নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের ভাঙল পাইপলাইন আর এবার ক্ষতিগ্রস্ত মূল সরবরাহ পাইপটি ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানা এলাকার বালিচক সংলগ্ন প্রায় ১০টি গ্রামীন এলাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা। কোথাও একেবারেই জল যাচ্ছেনা তো কোথাও যা জল যাচ্ছে তা দিয়ে মিটছেনা এলাকার প্রয়োজন। আর বারংবার এই ভোগান্তির জন্য স্থানীয় প্রশাসনকেই দায়ি করছেন এলাকার মানুষ। তাঁদের দাবি উড়ালপুল নির্মানের মত একটি ভারি কাজ হতে চলেছে জানার পরও কাজ শুরুর আগে বিকল্প ব্যবস্থা বা পাইপ লাইন সরিয়ে না নেওয়াতেই এই দুর্ভোগ।
উল্লেখ্য এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি মিটিয়ে হাওড়া খড়গপুর শাখার বালিচক স্টেশনের অদূরেই রেল লাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে উড়ালপুল যা করতে গিয়েই বারংবার ঘটে চলেছে এই সমস্যা। এলাকার মানুষ জন জানিয়েছেন ১৯৯৩ সালে বাম জামানায় বৃহত্তর বালিচকে জল সরবরাহ করার জন্য দুটি পাম্পিং ষ্টেশন তৈরি হয়। রেল লাইনের দক্ষিণে নেতাজি ক্লাব এবং উত্তরে ডেবরা থানার কাছে এই দুটি পাম্পিং স্টেশন। এখান থেকে সরাসরি বোরিংয়ের মাধ্যমে জল উত্তোলন করে স্টেশনের উত্তর দিকে গোটগেড়িয়া, ভোগপুর, দলুচক, ক্যানেল বাজার এবং দক্ষিণ দিকে হাসিমপুর, ঘোলুই, গৌরাঙ্গচক প্রভৃতি এলাকায় জল সরবরাহ করা হয়। এক সময় প্রায় হাজার খানেক ট্যাপের সাহায্যে প্রায় দশ হাজার মানুষ এই সুবিধা পেতেন যা কিনা বর্তমানে ৫০০ থেকে ৬০০ ট্যাপে নেমে এসেছে। বৃহত্তর বালিচকে এটাই একমাত্র পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা যা গত ২৭ বছরে নতুন কোনও সংস্কার ছাড়াই চলে আসছে।
বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী জানিয়েছেন, ” বর্তমানে উড়ালপুল নির্মাণের জন্য রাস্তার ধারে যে পাম্প হাউস রয়েছে তার পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পানীয় জল সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে এলাকার কিছু মানুষ অসুবিধায় পড়েছেন। একথা ঠিক বালিচক উড়ালপুল নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর সাময়িকভাবে কিছু অসুবিধা হচ্ছে। এলাকাবাসী সেই অসুবিধা সহজেই মেনে নিয়েছেন। আমরা বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে নির্মাণকার্য শুরুর আগে থেকেই দাবি জানিয়েছিলাম পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। কিন্তু সেই আবেদনে কর্ণপাত করা হয়নি। তাই এই দুর্ভোগ। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, এই অবস্থায় যেসব মানুষ পানীয় জলের অভাবে কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁদের জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সাময়িকভাবে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”
জল সরবরাহ ব্যবস্থাপক এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ” মূল পাইপটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছু জায়গায় অল্প অল্প জল যাচ্ছে আবার অনেক জায়গায় যাচ্ছে না। পাইপ ফেটে যাওয়ার ফলে জলের প্রেশার কমে গিয়েছে। আমরা মঙ্গলবার নাগাদ মেরামতের কাজ করব।” যদিও স্থানীয় মানুষদের বক্তব্য এই মেরামত কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। পাম্পিং স্টেশন সহ পাইপলাইনটি স্থানান্তর না করলে এই একই সমস্যা চলতেই থাকবে। এই শীতের সময় ভূগর্ভস্থ জলে এমনিতেই টান পড়ছে।
ব্যক্তিগত টিউবকল, কুয়ো ইত্যাদিতে জল নামছে। এই অবস্থায় পানীয় জলের সরবরাহ অনিয়মিত হলে সঙ্কট আরও বাড়বে। তাঁদের মতে আদৌ স্থায়ীভাবে মেরামত সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেছে। পাম্প হাউজটি সরিয়ে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র করার উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এই ভোগান্তি চলতে থাকবে।
প্রশাসনিক সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে বিকল্প বোরিং সহ নতুন পাম্পিং স্টেশনের কাজ ইত্যাদি মধ্যেই শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে পাইপ লাইন নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হবে।