নরেশ জানা : করোনা আক্রান্তদের বিশেষ করে অধিক উপসর্গ যাঁদের আছে তাঁদের ফোনে বেশি কথা বলা উচিৎ নয়।এই কথাটা বারবার বলা সত্ত্বেও শোনেননি যুবক। ফলে অত্যধিক আনরেস্ট বা বিশ্রাম হীন হয়ে পড়েছিলেন এক যুবক। পরিনতিতে হার্ট আ্যটাক হয়ে মৃত্যু হয়েছে সবংয়ের এক যুবকের। প্রাথমিকভাবে এমনটাই মনে করছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। বুধবার মধ্য রাতে শালবনী কোভিড হাসপাতালে সবং থানার এক ৪০ বছরের যুবকের মৃত্যু এরকমই একটি নতুন তত্ত্বকে সামনে এনেছে।
এমনিতেই বিভ্রান্তির রিপোর্ট ছিল। মঙ্গলবার বিকাল ৫টা নাগাদ সবং গ্রামীন হাসপাতালে আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ আসার পরই তড়িঘড়ি শালবনী হাসপাতালে পাঠানো হয় ওই যুবককে। তার আগের দিন অর্থাৎ সোমবার এই হাসপাতাল থেকেই আরটি/পিসিআর পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল তাঁর। ঘটনাক্রমে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রিপোর্ট আসে ওই যুবকের। দেখা যায় সেই রিপোর্ট নেগেটিভ!
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গেছে সবং গ্রাম পঞ্চায়েতের গোঁড়া গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবক মেদিনীপুর শহরে একটি রান্নার গ্যাস সরবরাহকারী এজেন্সিতে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখানেই জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর তিনি গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। দিন পাঁচেক জ্বর নিয়েই বাড়িতে ছিলেন। এরপর শরীর অত্যন্ত খারাপ হলে পরিবারের লোকেরা তাঁকে সবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুকুমার বারিক জানান, “সোমবার ওনাকে সবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছিল। ওই দিনই সোয়াব নেওয়া হয় হাসপাতালে। পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি ল্যাবে। মঙ্গলবার অবস্থার অবনতি হয়। পরিবার চাইছিল দ্রুত শালবনীতে পাঠাতে কিন্তু করোনা রিপোর্ট না আসায় পাঠানো যাচ্ছিলনা। এরপর হাসপাতালে তাঁর আ্যন্টিজেন পজেটিভ আসে। এরপরই আমরা একটি অক্সিজেন যুক্ত আ্যম্বুলেন্স করে তাঁকে শালবনী হাসপাতালে পাঠাই। সেখানে ভর্তি করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যাতেই তাঁর আরটি/পিসিআর রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। ভালই ছিলেন তিনি এরপরই বুধবার মধ্য রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।”
পরিবার সূত্রে জানা গেছে আরটি/পিসিআর রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরই তাঁরা চেয়েছিলেন শালবনী থেকে বের করে অন্য কোনও নার্সিং হোমে নিয়ে যেতে কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর ওই যুবককে বুধবার একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় আর তারপরই মৃত্যু হয় তাঁর। শালবনী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ইঞ্জেকশন তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে বলেছে নিয়মমতই সমস্ত রোগিকে যে ওষুধ, ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় এক্ষেত্রেও তাই দেওয়া হয়েছিল। হাইপার টেনশনের রোগি ছিলেন ওই যুবক। সর্বক্ষন ফোনে কথা বলে যাচ্ছিলেন। ওনাকে বারংবার নিষেধ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল এত কথা বলা কোভিড পেশেন্টের জন্য ভাল নয়। বিশ্রাম দরকার তাঁর কিন্তু কথা শোনেননি তিনি। কখনও ফোন আবার কখনও ভিডিও কল করেই গেছেন। সম্ভবত পর্যাপ্ত বিশ্রামহীন হওয়ার ফলে কার্ডিয়াক ফেলিওর বা হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
জানা গেছে আ্যন্টিজেন পজিটিভ মানে তা পজেটিভ ধরেই তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হয়। রুগিকে HDU (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) তে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অক্সিজেন দেওয়াই ছিল। ‘আরটি/পিসিআর রিপোর্ট পজেটিভ আসার পরই তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং বাড়ির লোকেদের বারংবার ফোন করেন তিনি। যোগাযোগ করতে থাকেন বিভিন্ন নেতাদেরও। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকেও দু’একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বকে দিয়ে চাপও দেওয়া হয়। কিন্তু রোগির যেহেতু আ্যন্টিজেন পজিটিভ ছিল তাই কর্তৃপক্ষ ছাড়েননি। এরপরই বুধবারের রাতের ঘটনা।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ”আরটি/পিসিআর রিপোর্টে কোনও সমস্যা হতে পারে। হয়ত নমুনা সংগ্ৰহ করতে গিয়ে পর্যাপ্ত নমুনা করতে ভুল হয়েছে যে কারনে নেগেটিভ এসেছে কিন্তু যেহেতু আ্যন্টিজেন পজিটিভ ছিল তাই পজেটিভ ধরেই চিকিৎসা চলছিল ওনার। HDU তেই রেখেছিলাম আমরা কিন্তু শেষ অবধি মারা যান উনি। এক্ষেত্রে উত্তেজনা বা হাইপার টেনশন একটা বড় ফ্যাক্টর। তার ওপর ক্রমাগত ফোনে কথা বলাটা কালই হয়েছে ওনার।”