অতীতে সুবর্নরেখা অববাহিকায় মহাজনী কারবার উপেন পাত্র বিগত শতাব্দীর ষাটের দশক পর্যন্ত সুবর্ণরেখা নদী অববাহিকা অঞ্চলে সাধারণ জনের আর্থিক অবস্থা বড়ই করুণ ছিল। খেত মজুর ও প্রান্তিক চাষীরা বছরের দু’টি সময় প্রায় অনাহারে অর্দ্ধাহারে কাটাতো।ভাদ্র মাসে আশু ধান কাটার আগের অবস্থাকে “ভদরিয়া টান”এবং আমন ধান কাটার আগের অবস্থাকে” কাত্তিকা টান” বলা হতো।সাধারণ জন গ্রামের জোতদারের কাছ থেকে ধান কর্জ নিতে বা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হতো। সুদের হার ছিল বেশ চড়া।
এর ওপর আবার কাবুলী ও মঘিয়া মহাজন ছিল।আফগানিস্তান থেকে আসা সুদখোর মহাজনদের সাধারণভাবে কাবুলী বলা হতো। কাবুলীরা শহর এলাকায় মহাজনী করতো, তারা গাঁয়ে গঞ্জে যেতো না।বিহার থেকে আসা মগহীভাষী দালালরা তাদের হয়ে কাজ করতো। তারা নিজেদের মগহী বলে পরিচয় দিতো,তা থেকে “মঘিয়া” কথাটির উদ্ভব।গ্রামের গরীব লোকেরা নেহাত বাধ্য না হলে এদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতো না।এদের সুদের হার যেমন চড়া,তেমনই এদের জোর জুলুম। টাকা ফেরত দেবার নির্দিষ্ট দিনে তারা লাঠি সোটা নিয়ে খাতকের ঘরে চড়াও হতো। টাকা দিতে না পারলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে ঘটি বাটি যা পেতো নিয়ে যেতো।
এই অবস্থায় বেলিয়াবেড়ার জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র প্রহরাজ একটি সমবায় ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি এক লক্ষ টাকা পুঁজিতে বেলিয়াবেড়া সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক গড়ে তোলেন।পরবর্তী কালে খেলাড় ও বলরামপুরের জমিদার পুঁজি বিনিয়োগ করায় ব্যাঙ্কটির নাম হয় “বেলিয়াবেড়া খেলাড় বলরামপুর সমবায় ব্যাঙ্ক”। ঐ ব্যাঙ্কের সুদের হার বেশ কম ছিল।কিন্তু নানা নিয়ম কানুন, নানা বাধা বাঁধনের কারণে অল্প কিছু লোক এর দ্বারা উপকৃত হয়।ঐ ব্যাঙ্কটি পরবর্তী কালে
” বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক” নামে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাম সরকারের আমলে ধিরে ধিরে এই মহাজনি কারবার স্থিমিত হয়ে আসে।বর্গা আইনের ফলে ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষীরা পাট্টা জমির অধিকারী হওয়ায় সাধারণ জনের আর্থিক অবস্থা লক্ষণীয় ভাবে উন্নতি হয়।