অসীম ভুঁইয়া: “সব পত্রিকাই লিটল ম্যাগাজিন নয়, অবশ্য সব লিটল ম্যাগাজিনই পত্রিকা।”
লিটল ম্যাগের প্রকৃত সম্পাদক যখন একজন সফল কবি হন, অথবা একজন প্রকৃত কবি যখন একজন সফল সম্পাদক হয়ে ওঠেন তখন তো তার ‘ অন্তর বাহির ‘ আত্তীকরণের মধ্য দিয়ে গভীর আত্মকথনের প্রসব যন্ত্রণায় নাস্তিকতা ও নিরপেক্ষতার জরায়ু বেয়ে নেমে আসে আত্মজা…
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ঠিকই ধরেছেন, কবি ও সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠীর কথাই হচ্ছে। লিটল ম্যাগাজিনের অন্তর-বাহির পরিক্রমা করতে গিয়ে তিনি যেমন তাঁর দর্শনকে খুঁজে বের করেছেন, তেমনি দর্শন, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের ত্রিবেণী সূত্রকে একই মলাটে ধরতে শিখিয়েছেন। লিটল ম্যাগাজিন শুধু যে নিছক ‘লিটল ‘ কথার মধ্যে আবদ্ধ নয়, তার নিজস্ব চরিত্র রয়েছে, বৃহৎ মানব ও দেশীয় তথা আন্তর্জাতিক সত্তাকে যে সে বিশ্লেষণ করতে সমর্থ ,অর্থনীতিকেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে বদ্ধপরিকর, চরিত্র গঠনের দিক নির্দেশিকা দিতেও সে যে সাহসী তাও বুঝিয়েছেন তিনি গভীর দর্শন উপলব্ধির মধ্য দিয়েই ।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
লিটল ম্যাগাজিনের লেখক শুধু নয় হতে হবে কর্মী, সাহিত্যকর্মী। উদার মনন তথা ব্যাকরণ নিষ্ঠ সচেতনতা নিয়ে করতে হবে লিটল ম্যাগাজিন, যা শুধু সময়নির্ভর হবে না আবার সময়কে অস্বীকারও করবে না। প্রকৃত সাহিত্যিকদের অনেকেই উঠে আসে কিন্তু লিটল ম্যাগাজিনের হাত ধরেই। বাণিজ্যিক পত্রিকার সঙ্গে তার তেমন কোনো বিরোধ নেই তবু সে স্বতন্ত্র নিজ গুনে, নিজের চারিত্রিক বিশ্লেষণের মানদণ্ডে। সে সরকারি পুরস্কারে বিশ্বাসী নয়, অগণিত সাহিত্যিক ও সাহিত্যপ্রেমীর মননশীল ও ভালোবাসার পুরস্কারে বিশ্বাসী। নিরপেক্ষভাবে সে অনায়াসে অকুতোভয় যেমন সরকারের চোখে আঙ্গুল দিতে পারে, তেমনি আবার হৃদয় মথিত সুধারসেও তাকে পরিপূর্ণতার পথ দেখাতেও পারে । ঋত্বিকের আক্ষেপ- ” সরকার যদি লিটল ম্যাগাজিনের প্রতি হৃদয়বান হয় তবে অনেক কিছু করতে পারে। মুদ্রণ সরঞ্জামের উপর ট্যাক্স ছাড় দেওয়া যায়। ইত্যাদি। এভাবে কেন সরকার ভাবতে পারে না?”
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ঋত্বিক বলতে চেয়েছেন, লিটল ম্যাগাজিন শুধু করলেই হবে না, তাকে সংরক্ষণেরও সুব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে সম্পাদকের মৃত্যুতে তার অগাধ সম্পাদনার মহা সমুদ্র শুকিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ সম্পাদনা ও সংরক্ষণের দ্বৈত সাজুজ্যেই একটি পত্রিকা কালজয়ী হতে পারে। এককথায় বইটিতে লিটল ম্যাগাজিনের অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, লেখক-পাঠক সম্পর্ক সহ নানান বিষয় সার্বিকভাবে ধরা পড়েছে। সবশেষে বলি কবি ও সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠীর এই বইটি লিটল ম্যাগাজিনের বিশ্লেষণ ও অভিনব চিন্তন তথা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী ও চিরন্তন সৃষ্টি প্রবাহ…
————————————-
সপ্তর্ষি প্রকাশন। কলকাতা বইমেলা ২০২০, স্টল ৩১৯