অভিনন্দন রানা: করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ট্রেন চালু হলে যাঁরা ফের আগের মতই স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে হাওড়া যাতায়ত করবেন ভাবছেন তাঁদের সুখে বালি ফেলছেন রেল কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি ফার্স্ট প্যাসেঞ্জারকে রাতারাতি এক্সপ্রেস ট্রেনে উত্তীর্ণ করে কয়েকগুণ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে রেল কর্তৃপক্ষ যার মধ্যে খড়গপুর, ভদ্রক ও আদ্রা হাওড়া শাখার বেশ কয়েকটা ট্রেন।
দক্ষিণ পূর্ব রেলের মেদিনীপুর, খড়গপুর, বেলদা এইসব স্টেশন ব্যবহারকারী মানুষজনের বেশিরভাগই সকালে কলকাতা বা হাওড়া যেতে হলে শিরোমনি প্যাসেঞ্জার বা বাঘাযতীন প্যাসেঞ্জার ব্যবহার করতেন। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মানুষ রাতের যাত্রায় চক্রধরপুর/বোকারো প্যাসেঞ্জার। কারন একটাই, লোকালের ভাড়া লাগলেও এগুলি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার হওয়ায় খড়গপুর হাওড়া শাখায় এই ট্রেনগুলির স্টপেজ অন্যান্য লোকাল ট্রেনের তুলনায় বেশ কম এবং সময়ও তুলনা মুলক অনেকটাই কম লাগে। কিন্তু এই সুখের দিন আর থাকছেনা। এইসব ট্রেনে এবার চড়তে গেলে দিতে হবে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া। কারন ওপরে উল্লিখিত তিনটি ট্রেনকেই নতুন সময় সরণিতে এক্সপ্রেস করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
করোনার জন্য দেশজুড়ে ট্রেন পরিষেবা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি তা সামান্য শুরু হলেও এখনো লোকাল ট্রেনের চাকা গড়ায়নি। তারই মধ্যে পয়লা ডিসেম্বর রেল নতুন সময় সরনী ঘোষণা করতে চলেছে। তার সেই সময় সারনীতেই এই ধাক্কা। এক ধাক্কায় প্রচুর লোকাল ট্রেনকে এক্সপ্রেসে উন্নীত করতে চলেছে রেল। আর তার মধ্যে একাধিক জনপ্রিয় ফাস্ট প্যাসেঞ্জার এমনকি সাধারণ প্যাসেঞ্জার ট্রেনও রয়েছে। বিশেষ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়গপুর শাখায় খড়গপুর হাতিয়া, খড়গপুর রাঁচি, খড়গপুর খুরদা রোড, খড়গপুর আসানসোল, খড়গপুর ঝাড়গ্রাম ধানবাদ, আদ্রা হাওড়া, চক্রধরপুর/ বোকারো হাওড়া, হাওড়া ঘাটশিলা এবং সাঁতরাগাছি পুরীর মতো একাধিক ট্রেন রয়েছে। এতদিন মূলত কম স্টপেজ এবং লোকালের ভাড়ার জন্য এই ট্রেনগুলি যাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। রেলের সিদ্ধান্তের জেরে যাত্রীভাড়া বাড়বে ফলে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়বেন।
রেল সূত্রের খবর এই ট্রেনগুলির প্রতিটিই গড়ে লোকাল ট্রেনের চেয়ে অনেকটাই বেশি গতিতে চলে। রেলের হিসেবে গড়ে ৩৬ কিমি প্রতি ঘন্টার বেশি গতি হলেই ট্রেনগুলিকে এক্সপ্রেসের তকমা দেওয়া হয়। এই ট্রেনগুলির প্রায় সব গুলিই ওই গতির চেয়ে বেশি গতিতে চলে। ফলে রেল সেগুলিকে এক্সপ্রেসে উন্নীত করতে চায়। কিন্তু সাধারন মানুষ কতটা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান সেটা সময়ই বলবে। কারন ভাড়া বাড়লেও স্টপেজ কমছে না প্রায়। ফলে এখনই (লকডাউনের আগে) যেসব ট্রেন প্রায় নিয়ম করে লেট করে, সেই সব ট্রেনে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে মানুষ কতটা চাপবেন সেটা সময়ই বলবে।
এই প্রসঙ্গে একজন নিত্য যাত্রী জানান, “এমনিতেই রেল লোকসানে চলছে, তাই এইসব গুরুত্বপূর্ন ট্রেনগুলিকে ছাঁটাই করার প্রথম ধাপ এটি। প্রথমে ভাড়া বাড়িয়ে এক্সপ্রেস করা হবে, তারপর যাত্রী না হওয়ার অজুহাতে বন্ধ করা হবে। ” তাঁর অভিযোগ অবশ্য ঠুনকো নয়। বছরখানেক আগেই শিয়ালদহ মুজফফরপুর প্যাসেঞ্জারকে সিতামারী পর্যন্ত বাড়িয়ে এক্সপ্রেস করা হয়। যদিও ভাড়া একই ছিল। ডিসেম্বরে আসতে চলা সময় সারণিতে সেই ট্রেনটিকেও বাদ দেওয়া হয়েছে টিকিট বিক্রি না হওয়ার অজুহাতে।