রাজস্থানের রকমারি লিপিকা মুখার্জী
মার্চ মাসে মেয়ের কাছে কটাদিন থাকবো বলে পাড়ি দিয়েছিলুম রাজস্থানের উদয়পুর। সদ্য স্কুলে জয়েন করেছে, তাই ভাবলাম, একটু গুছিয়ে দিয়ে আসি। উদয়পুর থেকে 200কিলোমিটার দূরে লেক ও পাহাড়ে ঘেরা ছিমছাম মফঃস্বল টিতে পৌঁছে মন জুড়িয়ে গেলো। কোম্পানির বাউন্ডারি ঘেরা ক্যাম্পাস এ স্কুল ও কোয়ার্টারে প্রথম কটাদিন বেশ আন্দন্দেই কেটে গেলো। কিন্তু হঠাৎ করে covid -19র কারণে স্কুল, অফিস সব বন্ধ হয়ে গেলো। ভাঁড়ারে পড়লো টান। কারণ মেয়ে উইক এন্ড এ উদয়পুর গেয়ে বাজার করে। পড়লাম মহা মুশকিলে। বাড়িতে সম্বল শুধুই আটা, সুজি, র ডাল। সব্জি বলতে কটা টমেটো। তাই কটা দিন মেয়ের সাহায্যে শেখা রাজস্থানের বিখ্যাত ডালবাটি চূড়মা, আর টমেটো পিউরি সেও দিয়ে রুটি খেয়েই দিন কাটালাম। নতুন রেশন না আসা অবধি ভালোই কাটলো। আসুন, আপনারাও ট্রাই করতে পারেন ঘরে বসে রাজস্থানি খাবার, “ডাল -বাটি -চূড়মা। ”
ডাল বাটি চূড়মা
উপকরণ : ডালের জন্য, ছোলার ডাল বা অড়হর ডাল, হিং,গোটা জিরে, রসুন বাটা,লাললঙ্কা, হলুদগুঁড়ো,নুন।
বাটির জন্য লাগবে, আটা, সুজি, ঘি, গুঁড়ো দুধ।
প্রণালী :গ্যাস ওভেন অন করে কুকারে 2বাটি জল গরম করতে দেবো,জলে 1চামচ রিফাইন অয়েল দিয়ে দিলাম। একবাটি ছোলার ডাল (চাইলে অড়হর ডাল মিশিয়ে নিতে পারেন )ভাল করে ধুয়ে ফুটন্ত গরম জলে ফেলে দিলাম। সঙ্গে ছোট চামচের 1চামচ করে হলুদ গুঁড়ো, লাল গুঁড়ো লংকা, পরিমান মতো নুন ও খানিকটা রসুন বাটা দিয়ে কুকারে র ঢাকা বন্ধ করে দিলাম। ডাল সেদ্ধ হয়ে গেলে একটি ছোট ফ্রাই প্যান বা বড়ো হাতায় তেল গরম করে তাতে হিং, গোটা জিরে ফোড়ন দিয়ে, গোটা লাল লংকা, কুচোনো কাঁচা লংকা দিয়ে দেবো। এই ফোড়ন তেল বা তড়কা টি সেদ্ধ করা ডালে ওপর থেকে ছড়িয়ে ডাল ঢাকা দিয়ে রেখে দেবো। ডাল রেডি।
এরপর আমরা বাটি -চূড়মা বানাবো। বাটি র চূড়মা র জন্য 2বার করে আটা নেবো। প্রথমবার চূড়মা র জন্য এক কাপ আটা, 1/4সুজি, এক চামচ ঘি নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নেবো, তারপর একটু করে জল দিয়ে মেখে একটু শক্ত ডু বানাবো। ডু রেডি হয়ে গেলে দু টুকরো করে 2টি বড়ো আকারের গোলা বানিয়ে রেখে দেবো। এটা হলো চুরমার জন্য।
দ্বিতীয় বার, আমরা এবার আটা নেবো বাটি বানানোর জন্য। দেড় কাপ আটা, হাফ কাপ সুজি, হাফ কাপ গুঁড়ো দুধ ও একচামচ ঘি নিয়ে মিশ্রণ টি ভালো করে মাখিয়ে নেবো। এরপর জল দিয়ে আটা টি মেখে নেবো। খেয়াল রাখতে হবে যে, কখনোই জল বেশি দিয়ে আটা নরম করে দেওয়া যাবেনা। মাখা হবে একটু শক্ত করে। মেখে নিয়ে আটা আমরা 5টুকরো করে গোলগোল বাটি র মতো করে গড়ে নেবো। যাইহোক, এরপর আমরা একটি প্রেসার কুকারে ঘি দিয়ে গরম করে চূড়মা র 2টি বড়ো গোলা, আর বাটি র 5টি গোলা, কুকারে গরম হওয়া ঘি তে ভাজতে দেবো। কুকারে র সিটি খুলে নিয়ে, ঢাকা টি বন্ধ করে দেবো। খানিক ক্ষণ ছাড়া ছাড়া আমরা ঢাকা খুলে বাটি ও চুরমার গোলাপ গুলো উল্টে দেবো, যাতে করে গোলার চারপাশ টা ভালোভাবে ঘি তে ভাজা হয়। প্রয়োজনে আরো ঘি লাগলে কুকারে দিতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে একটি প্লেটে আটার গোলা ভাজা বা বাটি ও চূড়মা গুলি তুলে রাখবো।
চূড়মা র বড়ো 2টি গোলা ঠান্ডা হলে, হাতে করে ভেঙে গুঁড়ো করে নেবো। এক কাপ গুঁড়ো চিনি ও ঘি তাতে মিশিয়ে গোল গোল আকারে চূড়মা বানিয়ে নিলাম । কেও চাইলে গুঁড়ো রাখতে পারেন। যদি বাড়িতে প্রচুর ঘি, কাজু, আমন্ড থাকে তো তাহলে গুঁড়ো চূড়মা র সাথে এগুলো মিশিয়ে বাটিতে সাজিয়ে রেখে চামচে করে তুলে সার্ভ করবেন।
একটি কাঁচের বাটিতে ঘি গরম করে রাখুন। গরম গরম বাটি ঘি তে ডুবিয়া পরিবেশন করুন।
এই অসাধারণ রাজস্থানি খাবার টি খুব সহজে বানানো হলেও খেতে খুব ভারী। একটি বাটি ঘি তে ডুবিয়ে খেলেই পেট ভারী হয়ে যায়। সঙ্গে এবার ডাল -চূড়মা। কাজেই ঘরে আর কিছু খাবার না থাকলেও 1/2টি বাটি আর ডাল -চূড়মা খেয়ে আমাদের মা মেয়ের কোনো সমস্যা ই হয়নি। উল্টে নিজেদের রাজস্থানি খাবারে অভস্ত্য হয়ে ভালোই লাগছিলো। কাজেই আপনারাও বাংলার বুকে, ঘরে বসে, রাজস্থানি খাবারের স্বাদ নিতে সহজেই বানিয়ে নিন বিখ্যাত রাজস্থানি ফুড “ডাল -বাটি -চূড়মা “।
টমেটো সেও
রাজস্থানের র একটি চটপটে রান্না, রুটি সহযোগে খাওয়া জন্য আমাদের লাগবে কয়েকটি টমেটো, রসুন, হিং, গোটা জিরে, শুকনো লংকা, নুন, সামান্য হলুদ আর লাগবে সেও বা সিরিভাজা।
প্রণালী :3/4টি টোম্যাটো, কয়েকটি রসুন, লংকা দিয়ে মিক্সি তে ঘুরিয়ে পেস্ট করে নিন। তারপর একটি ফ্রাই প্যান এ রিফাইনতেল দিয়ে, তাতে হিং, গোটা জিরে, গোটা লাল লংকা, একটি টোম্যাটো কুচো, সামান্য হলুদ দিয়ে হালকা ফ্র্যাই করে নেবো। পেস্ট করে রাখা টোম্যাটো পিউরি টি তাতে ঢেলে দেবো। স্বাদ মতো নুন , মিষ্টি দিয়ে 3মিনিট ফুটিয়ে একটি বাউল এ ঢেলে রাখবো। এরপর টোম্যাটো র ওপর সিরিভাজা ছড়িয়ে রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন। সঙ্গে স্যালাড থাকলে জমে যাবে।