Homeএখন খবরহেঁসেলিয়ানা : অষ্টমীর রান্না ।। সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়

হেঁসেলিয়ানা : অষ্টমীর রান্না ।। সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মহাঅষ্টমীর মহাভোগ                                               সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পনিরপাসিন্দা-লুচি-ছানা আলুর দম                       এবং পানিফলের পায়েস

আজ মহাঅষ্টমী। আজকের দিনটার মাহাত্ম ই আলাদা। চারিদিকে যেমন গুরু গম্ভীর জমকালো পুজোর পরিবেশ, তেমনি চারিদিকে ঝলমলে খুশির রোশনাই।ধুপ ধূনোর গন্ধে, ভক্তির অঞ্জলিতে আজ মন পৌঁছে যায় মাতৃআরাধনায়।সারাবছরের আকুতি প্রকাশ পায় মাতৃ বন্দনায়। প্রতি বছরের মতো এবার ও মাকে অঞ্জলি নিবেদনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোনোর পর প্যান্ডেলে গিয়ে অঞ্জলি দেওয়ার সাধ এবারের মতো অপূর্ণ থেকে গেলো। বিষণ্ণ মন নিয়ে সকাল বেলায় স্নান সেরে, প্রতিবারের মতো লাল পাড় সাদা গরদ শাড়ী জড়িয়ে, ঘরেই শিউলি, বেলপাতা দিয়ে মা র ফটো তে অঞ্জলি নিবেদন করলাম।
প্রসাদ জল খেয়ে লেগে পড়লাম রান্না ঘরের কাজে। আজ অষ্টমী বরাবরের মতো অঞ্জলি দিয়ে বাড়ির প্রত্যেক টি সদস্য নিরামিষ ভোজন করে।তাই আজ বানিয়ে ফেললুম লুচির সাথে পনিরপাসিন্দা,ছানা আলুর দম ও পানিফলের পায়েস।
#পনির পাসিন্দা#
উপকরণ: মালাই পনির,আমূল ক্রিম বা দুধের সর,কাজু, কিসমিস, আলমন্ড, পেস্তা,
টোম্যাটো, আদা, কাঁচালঙ্কা,
তেজপাতা, লবঙ্গ, জায়ফল,সাজীরে, ছোট এলাচ,কাসুরি মেথি বা ধোনে পাতা।
জিরে গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো, গোলমরিচ গুঁড়ো,হলুদ, নুন, চিনি, ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার।

প্রণালী:পনিরকে একটু মোটা ও চৌকো পিস করে কাটতে হবে। তারপর পাউরুটি বা ব্রেড কে আমরা যেমন তিনকোনা বা ট্রাইঅ্যাঙ্গেল স্যাপে কেটে স্যান্ডউইচ করি, ঐভাবে কাটতে হবে।তিনকোনা পনিরকে একটু চিরে পকেট বানিয়ে নিতে হবে। পনিরের বাড়তি অংশ গুলি কে নিয়ে একটু নুন, লাললঙ্কা গুঁড়ো বা কাশ্মীরি লংকা, জিরে গুঁড়ো, গরমমশলা গুঁড়ো(1/4টেবিল চামচের), সামান্য জায়ফলগুঁড়ো,একমুঠো কিসমিস টুকরো, কাজুটুকরো, আলমন্ডটুকরো, পেস্তা টুকরো মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এটি পুর হিসেবে ব্যবহার করুন।চিরে নেওয়া পনির র মধ্যে সাবধানে পুর করে ঢুকিয়ে দিতে হবে। পুর ঢোকানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে পনির ফেটে না যায়।

একটি ছোট বাটিতে 1চামচ ময়দা ও একচিমটি কর্নফ্লাওয়ার, সামান্য নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে সামান্য জল দিয়ে গুলে নিন।ননস্টিক প্যান বা কড়াই এ রিফাইন তেল দিন। গরম হয়ে এলে, পুরভরা পনির গুলি একটা একটা করে, বাটিতে রাখা কর্নফ্লাওয়ার এ ডুবিয়ে তেলে ছাড়তে থাকুন। অল্প আঁচে 2/4মিনিট সাবধানে উল্টেপাল্টে ভাজুন।হালকা সোনালী ভাব এলে নাবিয়ে দিন।
পনির পাসিন্দার গ্রেভি বানানোর জন্য, মিক্সি তে 2/3টে টোম্যাটো, একইঞ্চি মতো আদা, 2টি কাঁচা লঙ্কা, সামান্য হলুদ, জিরে গুঁড়ো, 12টি মতো কাজু দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। কড়াই এ 2চামচ রিফাইন তেল দিয়ে তাতে 2টি তেজপাতা, সাজীরে, 4টে লবঙ্গ, 2টি ছোট এলাচ, একটুকরো দারচিনি ফোড়ন দিয়ে পেস্ট করে রাখা গ্রেভিটি কড়াই এ ঢেলে দিন।কম আঁচে কিছুক্ষন ফোটার পর তেল বেরিয়ে এলে, মিক্সি টে পরিশিষ্ট পেস্ট টি জল দিয়ে কড়াই এ দিন। পরিমাণমতো নুন দিন।ফুটতে থাকা গ্রেভি টা 1/2চামচ আমূল ফ্রেশক্রিম মেশান। ফ্রেশ ক্রিম না থাকলে দুধের সর দিতে পারেন, তাও না থাকলে জলে মেশানো দুধ দিন।গ্রেভি টি ফুটে ঘন হয়ে গেলে, ভেজে রাখা পনির গুলো ছাড়তে থাকুন. হালকা করে নাড়বেন, যাতে পুরভরা পনির গুলো ফেটে না যায়।এরপর একচামচ কাসুরি মেথি হাতে করে গুঁড়ো করে গ্রেভিতে মিশিয়ে দিন।কাসুরি মেথির পরিবর্তে ধোনে পাতা ও দিতে পারেন। 2মিনিট পর নামিয়ে দিন। বোল এ রেখে পরিবেশন করুন।

**ছানা-আলুরদম**
লুচির সাথে আলুর দম না হলে জমেনা, তবে মার ভোগে ছানা আলুর দম অতুলনীয়।
উপকরণ:
সেদ্ধ করা আলু,ছানা, রিফাইন তেল, তেজপাতা, গোটা জিরে, টোম্যাটো,কাজু বাটা, গোটা গরম মশলা,আদা, জিরে গুঁড়ো, লাললংকা গুঁড়ো, হলুদ, নুন।
প্রণালী:
সেদ্ধ করা আলু ভেজে তুলে নিন,কড়াই এ তেল দিন। তেজপাতা, গোটা জিরে, শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন।আদাবাটা দিন।টোম্যাটো কুচি দিন। হলুদ, জিরে গুঁড়ো,গুঁড়োলঙ্কা, নুন দিয়ে নাড়তে থাকুন.টোম্যাটো গলে এলে কাজুবাটা দিন।নাড়তে থাকুন যতক্ষন না তেল বের হয়। এরপর সেদ্ধ করা আলু দিন। একটু জল দিতে পারেন।কিছুক্ষন নাড়াচাড়ার পর মাখো মাখো হলে ছানা গ্রেড করে কড়াই এ দিন। ছানা না হলে পনির দিলেও চলবে।শেষে গুঁড়ো গরম মশলা দিয়ে নাবিয়ে দিন। তৈরী হয়ে গেলো ছানা আলুর দম.. যা লুচির সঙ্গে অনবদ্য।
ঘি মইন দিয়ে ময়দা মেখে গাওয়া ঘি তে লুচি ভেজে নিন। র লুচি ভাজার সঙ্গে বেগুন ভাজা না হলে জমেনা। তাই ঝটপট বেগুন ভেজে নিন।
শেষ পাতে মিষ্টি না হলে ভোগ বলুন, র খাওয়াদাওয়া বলুন.. পোসাইনা। তাই আসুন শেষ পাতে বানিয়ে ফেলি কিছু অন্যরকম মিষ্টি পায়েস।

**পানিফলের পায়েস**
সিমুই র পায়েস, গাজরের হালুয়া র পরিবর্তে আজ আমরা বানাবো পানিফলের পায়েস।
উপকরণ:
পানিফল(500গ্রাম), দুধ(1প্যাকেট), চিনি, খোয়া ক্ষীর, কাজু, কিসমিস, আমন্ড।
প্রণালী:
ঠাকুর পুজোর থলি থেকে কিছু পানিফল নিয়ে নিলাম। পরিষ্কার করে ধুয়ে, খোসা ছাড়িয়ে পানিফল গুলো কে মিহি করে গ্রেড করে নেবো, বা মিক্সি তে পেস্ট করে নেবো। কড়াই এ দুধ ফুটতে দিলাম।দুধ একটু ঘন হলে, তাতে পানিফলের পেস্ট,দিয়ে দিন।একটু পরে কাজু পেস্ট, কিসমিস র টুকরো, আমন্ড র টুকরো দিয়ে দিন। পরিমান মতো চিনি দিন। খোয়া ক্ষীর গ্রেড করে মিশিয়ে দিন। এলাচ গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে দিন. ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।
লুচি, পনিরপসন্দ,ছানা-আলুর দম, বেগুনভাজা, পানিফলের পায়েস দিয়ে মআমরা অষ্টমীর ভোগ তৈরী করে মা কে নিবেদন করলাম. আশাকরি,মায়ের প্রাসাদ পাওয়া ভক্তদের তৃপ্ত হবেন। সবাই কে মহা অষ্টমীর শুভেচ্ছা রইল।সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।।

RELATED ARTICLES

Most Popular