✍️কলমে: আশিস মিশ্র
(পর্ব–১৮)
আমাদেরই বন্ধু অলকেশ বেতাল সহ তাঁদের নাটকের দল ‘ লক্ষ্যা পদাতিক’ -এর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে একটি নাটক দেখতে যাবো বেরুচ্ছি, অমনি এক বন্ধুর টেলিফোন এলো। হ্যালো আশিস, আজকে পোস্ট দিয়েছি দেখো। বললাম, কী নিয়ে। সে বললো, দারুণ একটা কবিতা। বিদ্যাসাগরকে নিয়ে। পড়ে একটা কমেন্ট দিও। পারলে শেয়ার করো বন্ধুদের।
আমি বললাম, পূর্ণেন্দু পত্রী ও মাইকেল মধুসূদন দত্তর কবিতা দুটি পড়েছো? সে বললো, না। বললাম, পড়ে নিও।
নাটক দেখতে যাওয়ার মুডটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কেন জানি না। না, আর যাবো না। ভাবছি কাল রবিবারের হলুদ আড্ডায় তো সেই আলোচনার বিষয় ঈশ্বর। মানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে আলোচনা হবে,এবং তার সঙ্গে ঈশ্বরতত্ত্ব। ঈশ্বর বলে কি কেউ আছে, ইত্যাদি। এখন সেই সব নিয়ে একটু পড়াশোনা করি। ভাবতে ভাবতে আবার একটি ফোন, হ্যালো আশিসদা, ইউটিউবে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে নিয়ে একটা নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেছি। একটু দেখো। লাইক দিও। পারলে সাবস্ক্রাইব করে দিও। বললাম, আচ্ছা। করে দিচ্ছি।
না, এবার ফোনটা বোধহয় সাইলেন্ট করার সময় হলো। পড়বার সময় না জানি এমন আরও কেউ কেউ বলতে পারে, একটা হাসির ছড়া ছেড়েছি। একটু দেখে নিও।
পড়েছি, এর আগেও বার দশেক ওই অশংটি পড়েছি। মানে ‘ কথামৃত’। যে অংশে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেখা করতে এলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে। এবং তাঁদের চিরন্তন কথপোকথন। ওইটুকু উপলব্ধি করতে পারলে ঠিক মতো কালকের আড্ডায় অন্তত আলোচনাটা জমিয়ে দেওয়া যাবে। মনে হলো এই দুই মহাপুরুষকে এখনো আত্মঘাতী বাঙালি ঠিক মতো বুঝলো না। বুঝতে পারলে মৃত্যুর পর তাঁদের নিয়ে এতো কুৎসা করতো না। মনে হয় সেই সব কুৎসাকারীদের ঈশ্বরের জুতো দিয়ে পেটানো উচিত।
যখন মেইনস্ট্রিম মিডিয়া কৃষক আন্দোলনের ঢেউ বাদ দিয়ে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উদযাপনকে বাদ দিয়ে দীপিকা পাড়ুকোন ও মাদক নিয়ে মেতে থাকে, তখন ওই ফেসবুক আর অনলাইন পোর্টালগুলি হয়ে ওঠে আমাদের প্রধান হাতিয়ার। তাই বন্ধুদের পোস্ট পড়বার জন্য হাজার অনুরোধে বিরক্ত বোধ এলেও পুনরায় সেই পোস্ট পড়তে হয় বারবার। কারণ মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে এখন যে অনলাইন মাধ্যমগুলি, তাকে কোটি কোটি মানুষের চোখ থেকে সরানো মুশকিল। আর ওই চ্যানেলে বসে বাঁদর নাচ নাচলেও কিছু কাজ হবে না বন্ধু। নাচের আগেই মঞ্চ ভেঙে পড়ে গেছেন ধরে নিন। একশ্রেণির মানুষকে ওইসব মাদক মেশানো খবর খাওয়ানো যায়, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে খাওয়ানো এখন মুশকিল। এইটুকু বললাম সাজুগুজু করা চ্যানেল বন্ধুদের।
(চলবে)