নিজস্ব সংবাদদাতা: নিয়ম বলতে নিজে মাস্ক পরা আর বাইরে গেলে মাস্ক হীন ব্যক্তির দু’গজের মধ্যে না যাওয়া। নিয়ম বলতে বাইরে থেকে ফিরেই দুটি হাত ভাল করে ধুয়ে ফেলা অথবা স্যানেটাইজ করা, জামা কাপড় বাইরে রেখে পরে কেচে নেওয়া। ব্যাস্! নিয়ম বলতে এই টুকুই কিন্তু তাই মানছেনা মেদিনীপুর শহর। আর সেই কারনে হু হু করে সংক্রমন বাড়ছে শহরে। মাত্র ১মাসেই মেদিনীপুর শহরে করোনা আক্রান্তর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে যা জেলায় তো দুরের কথা মেট্রো শহর (কলকাতা, হাওড়া ইত্যাদি)ছাড়া রাজ্যে আর কোথাও দেখা মিলবেনা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তা জানিয়েছেন, “শুধুমাত্র নিয়ম না মানা কারনে পরিবারের এক সদস্য থেকে অপর সদস্যরা গুচ্ছ গুচ্ছ সংক্রমিত হচ্ছেন। এ নজির অন্য জায়গাতেও আছে কিন্তু আমি অন্য জায়গার কথা ধরব কেন? মেদিনীপুর শহর শিক্ষক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, আইনজীবীর শহর বলে গর্ব করে। কিন্তু করোনা বিধি আচরনে, ফলাফলে যা উঠে আসছে তা লজ্জার। বাজার করার, মাছ, মাংসের দোকানে এমন হামলে পড়া ভিড় অন্য কোথাও দেখা যাবেনা।”
ওই স্বাস্থ্য কর্তা জানিয়েছেন, জেলায় করোনা আক্রান্তের প্রথম সন্ধান মিলেছিল মার্চ মাসের শেষে, দাসপুরে। আগষ্ট মাসের গোড়া অবধি মেদিনীপুর শহরে সেই অর্থে আক্রান্ত নেই। আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে শহরের আক্রান্ত ১৫জনের মত। অর্থাৎ ৪মাস লকডাউন চলাকালীন শহর ঠিক আছে। যেই এক এক করে আনলক পর্ব শুরু হল অমনি প্রতি সপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমন বাড়তে শুরু করল! অর্থাৎ নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি এই শহর।”
কী হারে এই শহরে সংক্রমন বাড়ছে দেখা যাক। ২১আগষ্ট শহরে মোট আক্রান্ত ছিলেন ২৬৬ জন যাঁর মধ্যে সক্রিয় করোনা রোগি ছিলেন ১৯৪ জন। ওই সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ছিলেন ২জন। পরের হিসাব ১৪দিনের মাথায় ৪ঠা সেপ্টেম্বরের। শহরে মোট আক্রান্ত ৮০১ জন। সক্রিয় ৩৭৭জন এবং মৃত ১১জন। অর্থাৎ ২সপ্তাহে নতুন আক্রান্ত ৫৩৫ জন। হিসাব বলছে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮জনেরও বেশি মানুষ। আর এই হিসাব ধরলে পরবর্তী ৮দিন অর্থাৎ ১২ই সেপ্টেম্বর শহরে আক্রান্তর সংখ্যা অন্ততঃ ৩০০ জন। অর্থাৎ ১০০০ ছাড়িয়ে গেছে মেদিনীপুর শহর।
এবার আরেকটি হিসেবে দেখে নেওয়া যাক শহরের বর্তমান সংক্রমনের হার এবং পারিবারিক সংক্রমনের স্বরূপ। ১১ই সেপ্টেম্বরের আ্যন্টিজেন রিপোর্ট মোতাবেক শুধু ওই দিনই মেদিনীপুর শহরে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৫জন। মনে রাখতে হবে এটা শুধুই আ্যন্টিজেন রিপোর্ট। এর বাইরে আরটি/পিসিআর রয়েছে। এই ২৫জনের ১৪জনই (৫৬%) পারিবারিক সংক্রমনের আওতায়। এই ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৪টি পরিবারে। শহরের হাতারমাঠ, মির্জা বাজার ও ডাকবাংলো রোডে একই পরিবারের ৩জন আক্রান্ত হয়েছেন আর রাঙামাটিতে একই পরিবারের ৫জন আক্রান্ত।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য শুধু হাত ধোয়ার নিয়মটুকু মানলে আর জামা কাপড় বাইরে রেখে পরে কেচে নেওয়ার নিয়ম মানলেই এই ১৪জনের ১০জন সংক্রমিত হতেননা। কারন ধরে নেওয়া যেতে পারে চারটি পরিবারে চারজন প্রথম সংক্রমিত হয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য এভাবে চলতে থাকলে এই শহরে সংক্রমনে রাশ টানা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যেই করোনার প্রকোপে শহর হারিয়েছে শিক্ষক, আইনজীবী, গৃহবধূ, যুবক যাঁদের এখুনি যাওয়ার কথা ছিলনা। আরও কত মৃত্যু এ শহরের চেতনা ফেরাবে কে জানে?