নিজস্ব সংবাদদাতা: নামেই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট আদতে আবর্জনার ডাঁই। গত তিনবছর ধরে খড়্গপুরের ভাষায় যাকে বলে ‘জিনা হারাম করে দেওয়া’ তেমনটাই অবস্থা হয়েছিল হিরাডিহি, তালবাগিচা, আরামবাটি এলাকার বাসিন্দাদের। প্রশাসনের আকুতি মেনেই অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও ওই এলাকার মানুষেরা রাজি হয়েছিলেন তাঁদের এলাকায় খড়গপুর পৌরসভার আবর্জনা ফেলতে দিতে। রাজি হয়েছিলেন কারন পৌরসভা বলেছিল, ‘আধুনিক ব্যবস্থা সম্মত সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন কিন্তু বাস্তবে শুরু হয়েছিল বিশাল বিশাল গর্ত করে আবর্জনা পুঁতে দেওয়া আর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া। খড়গপুর পৌরসভার দৈনিক ১০০টনের সেই আবর্জনার বিষ বাষ্প অতিষ্ঠ করে তুলেছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের যার প্রতিবাদে গ্রীন ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত ১৫ অক্টোবর নয়াদিল্লির সেই জাতীয় গ্ৰীন ট্রাইব্যুনাল এক নির্দেশে খড়গপুর পুরসভাকে জানিয়ে দিয়েছেন হিড়াডিহি এলাকা থেকে ডাম্পিং ইয়ার্ড সরিয়ে নিতে হবে এবং কঠিন বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনা আইন ভঙ্গের জন্য প্রতি মাসে সবমিলিয়ে তিন লক্ষ টাকা করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল আরও জানিয়েছে জাতীয় গ্ৰীন ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেওয়ার সময় স্পষ্ট জানিয়েছেন পরিবেশ দূষণ রোধের কোনও আগাম ছাড়পত্র না নিয়ে এই এলাকায় আবর্জনা জড়ো করে পুড়িয়ে ফেলার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছিল। যা কিনা কঠিন বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনা আইনের বিরোধী। ওই সমস্ত বর্জ্য পৌরসভাকে সরিয়ে নিতে হবে। আগামী ২৩ ডিসেম্বর এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী শুনানি হবে এবং। তার আগে এই দুটি নির্দেশ অনুযায়ী কাজ কতটা হয়েছে তার একটি রিপোর্ট পৌরসভাকে দিতে হবে।
ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হিরাডিহি সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি কতটা ন্যায্য ছিল তা স্বীকার করে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল অথচ এই দাবি করার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের রক্ত চোখ সহ্য করতে হয়েছে এমনকি তাঁদের হয়ে মুখ খোলার জন্য তাঁদের সহমর্মী মানুষজনদের শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতিদের দ্বারা নিগৃহীত ও হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। উল্লেখ্য কয়েকমাস আগেই হিরাডিহির বাসিন্দাদের এই দাবির পাশে দাঁড়িয়ে কিছু দুষ্কৃতিদের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী তালবাগিচার বাসিন্দা দুই প্রতিবাদী প্রদীপ ধর এবং অমল চ্যাটার্জী। পুলিশের সামনেই তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এই রায়ের কথা জানার পর সেই প্রদীপ ধর জানান, ” সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ভাঁওতাবাজি করে লুট করা হয়েছে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা। গত ৫বছর ধরে লুট চলেছে এই পৌরসভায়। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের নামে যেমন গ্রামের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে তেমনি শহরের একটার পর একটা জলাশয় বুজিয়ে শহরের পরিবেশের ১২টা বাজানো হয়েছে। বিশ্বাঘাতকতা করা হয়েছে শহরবাসীর সঙ্গে। গত ৫ বছরে এত পুকুর ও জলাশয় লুট হয়েছে যা আগে কোনোও দিন হয়নি। কিসের বিনিময়ে এই জলাভূমির চরিত্র বদল হয়েছে তা জানতে চেয়ে আমরাও পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হব।”
এদিকে হিরাডিহিতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ হলে শহরের এত আবর্জনা কোথায় ফেলা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় শহরবাসী। দিনের পর দিন শহরের বিভিন্ন অংশে আবর্জনা জমছে যার ৩০% কোনও মতে সরানো সম্ভব হচ্ছে। পুরসভার নিজস্ব আবর্জনার ফেলার জায়গাও নেই। শহরের বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা বর্তমান পুর প্রশাসক এবং বিধায়ক প্রদীপ সরকার জানিয়েছেন, “পরিবেশ আদালতের নিয়ম মেনেই কাজ হবে। আমরা ইতিমধ্যেই আধুনিক মেশিন, পুনর্বব্যবহার যোগ্য করে তোলার যন্ত্রপাতি আনিয়েছি। আর কোনও সমস্যা হবেনা।”