অভিনন্দন রানা: গোটা দেশের নজর ছিল যেই দিকে, সেই বিহারের ভোট পর্ব সাঙ্গ হওয়ার সাথে সাথেই একাধিক সংস্থার এক্সিট পোল প্রকাশিত হল। সেই এক্সিট পোল প্রকাশিত হওয়ার পরই দেখা গেল কোনো পক্ষই সেই এক্সিট পোলের ফলে আত্মতুষ্ট হওয়ার সুযোগ পাবে না। মোটামুটি গোটা দেশজুড়েই একটা বিজেপি বিরোধী হওয়া চলছে। তাই বিজেপির কাছে বিহার নির্বাচন কার্যত বিজেপির কাছে এসিড টেস্ট ছিল। তবে এক্সিট পোলের ফল দেখে একটু হলেও বিজেপি অন্তত অক্সিজেন পাবে। কারন ফলাফল যাই হোক, বিজেপি অন্তত সম্মানজনক আসন পাচ্ছে এটা নিশ্চিত।
একাধিক এক্সিট পোলের হিসেবে যা দেখা যাচ্ছে তা অনুসারে বিহারে তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাজোট অল্প কিছু আসনে নীতিশ কুমারের মহাজোটের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ভোটের আগে রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুতে সহানুভূতির ভোট মোটেই টানতে পারেনি একলা লড়াই করা চিরাগ পাসওয়ানের নেতৃত্বাধীন এলজেপি।
এনডিটিভির এক্সিট পোল অনুসারে মহাজোট পেতে পারে ১২৮টি আসন, এনডিএ পেতে পারে ৯৯টি এবং এলজেপি ৬টি আসন। ইন্ডিয়া টুডের এক্সিট পোল অনুসারে মহাজোট ১৩৯ থেকে ১৬১, এনডিএ ৬৯-৯১, এলজেপি ৩-৫টি আসন পেতে পারে। এবিপি নিউজের সমীক্ষা অনুযায়ী মহাজোট ১০৮-১৩১, এনডিএ ১০৪-১২৮, এলজেপি ১-৩টি আসন পেতে পারে। অন্যান্য সমীক্ষা গুলিও একই রকম ফলাফলই আসা করছে। কোনো সমীক্ষাই জোর দিয়ে নীতিশ বিজেপি জোটের ক্ষমতায় আসার কথা বলতে পারছেনা।
গত বিধানসভা ভোটে একাধিক নাটকের সাক্ষী ছিল বিহার। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লালু নীতিশ একসাথে বিজেপি বিরোধিতা করে ভোট লড়েন। বিজেপিকে রুখতে অপেক্ষাকৃত বেশি আসন পাওয়া সত্বেও নীতিশকে মুখমন্ত্রী পদে বসান লালু। উপমুখ্যমন্ত্রী হন লালু পুত্র তেজস্বী। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আচমকা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে নীতিশ ফিরে আসেন পুরোনো জোটসঙ্গী বিজেপির সাথেই। তাই এই নির্বাচনে লালু পুত্রের কার্যত এসিড টেস্ট হচ্ছে। বিগত নির্বাচনে লালু প্রার্থী না হলেও জোরদার প্রচার করেছিলেন আরজেডির হয়ে। সঙ্গে নীতিশ কুমার ছিলেন মহাজোটের নেতা হিসেবে। কিন্তু এবার লালু পশুখাদ্য মামলায় জেলবন্দি হওয়ায় কার্যত একাই লড়াই ছিল তেজস্বীর। আপাতত ফল আসতে দেরী থাকলেও এক্সিট পোলে লালু পুত্র কিন্তু লেটার মার্ক্স নিয়ে পাশ করতে চলেছেন। উল্টোদিকে নীতিশ বারবার লালুর আমলের জঙ্গলরাজকে টার্গেট করেও যুব ভোটারদের মন জিততে ব্যর্থ। ওয়াকিবহাল মহলের মতে যুব ভোটারদের অধিকাংশই এবার লালু পুত্রের দিকেই বোতাম টিপেছেন।
অন্যদিকে বিহার তথা দেশের রাজনীতির মৌসম বিজ্ঞানী বলে পরিচিত রামবিলাস পাসওয়ানের ভোটের আগেই মৃত্যু এবং তাঁর পুত্রের বহুদিনের জোট ভেঙে একা লড়াই করার সিধান্ত সেভাবে কাজে দিলনা বলেই মনে হচ্ছে এক্সিট পোলের হিসেবে। এমনকি যা ফলাফল এক্সিট পোল দেখাচ্ছে তাতে স্পষ্ট এই ভোটে রামবিলাসের মৃত্যুতে সহানুভূতির ভোটটুকুও টানতে ব্যর্থ তাঁর পুত্র। উল্টে একলা চলতে গিয়ে কার্যত বিহার ভোটে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারেন চিরাগ, এমনও জল্পনা চলছে।
আর হ্যাঁ, বাংলায় ক্রমাগত রক্তক্ষরণ অব্যাহত হলেও পাশের রাজ্যের ফলে বামেরা একটু উজ্জ্বীবিত হতেই পারেন। কারন যদি সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায়, বিভিন্ন সমীক্ষার মতে বামেরা ৬-১৩টি আসন জিততে পারে বিহারে। বিহারে মহাজোটের অংশ হিসেবে সিপিআইএমএল ১৯টি, সিপিআই ৬টি, সিপিআইএম ৪টি আসনে লড়াই করেছিল। ফলে যদি এক্সিট পোল সত্যি হয় তাহলে বামেদের ফলাফল সত্যিই খুব ভালো হতে চলেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএমএল ৩টি আসন পেয়েছিল। ফলে বিহার ভোটে বিজেপি ধাক্কা খেলেও বাংলার বাম নেতৃত্ব হয়ত টিভি স্ক্রিনের সামনে নিজেদের হাসি চওড়া করতে পারবেন বলেই আশা করা যায়।