নিজস্ব সংবাদদাতা: এসএসকেএম(SSKM) বনাম মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (MMCH) কার রিপোর্ট ঠিক এই সমস্যা সমাধানে দ্বারস্থ হতে হয়েছিল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা এন্ড এন্ট্রিক ডিজিজ বা NICED য়ের কিন্তু অভিজ্ঞতা আরও খারাপ হল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের। দেখা গেল আরও খারাপ অবস্থা সেখানে। একে তো সময় মত রিপোর্ট আসছেনা তারওপর যে রিপোর্ট দশমিক ভগ্নাংশে রিপোর্ট আসছে তা মারাত্মক ! প্রেরন করা নমুনার অধিকাংশই পজিটিভ আর নমুনা পাঠানোই হয়নি এমন মানুষেরও রেজাল্ট চলে আসছে।
সম্প্রতি এমন একটি রিপোর্ট পাওয়া গেছে যেখানে নির্দিষ্ট ব্যক্তি নমুনা দিতে যাবেন বলে তাঁর নাম লিপিবদ্ধ করা হয় কিন্তু শেষ অবধি ওই ব্যক্তি নমুনা প্রদান করেননি কিন্তু দিনের শেষে তাঁর রেজাল্ট এসেছে নেগেটিভ। এখন প্রশ্ন হল যে ব্যক্তি নমুনাই দিলেননা তাঁর পরীক্ষা হল কী হবে? জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা জানিয়েছেন, ” আরটি/পিসিআর পরীক্ষার ক্ষেত্রে আগেই থেকেই একটি তালিকা তৈরি করা হয় নাম, ধাম ফোন নম্বর দিয়ে। এরপর সেই ব্যক্তির নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়। তালিকা সহ সেই নমুনা পাঠানো হয় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে। তাঁরাই ঠিক করেন নমুনা কোথায় পরীক্ষা করা হবে। ইদানিং সেই রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছিল NICED কলকাতার দপ্তরে।”
ওই আধিকারিক বলেন, “নিয়ম বলছে যে তালিকাতে নাম থাকা স্বত্ত্বেও যার নমুনা সংগ্ৰহ করা যায়নি তার নামের বিপরীতে ল্যাব লিখে পাঠাবে নমুনা পাওয়া যায়নি বা স্যাম্পেল নট ফাউন্ড বলে। যে নমুনা যায়নি তার বিপরীতে নেগেটিভ বা পজিটিভ লেখা হতেই পারেনা। কী কারনে এটা হল খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” উল্লেখ্য এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার দেভোগ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সচিবের ক্ষেত্রে। নাম ভুদেব মন্ডল। কয়েকদিন আগে দেভোগ গ্রাম পঞ্চায়েতের করোনা পজিটিভ আসায় সবং ব্লক স্বাস্থ্যদপ্তর ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত কর্মীরই নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঠিক হয় ১৭জনের পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে জরুরি কালীন ভিত্তিতে ৪জনের আ্যন্টিজেন ও বাকিদের আরটি/পিসিআর পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। যদিও তালিকাভুক্ত হওয়া স্বত্ত্বেও তিন জন বিশেষ কারনে নমুনা দিতে আসতে পারেননি সবং গ্রামীন হাসপাতালে। যার মধ্যে ভুদেব বাবুও ছিলেন। ভুদেব বাবু জানান, আমার কাকা মারা যাওয়ার কারনে আমি পারিবারিক ক্রিয়ায় তিনদিন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম ফলে নমুনা দিতে যেতেই পারিনি। রবিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান দপ্তরের একটি রিপোর্ট আমার কাছে আসে। NICED ল্যাবের ওই রিপোর্ট বলছে আমি নেগেটিভ। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি যে আমি যেখানে নমুনা দিলামই না সেখানে পরীক্ষা হল কী করে?”
কিছুদিন আগেই এই জেলার খন্ডরুই স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও এরকমই একটা ঘটনা ঘটেছিল যেখানে নমুনা না দিয়েই একজন পজিটিভ হয়। তখন স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুমান ছিল অন্য কেউ ওই যুবকের নাম ঠিকানা ব্যবহার করে নিজের নমুনা দিয়ে আড়াল থেকে নিশ্চিত হতে চেয়েছিল সে পজিটিভ কিনা! কিন্তু সবংয়ের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা নেই কারন ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে সত্যি সত্যি ভুদেব মন্ডলের নমুনা প্রেরণ করা হয়নি। ১৭ জনের মধ্যে ভুদেব মন্ডল সহ তিনজন অনুপস্থিত ছিলেন।
জানা যাচ্ছে শুধু সবং নয় জেলার আরও কয়েকটি জায়গাতেও একই ঘটনা ঘটেছে। একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে নমুনা প্রদান করেইনি এমন ১৩জনের পজিটিভ ফল এসেছে ঘাটাল মহকুমায়। NICED য়ের ফল নিয়ে নাজেহাল জেলাও। প্রথমত: প্রায় আড়াই হাজার নমুনার এখনও ফলই হাতে পায়নি জেলা। যে ক্ষুদ্র ভগ্নাশের রিপোর্ট মিলেছে তার পঞ্চাশ শতাংশের বেশি নাকি পজিটিভ। উল্লেখ্য মাঝখানে দুবার ল্যাব কর্মীরা আক্রান্ত হওয়ায় নমুনা পাঠানো হচ্ছিল SSKM য়ে।
রিপোর্ট আসার পর দেখা গেল মাত্র ৬/৭% পজিটিভ। অথচ MMCH য়ের ল্যাবে প্রায় ২৬% পজিটিভ আসত। বিভ্রান্তি কাটাতে NICED ল্যাবের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রাপ্ত রিপোর্টের প্রায় ৫৪% পজিটিভ। আর ২৫০০নমুনার মধ্যে রিপোর্ট এসেছে মাত্র ১৪৬জনের। ৯৪% মানুষের রিপোর্ট আসেইনি! এই পরিস্থিতিতে ফের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি ল্যাবে ফিরতে চলেছে জেলা।