আশ্লেষা চৌধুরী: কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর পর এবার বিদ্রোহের পথে কি সিতাইয়ের তৃনমূল বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়া! না হলে সরাসরি কেন তিনি দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে উগরে দিলেন ক্ষোভ? মঙ্গলবার প্রকাশ্য মঞ্চে বসুনিয়ার ক্ষোভ রীতিমত দুশ্চিন্তায় ফেলবে শাসকদলকে। মঞ্চে উঠে প্রকাশ্য দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলার অভিযোগ তুলেছেন সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। তাও আবার জেলা তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতীম রায়, মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সহ একাধিক নেতার সামনেই। সেই সঙ্গে বিঁধলেন প্রশান্ত কিশোরের সংস্থাকেও।
মঙ্গলবার জগদীশ বাবুর সঙ্গে দেখা করতে যান প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার কর্মীরা। তাদের সামনেই নিজের ক্ষোভ উগরে দেন বিধায়ক। বিকেলে এক কর্মিসভায় দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি। বলেন, ‘চেয়ারে বসে আছে অনেক নেতারা। তাদের হাতে কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ। তারা মনে প্রাণে কোচবিহার জেলা তৃণমূলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে চান না বিজেপিকে উপহার দিতে চান তাঁদের ঠিক করতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেসকে সংগঠিত করার বদলে কোচবিহার জেলায় তাচ্ছিল্য চলছে। আপনাদেরই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনারাই তার কারিগর।‘
এরপরেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘একা আমার ওপরে আঘাতটা আসেনি। গোটা কোচবিহার জেলার সবার ওপরে আসবে। ‘জেলার নেতাদের অনেকেই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করেছেন। আজ নিজেদের বড় ভাবছেন। তারা আসলে বেইমান, বিশ্বাসঘাতক। ২০১৯-এ যাঁরা বিজেপিকে সাহায্য করেছেন, তাঁরাই আজকের নেতা। কে কত বড় নেতা, ২০২১-এ বোঝা যাবে। বিপদটা সবার হবে, যদি ২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় না বসে।‘
দলের জেলা নেতৃত্বের তরফে সদ্যনিযুক্ত ব্লক সভাপতিকেও নিস্তার দিলেন না বিধায়ক। তাঁকে নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন জগদীশ বাবু। সেই সঙ্গে দাবী করেন, মিহির গোস্বামী দল ছাড়লে তৃণমূলে তার প্রভাব পড়বে।
প্রসঙ্গত, কোচবিহারে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ নতুন কিছু নয়। রবীন্দ্রনাথ ঘোষের গোষ্ঠীর সঙ্গে পার্থসারথি রায়ের গোষ্ঠীর ঠোকাঠুকি লেগেই থাকত। এর পর উদয়ন গুহ তৃণমূলে যোগ দিলে ত্রিকোণ লড়াই শুরু হয় সেখানে। যার জেরে নিয়মিত অশান্ত ও রক্তাক্ত হয় জেলায়। কিন্তু দলের অন্দরে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয় যখন থেকে এখানকার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর গলায় বিদ্রোহের সুর শোনা যায়। এরপর ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়।
এবার একুশের বিধানসভার আগে ফের চির ধরছে এখানকার দলের অন্দরে। একের পর এক বিদ্রোহের সুর ভেসে আসছে চারিদিক থেকে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দলের পুনরায় বাংলার মসনদ দখল যে খুব একটা সহজতর হবে না, এসব ঘটনা তারই ইঙ্গিত বহন করছে বলেই মনে হচ্ছে।