নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৯৯৮ সাল থেকে এই সেদিনও জেলায় মমতা ব্যানার্জী এসেছেন কিন্তু তাঁর সভায় প্রবীণ তৃনমূল নেতা জহরলাল পাল কিংবা অমূল্য মাইতি নেই! হ্যাঁ এটাই প্রথমবার এবং এটা সেই সময় যখন মাত্র ৬মাসের মাথায় একটা মরনপন সংগ্রামে যেতে চলেছে তৃনমুল কংগ্রেস। যখন দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারাটা বিপক্ষের পাশাপাশি জনগনের কাছেও হাজির করা দরকার ছিল। আর মাত্র ১২ঘন্টার মধ্যেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম প্রচার শুরু করতে চলেছেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী আর তার পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীকেও বার্তা দেওয়ার কথা তাঁর। বুঝিয়ে দেওয়া যে তাঁকে ছাড়াও ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে প্রস্তুত হচ্ছে দল কিন্তু ঘটনা এটাই যে সেই সভায় মমতা ব্যানার্জী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দুই পুরানো সঙ্গীকে সঙ্গে পাচ্ছেননা।
শুধু তাই নয়, সূত্রের খবর সভায় অনুপস্থিত থাকছেন একাধিক প্রবীণ ও নবীন নেতৃত্ব যাঁর মধ্যে জহর, অমূল্য ছাড়াও কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমা প্রসাদ গিরি, মেদিনীপুর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রনব বসু সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একাধিক প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ, নেতা নেত্রী রয়েছেন। খড়গপুর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্রবীণ তৃনমূল নেতা জহরলাল পাল জানিয়েছেন, ‘মমতা ব্যানার্জী তাঁর বইতে এ জেলায় সংগঠন গড়ার ক্ষেত্রে যে দুটি নাম উল্লেখ করেছেন তার একজন আমি। ১৯৯৭ সাল থেকে তাঁর সঙ্গে রয়েছি আর ১৯৯৮ সালে দল গঠিত হওয়ার পর থেকে অবিভক্ত জেলার হলদিয়া থেকে ঝাড়গ্রাম, গড়াবেতা থেকে দিঘা তাঁর সঙ্গে অথবা তিনি ছাড়া সংগঠন করে বেড়িয়েছি। তিনি জেলায় এসেছেন অথচ আমি যাইনি এমনটা হয়নি। ”
পাল জানান, ‘ ওঁর ঝাড়গ্রামের সভায় যেতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ যেতে বসেছিল, ওঁর সভা আয়োজন করতে গিয়ে মারও খেয়েছি। কিন্তু সোমবারের সভায় যাচ্ছিনা। এই প্রথম আমি অনুপস্থিত থাকছি তাঁর সভায়। কারন আমাকে জেলা সভাপতি একটা ফোন করেও আমন্ত্রন জানাননি। অথচ আমি জেলার এখনও সহ সভাপতি। এই অপমান নিয়ে সভায় যাবনা।”
জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা সবং তৃনমূলের নেতা অমূল্য মাইতিও মূখ্যমন্ত্রীর সভায় প্রথম অনুপস্থিত থাকছেন বলেই জানা গেছে। মাইতিও ১৯৯৮ সাল থেকে মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে দল গড়ার কাজে ছিলেন কিন্তু বর্তমানে দলে কোণঠাসা। নিজেকে শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি যথেষ্টই কৃতজ্ঞ বলে দাবি করেন মাইতি। মাইতি সোমবারের সভায় যাবেন কি না, স্পষ্ট করে জানাননি। বলেছেন, ‘দর্শকদের মাঝখানে খুঁজে দেখবেন, থাকলেও থাকতে পারি।’ যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য তিনি মেদিনীপুর যাচ্ছেননা। সভায় যাচ্ছেননা রমাপ্রসাদ গিরি বা প্রনব বসুরা। প্রনব বসু জানিয়েছেন, আমন্ত্রন ছাড়া কোথাও যায়নি। যেহেতু আমন্ত্রন পাইনি তাই যাওয়ার প্রশ্ন নেই।
জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ দাসপুরের নেতা তপন দত্ত, গোয়ালতোড়ের নেত্রী প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ কাবেরী চ্যাটার্জীও থাকছেননা সভায় এমনটা জানা গেছে তবে এঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি তাই নিশ্চিত নয় এঁদের অবস্থান।
এদিকে রবিবার সন্ধ্যাতেই মেদিনীপুর শহরে পৌঁছে গেছেন মূখ্যমন্ত্রী। সোমবার তাঁর সভাকে ঘিরে টানটান প্রস্তুতি। গোটা শহর সাজানো হয়েছে দলীয় পতাকা আর মমতা ব্যানার্জীর কাট আউটে। সভাস্থল ঘিরে চলেছে স্যানিটাইজেশনের কাজ। করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ডেকোরেটর, মাইক ম্যান সহ এক গুচ্ছ নেতা কর্মীর। রবিবার সভাস্থলেই জেলার নেতাদের সঙ্গে এক প্রস্থ জরুরি বৈঠক সেরে ফেলেছেন সুব্রত বক্সী। ‘মমতার সঙ্গে মেদিনীপুর’ শ্লোগানে সোমবার মমতার সভাস্থল মেদিনীপুর কলেজ মাঠ ভরিয়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর তৃনমূল নেতারা। মেদিনীপুর কলেজ ময়দান ভরিয়ে তোলা তৃনমূল কেন কোনও শাসকদলের পক্ষেই অসম্ভব নয় কিন্তু পুরানো দিনের সঙ্গীরা ছাড়া মমতার সভামঞ্চ যে অপূর্ণই থেকেই যাবে!