোধী স্বরকে আরও চাঙ্গা করার জন্যই এই ১৮০ডিগ্রি মত পরিবর্তন করলেন মমতা ব্যানার্জী। সেই অর্থে মেদিনীপুরে মমতা ব্যানার্জীর এই জনসভা ঐতিহাসিক হয়ে রইল বলা যেতেই পারে।
এদিন শুরু থেকেই বিজেপি বিরোধী স্বর চড়া করেছেন মূখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দিয়েছে টাকা, পেশিশক্তি আর ব্ল্যাকমেইল করে তৃণমূলকে ভাঙার চেষ্টা করছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় এজেন্সি লাগিয়ে জেলে পোরার ভয় দেখানো হচ্ছে, প্রতি পদে পদে বাংলার প্রতি বঞ্চনা করা হচ্ছে। মমতা দাবি করেছেন, এরা (কেন্দ্র)আমফানের টাকা দেয়নি, করোনা মোকাবিলায় টাকা দেয়নি অথচ হিসাব চাইছে! ক্রুদ্ধ মমতা বলেই ফেলেন, ‘তুই টাকা দিয়েছিস যে তোকে হিসাব দিতে হবে?’ এরপরই তিনি বলেন, ‘তুমি সবার টাকার হিসাব চাও কিন্তু পিএম কেয়ারের নামে যে কোটি কোটি টাকা তুলছ, তার হিসাব আগে দাও। আগে একটা কাগজ প্রকাশ করে জানাও যে পিএম কেয়ার ফান্ডে কত টাকা তুলেছ আর কোথায় খরচ করেছ?’
মূখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হিসাব চাওয়ার নাম করে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, হয় জেল মে রহ, নেহি তো ঘরমে রহ (হয় জেলে থাক নয় ঘরে থাক।) তিনি বলেন, ‘যদি বিজেপি বা তার কোনও সাথী মনে করে ব্ল্যাকমেইল করে তৃনমূলকে শেষ করবে তিনি ভুল করবে। বিজেপির অনেক টাকা থাকতে পারে, গুন্ডা থাকতে পারে কিন্তু তৃণমূলের মত আদর্শবান কর্মী তাঁদের নেই। আর তাই তৃণমূলকে শেষ করা সম্ভব নয়।’
মূখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘৩৪বছর ধরে লড়াই করে আমরা তৈরি হয়েছি। অনেক মার খেয়েছি। চমকাইতলা, নেতাই, কেশপুরে মার খেয়েছি তাই আমাদের ভয় নেই। ভয় দেখিয়ে তৃণমূলকে শেষ করা যাবেনা।’ এরপরই বিজেপির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তুলে দিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমাদের রাজ্যে একটা স্বাস্থ্যসাথী কর, সবুজশ্রী কর, পথশ্রী কর তারপর কথা বলতে এস। কী হচ্ছে তোমাদের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দিল্লিতে?”
বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ৫/৬বছরে অনেক টাকা করে নিয়েছে এরা। কোটি কোটি টাকা চুরি করেছে, লুঠ করছে আর বাংলায় একটা ছোট গ্রামপঞ্চায়েতে ছোট কিছু হলে, দুর্নীতি দুর্নীতি বলে চেঁচাচ্ছে। বলছে জেলে ঢুকিয়ে দেবে।” বিজেপি বিরোধিতার এই সুরকে আরও সপ্তমে বাঁধতেই তিনি প্রথা বিরুদ্ধভাবেই মঙ্গলবারের বনধের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে গত ৫বছর আগে নির্বাচনের মুখে মমতা ব্যানার্জী যে ভাবে তাঁর সরকারের সাফল্যকে সামনে রেখেই ভোট প্রচারে গেছিলেন এবার সেই পরিস্থিতি নেই। চড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে তাই কেবলই সরকারি সাফল্য নয় তার পাশাপাশি বিরোধী একটা মুখ হিসাবেও তিনি নিজেকে এবং দলকে তুলে ধরতে চাইছেন আর সেখান থেকেই বনধের সমর্থনে মমতা ব্যানার্জী।
অন্যদিকে দিল্লির রাজপথে লক্ষ লক্ষ কৃষকের সমর্থনে নেমেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি। আন্দোলনরতকৃষকদের এই আন্দোলন ও বনধের সমর্থনে দাঁড়ানোর অর্থই হল বিজেপির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। মমতা ব্যানার্জী সেই সুযোগটি হাত ছাড়া করতে চাইছেননা। মূখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি বনধকে সমর্থন করিনা কিন্তু দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি গুলিকে আমি সমর্থন করি।” তিনি বলেন, কাল ব্লকে ব্লকে আন্দোলন হবে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে। হয় কৃষি বিল প্রত্যাহার কর নয় বিজেপি ক্ষমতা ছাড়।”