নিজস্ব সংবাদদাতা: পুলিশের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে যেন হুঁশ ফিরল শাসকদলের। এতদিন নিরবিচ্ছিন্ন আধিপত্য আর পুলিশের সঙ্গে দহরম করেই কাটছিল দিন। বরং এদিক থেকে দাঁড়িয়ে এতদিন ওদিকে থাকা বিরোধী নেতা কর্মীদেরই পিঠেই পুলিশের লাঠি পড়তে দেখে দেখে হয়ত ভুলেই গেছিলেন যে পালা একদিন তাঁদেরও আসবে! সেই পালাই যেন এল সোমবার। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে পুলিশের হাতে বেধড়ক ধোলাই খেয়ে দিকবিদিক শূন্য হয়ে পড়িমরি করে ছুটে পালাতে দেখা গেল তৃনমূল কর্মীদের। তারপর হতভম্ব ভাব কাটিয়ে যখন হুঁশ ফিরেছে তখন ভাবনা একটাই , আমাদের পেটালো পুলিশ! কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে বিজেপিরা নেতারা বলছেন, দিন বদলাচ্ছে বুঝতে পারছে পুলিশও।
ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন শহরে। অভিযোগ দাঁতন গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসে ঢুকে এক বিজেপি কর্মী এক ধার থেকে সবাইকে গালাগালি করতে থাকে। পুজোর ছুটির পর সবে অফিস খুলেছে। তারমধ্যেই এমন কাণ্ডে হকচকিয়ে যান সবাই। তৃণমূলের উপপ্রধান দেবেশ দাস ওই ব্যক্তিকে বের করে দিতে বলে। তৃণমূলের দুই কর্মী বিজেপির ওই কর্মীকে বের করে দেয়। এরপর যে দুজন কর্মী বিজেপির কর্মীকে বের করে দিয়েছিল তার একজন পরে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বিজেপি কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। মারাত্মক ভাবে মারা হয় তাঁকে, তাঁর হাত ভেঙে দেওয়া হয় এবং গুরুতর ভাবে আহত হওয়ায় তাঁকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করতে হয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়েই দাঁতন থানার পুলিশ ১১জন বিজেপি কর্মীকে তুলে নিয়ে আসে। বিজেপি অফিস প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। মাত্র ২জন কর্মী অফিসে ছিলেন। ওই সময় তৃণমূলের একটি জমায়েত বিজেপি অফিসের দিকে ধেয়ে যায় যার মধ্যে তরুন সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ ছিল। পুলিশ ওই দুই বিজেপি কর্মীকে দ্রুত পালাতে বলে কিন্তু তারা পালাতে পারেননি তার আগেই তৃণমূলের বাহিনী পার্টি অফিস ঘিরে ফেলে।পুলিশের বক্তব্য এই উন্মত্ত তৃনমূল কর্মীরা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছিল। পুলিশের নিষেধ অগ্রাহ্য করেই ঘিরে ফেলেছিল বিজেপি অফিস। একটা অংশ আবার পেছনের দিক দিয়ে অফিসটি ভাঙার পরিকল্পনায় ছিল। এদের সরাতে না পারলে ওই দুই বিজেপি কর্মী গণপিটুনির শিকার হয়ে যেত।
সোমবার যেহেতু সারা রাজ্য জুড়ে বিজেপির থানা অভিযান ছিল এবং দাঁতনে বিজেপি কিছুটা শক্তিশালী তাই অশান্তি এড়াতে এসডিপিও বেলদা সুমনকান্তি ঘোষ নিজে হাজির ছিলেন। আনা হয়েছিল কেশিয়াড়ী আইসিকে। ঘটনা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে আশঙ্কা করেই দুজনে কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলায় নামেন। বেধড়ক লাঠি চার্জ করা হয় জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে। বেশ কয়েকজন মার খান। হতভম্ব তৃনমুল কর্মীরা এলাকা ছেড়ে বাঁচেন। পুলিশ তৃনমূলকর্মীকে মারার ঘটনায় ইতিমধ্যে ৫বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে ঘটনার অভিঘাত সামলে তৃনমূল কর্মীরা বেলদা দাঁতন রাজ্য সড়ক অবরোধে সামিল হয়। অচল হয়ে পড়ে যান চলাচল। তৃনমূল কর্মীরা দাবি করেন এসডিপিওকে এই এলাকা থেকে ট্রান্সফার করতে হবে এবং পুলিশকে তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা ধরে অবরোধ চলে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম প্রধান। পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিক বিষয় খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়ায় অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে দিনের শেষে পুলিশের মার নিশ্চিত ভাবেই হতবাক করে দিয়েছে তৃনমূল কর্মীদের।