নিজস্ব সংবাদদাতা: মঙ্গলবার সাত সকালেই অবরোধের মুখে পড়ল IIT-Kharagpur. কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের লক ডাউন নীতি না মেনে নিজের মত করে লক-ডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন IIT-Kharagpur কর্তৃপক্ষ। আর সেই খাম খেয়ালিপনার মাশুল দিতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত দোকানদার, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সহ অন্যান্য অনেক মানুষকে এমনই অভিযোগ তুলে IIT ক্যাম্পাসে ঢোকার প্রধান এবং বর্তমানে একমাত্র ফটকের সামনে ‘গেট জ্যাম’ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছেন ভুক্তভোগীরা যার সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ববৃন্দ। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা শুরু অবধি ২ ঘন্টা ধরে চলা অবরোধের ফলে ক্যাম্পাসে ঢোকার কিংবা বেরুনোর পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বাইরের জগৎ থেকে সড়ক যোগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস।
অবরোধ কারিদের বক্তব্য, ‘আনলক ইন্ডিয়া পর্বেও IIT-Kharagpur কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে প্রবেশের চারটি ফটকের তিনটি ফটকই বন্ধ রেখেছেন, এরফলে বিভিন্ন স্তরের সমস্যা তৈরি হয়েছে। যাঁদের ক্যাম্পাসের দক্ষিন (প্রেমবাজার ইত্যাদি)দিকে অবস্থান তাঁদের ক্যাম্পাসে ঢোকার প্রয়োজন হচ্ছে তাঁদের ৩ কিলোমিটারেরও বেশি ঘুর পথে ক্যাম্পাসে ঢুকতে হচ্ছে। সিপিআই নেতা আয়ুব আলি জানিয়েছেন, ” ক্যাম্পাসের দক্ষিন অংশে বসবাস করেন যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা বা দোকানদারেরা তাঁদের দোকান প্রতিদিনই ৬কিলোমিটার রাস্তা বাড়তি ঘুরতে হচ্ছে। যে বৃদ্ধের পেনশন তোলার প্রয়োজন বা যাঁদের আ্যকাউনট ক্যাম্পাসের ভেতরে রয়েছে তাঁদের কী যন্ত্রনা দায়ক পরিস্থিতি চলছে তা তাঁরাই জানেন।”
শহরের তৃনমূল নেতা জহরলাল পাল জানিয়েছেন,”তুঘলকি কারবার চালাচ্ছেন IIT-Kharagpur কর্তৃপক্ষ। যেখানে কেন্দ্র সরকারের স্পষ্ট ঘোষণা আছে যে কেন্দ্রের নিয়মের বাইরে গিয়ে আলাদা করে লকডাউন ঘোষনা করা যাবেনা সেখানে কী করে কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত দোকানদের বেলা ২টার পর দোকান বন্ধ করে দিতে বলছেন? একজন দোকানদার কী এক বেলা দোকান করার জন্য বসে থাকবেন?”
উল্লেখ্য করোনা পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে IIT-Kharagpur কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে এবং ক্যাম্পাসের মধ্যে ব্যবসাদারদের জন্য কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ক্যাম্পাসের চারটি গেটের তিনটি গেট বন্ধ করে দিয়ে মাত্র একটি গেট খোলা রেখেছে। কর্তৃপক্ষ নিয়ম করেছে যে বেলা ২টার পর ক্যাম্পাসের ভেতরে দোকান খোলা রাখা যাবেনা।
খড়গপুর শহরের সিপিএম নেতা পূর্ণেন্দু পানিগ্রাহী বলেন, ” আনলক পর্বে দোকান খোলার জন্য একজন সামান্য চায়ের দোকানদারের লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁরা ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা আবাসিকদের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকেন কিন্তু IIT কর্তৃপক্ষ মনে করেন যে তাঁরাই দয়া করছেন দোকানদারদের। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে এই দোকানদারদের শুধু ক্যাম্পাসের আবাসিকদের ওপর নির্ভর করে ব্যবসায় লাভ হয়না। ক্যাম্পাসের বাইরে এক বিরাট অংশের ক্রেতা রয়েছেন যাঁদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়ে দোকানদারদের ভাতে মারছে কর্তৃপক্ষ।একে সীমিত ক্রেতা তায় এক বেলার দোকান। কার্যত দোকানদার এই লক ডাউন ও করোনার বাজারের প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকে দোকান বন্ধ রাখলেই বেঁচে যান কিন্তু ক্ষতি স্বীকার করেও তাঁরা দোকান খুলছেন কারন আবাসিকরা এঁদের ওপর নির্ভরশীল। আর কর্তৃপক্ষ সেই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন। আমরা দাবি করছি ওই দোকাদারের লাইসেন্স ফিরিয়ে দিতে হবে। যাঁরা একবেলা দোকান করছেন তাঁদের ভাড়া অর্ধেক নিতে হবে। যাঁরা দোকান করতে পারেননি তাঁদের ভাড়া মুকুব করতে হবে এবং ক্যাম্পাসের সমস্ত প্রবেশ পথ খুলে দিতে হবে। ” তৃণমূলের অন্য আরেকজন নেতা দেবাশিস চৌধুরী দাবি করেছেন, IIT কর্তৃপক্ষর এই ঘেরাটোপের সুযোগ নিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদের সরিয়ে কম মজুরিতে অন্য শ্রমিক নিয়ে এসে কাজ করানোর চক্রান্ত চলছে যাতে ভিন রাজ্যের ঠিকাদারের দল সামিল হয়েছেন। এই চক্রান্ত যে কোনোও মূল্যে ব্যর্থ করা হবে বলে তিনি জানিয়ে দেন।
বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বলা সম্ভব হয়নি IIT-Kharagpur কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানের রেজিষ্টার ভৃগুনাথ সিংয়ের যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি। হোয়াটস্যাপেরও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে IIT-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ” কেন্দ্রের যাবতীয় নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। IIT তার প্রতিটি পদক্ষেপের ক্ষেত্রেই মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। সাম্প্রতিক কালে বাড়তি সংক্রমনের মুখে দাঁড়িয়ে কিছু নতুন অবস্থান নিতে হয়েছিল কিন্তু সেটাও যথাযথ ভাবে উপযুক্ত জায়গাকে জানানো হয়েছে। IIT যা করছে তা ক্যাম্পাসের নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েই করছে।” অন্যদিকে অবরোধ কারীরা জানিয়েছেন, আগামী ৫ অক্টোবর গন কনভেনশনের মধ্যে দিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবেন তাঁরা।