নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১৮ সালের ১৪ই মে, পঞ্চায়েত নির্বাচন। সন্ধ্যের সময় ‘একটু আসছি’ বলে বুথ থেকে বাইরে বেরিয়েছিলেন প্রিজাইডিং অফিসার রাজকুমার রায় কিন্তু আর আসেননি। অন্য প্রিজাইডিং জোগাড় করে ভোট হয়েছিল আর ভোটের বলি শিক্ষক রাজকুমার রায়ের রক্তাক্ত দেহ মিলেছিল পরের দিন। বাংলার নির্বাচনে এই ঘটনাটা সর্বাধিক ভয়াবহ হলেও, অন্য ঘটনা গুলি কিছু কম ভয়াবহ নয়। ভোটকর্মীদের নিষ্ক্রিয় রেখে একের পর এক ছাপ্পা, অসহায় ভাবে চোখের সামনে ইভিএম মেশিন ভাঙতে দেখা ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবের মধ্যেই ফের আরেকটি নির্বাচন দোর গোড়ায়। আগামী বছরের সেই বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী সহ ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবার রাস্তায় নামলেন শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সদস্যরা। মঙ্গলবার কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে গিয়ে ১৩দফা দাবিপত্র পেশ করলেন তাঁরা।
দাবিগুলি হল ১) রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কর্মীর জন্য সুনিশ্চিত নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং তার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ২) প্রতিটি বুথে প্রিজাইডিং অফিসারের সহিত ৬ জন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে ভোটার এবং ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ৩) স্পর্শকাতর বুথগুলিতে দ্বিগুণ হারে এই নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৪) ডিউটি থাকা অবস্থায় হিংসাত্মক কোন ঘটনায় ভোট কর্মীর মৃত্যু হলে ৫০ লক্ষ টাকা আর সাধারণ মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৩০ লক্ষ টাকা তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে হবে এবং পরিবারের একজনকে চাকুরি দিতে হবে। ৫) হতাহতের জন্য আগে থেকে প্রতিটি ভোট কর্মীর জন্য বীমার ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। ৬) ভোট গ্রহণের শেষে ভোট বাক্স জমা দেওয়ার পর রিলিজ অর্ডার দিয়ে দিলেই নির্বাচন কমিশনের সমস্ত দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ভোট গ্রহণের জন্য ভোট কর্মীদের বাড়ি থেকে বাহির হওয়ার পর থেকে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত তাঁর জীবনের সমস্ত নিরাপত্তার ভার নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।
৭) কভিড পরিস্থিতিতে ভোট কর্মী এবং ভোটারদের সুরক্ষিত রাখার জন্য সমস্ত রকম উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৮) প্রতিটি বুথে ভোট কর্মীদের থাকা, খাওয়া ও সঠিকভাবে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া পরিচালনার উপযুক্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৯) প্রিজাইডিং অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তৎক্ষণাৎ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১০) ভোটিং মেটেরিয়ালস জমা দেওয়ার পর বাড়ি ফেরার জন্য উপযুক্ত যানবাহন যথেষ্ট পরিমাণে রাখতে হবে। ১১) রিলিভারের জন্য প্রতিটি বুথে একজন করে অতিরিক্ত ভোট কর্মী দিতে হবে। ১২) প্রতিবন্ধীদের ভোট কর্মী হিসাবে নিয়োগ করে তাঁদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ১৩) বুথ ভিত্তিক নয়, পোস্টাল ব্যালট বিধানসভা অনুযায়ী একসাথে মিশিয়ে গননা করতে হবে।
সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী জানান, ‘ এই দাবিগুলি নিয়ে আজ, মঙ্গলবার আমরা নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে ডেপুটি সিইও বুলান ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং জোরালো ভাবে আমাদের দাবি তুলে ধরি। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন ভোট কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন আমাদের ডেপুটেশনের কপি এবং দাবিগুলি গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন কমিশনার আরিজ অফতাবের কাছে তুলে ধরবেন এবং এ বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত তথ্য জানাবেন।”
অধিকারী আরও বলেন, “আমরা জানিয়েছি, ভোট কর্মী হিসাবে সাংবিধানিক দায়িত্ব যেন আমরা মাথা উঁচু করে দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতে পারি তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে। এই দাবিগুলি পুরনে সুনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি না পেলে আমরা রাজ্য জুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো। আর শেষ পর্যন্ত দাবি না মানা হলে আমারা আমাদের ভোট কর্মীর দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবো।”
অধিকারী ছাড়াও প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন মঞ্চের সভাপতি শ্রী বিশ্বজিৎ মিত্র, সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য অনামিকা চক্রবর্তী, অনিমেষ হালদার, তমাল মন্ডল এবং চন্দন গড়াই প্রমুখরা।