নিজস্ব সংবাদদাতা: ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে চলবে লোকাল ট্রেন তাই খুশির হওয়ায় উড়ছে খড়গপুরের বোগদা। খড়গপুর রেল স্টেশনের দক্ষিণ দিকে বোগদা। খড়গপুর তো বটেই কেশিয়াড়ী, নারায়নগড়, বেলদা, সবং, পিংলা, দাঁতন, মোহনপুর যে এপাশেই আসে ট্রেন ধরতে। গরমভাত, লুচি,পুরি, পরোটা, চাউমিন, ইডলি, ধোসা, সম্বর বড়া কী নেই বোগদাতে? পান, বিড়ি, সিগারেট, খইনি যাবতীয় নেশার উপকরণ। সেফটি পিন,রুমাল,চিরুনি, মানিব্যাগ, হাত ঘড়ি নিত্য যাত্রার যাবতীয় উপকরণ নিয়ে গত ৭ মাস শুকিয়ে মরার জোগাড় হয়েছিল বোগদার। আজ মঙ্গলবার, ১০ই নভেম্বর তাই উৎসবের আমেজ বোগদার দোকানে দোকানে। দিওয়ালির আগে দিওয়ালি।
ছোট বড় মিলিয়ে অন্ততঃ ২০০দোকান বোগদায়। শুধু চা বিক্রি করে এমন দোকানই ডজনেরও ওপরে। বাদ না পড়ে যায় জুতো সেলাই থেকে বইয়ের দোকানে চন্ডীপাঠের সম্ভার। সাইকেল সারাই, গোটা ছয়েক ফল বিক্রেতা তারাই বা বাদ যায় কেন? গোটা বোগদা জুড়েই তাই উৎসবের মেজাজ। ৭খানা প্রমান সাইজের ভাতের হোটেলে চলছে ঝাড়াই পোছাই। লটারির দোকানে করা হচ্ছে নতুন রঙ। টিকিটে লটারি নাই লাগুক, খরিদ্দারের হাত ধরেই এবার ভাগ্য খুলে যাবে যে!
এমনই এক খাওয়ার দোকানের ৩২ বছরের মালিক জানালেন, ” জন্ম থেকেই দোকান দেখছি আমি। বাবা এই দোকান চালিয়েছেন ১৫ বছর। পরের ২০বছর আমার হাতে। এমন সর্বনাশা দিন আসেনি কখনও। ৮ মাস মাছি মারছি লোকাল ট্রেন না চলায়। দিনে মেরে কেটে দেড় হাজার টাকা আয় ছিল কিন্তু পুঁজি ভেঙে খেয়েছি। অবশেষে ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন। কাল থেকে চলবে লোকাল ট্রেন। খরিদ্দারের জন্য স্যানিটাইজের ব্যবস্থা থাকছে। নির্দ্বিধায় আসতে বলুন।”
ভিকি লটারি দোকানের মালিক মরিস ডোনিট্য বলেন, ” রঙ করছি দোকান। আবার নতুন করে সাজাচ্ছি সব কিছু। আশা করছি আবার আগের মতই খরিদ্দার পাব। ফুটো কপাল খুলে যাবে।”
কুমারী চাউমিন দোকানের মালিক বলেন, “প্রতিদিন দেড় দুশো টাকা আয় করতাম কিন্ত এই ক’মাস ৫০ টাকা আয় করতে জীবন হারাম হয়ে গেছে।”
বোগদায় বারোভাজার দোকানের মালিক জিতেন্দ্র জানালেন, ‘এই কদিন সকাল বেলার দিকে পাড়ায় পাড়ায় সবজি বিক্রি থেকে শুরু করে দিনমজুরি যা কাজ পেয়েছি তাই করেছি কিন্তু সব সময় সেই কাজ পাইনি। ফলে সংসারের অবস্থা খুবই করুন হয়ে গেছে। লোকাল ট্রেন চলতে শুরু করলে বোগদায় ভিড় বাড়বে আর আবার নতুন করে আয়ের মুখ দেখতে পারব ভেবে নিশ্চিন্ত বোধ করছি।সব মিলিয়ে গোটা বোগদা জুড়ে এখন সাজো সাজো রব।