নিজস্ব সংবাদদাতা: মাওবাদী পর্বে জঙ্গলমহলে জনসাধারন কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতের সঙ্গে তৃনমূল তথা বাম বিরোধী সমস্ত শক্তির যোগাযোগ করিয়ে দিতেন মুকুল রায়। এমনকি ছত্রধর মাহাতের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জীর বোঝাপড়াও নাকি তিনিই করিয়ে দিয়েছিলেন, মুকুল রায় সম্পর্কে এমন ধারনা অনেকেই পোষন করেন। আরও এক ধাপ এগিয়ে সিপিএমের অভিযোগ ছিল যে শুধু ছত্রধর মাহাতই নয় মাওবাদীদের মুখোশ জনসাধারন কমিটির আড়ালে খোদ মাওবাদীদের সঙ্গেই ভাল বোঝাপড়া ছিল মুকুল রায়ের। সেই পর্বে কলকাতার বুকে মাওবাদীদের সাথে গোপন বৈঠক কিংবা জনসাধারন কমিটির ডাকে কলকাতার বুকে লাশ নিয়ে মিছিল সংগঠনেও ভূমিকা ছিল তাঁর। সেই সময়েরই তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায়ই এবার কামান দাগলেন ছত্রধর মাহাত সমেত তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
রবিবার ঝাড়গ্রামে বিজেপির এক সভায় এসে জ্ঞাননেশ্বরী নাশকতা থেকে জঙ্গলে অশান্তির পেছনে নাম না করেই ছত্রধর মাহাত ও মাওবাদীদেরই দায়ী করলেন বর্তমানে বিজেপি নেতা মুকুল রায়। সাথে সাথে ছত্রধরের সাথে তৃণমূলের গাঁটছড়া যে আদতে মাওবাদীদের সাথেই গাঁটছড়া সেটাও বুঝিয়ে দিলেন মুকুল রায়।
২০০৮-১১ জঙ্গলের রক্তক্ষরা দিন, কয়েক’শ মানুষ হত্যা আর কয়েকশ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, যাঁদেরকে খুন করেই লাশ গুম করে দেওয়া হয়েছে বলে পরিবারের বিশ্বাস। সেই অশান্ত, আগুনে পোড়া জঙ্গল মহলের সমস্ত লাশের দায় যে ছত্রধর মাহাতরই এই ধারনাকে ফের নতুন করে তুলে আনতে চাইছেন মুকুল রায় একথা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সাংবাদিকদের মুকুল রায় বলেন- “২০০৮-২০১০ সালের আমরা দেখেছি ঝাড়গ্রামকে পিছিয়ে দেওয়ার পেছনে কে ছিল ৷ কারা সন্ত্রাশ করেছিল ৷ সেই তাদের কাউকে ধরে রাতারাতি পদে বসিয়ে দিলে নেতা হয়ে যায় না ৷ ছত্রধরের ভুমিকা ও জ্ঞানেশ্বরীর ঘটনা আমরা কেউই ভুলিনি ৷ এই সমস্ত লোককে পদে বসিয়ে দিলেই জঙ্গলমহলের মনের প্রিয় মানুষ হয়ে যেতে পারেনা ৷ ঝাড়গ্রামের মানুষ বিচার করবে জঙ্গলমহলের উন্নয়নের জন্য কারা লড়াই করছে ৷”
মুকুলকে এদিন যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয় বর্গীয়। মুকুলের আরও একধাপ উঁচুতে উঠে ছত্রধরকে সরাসরি মাওবাদী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন – ” একজন মাওবাদী কে টিএমসি জামিনে মুক্ত করে সম্মানজনক পদে বসিয়েছে ৷ যে পুলিশের খাতায় ওয়ান্টেড ছিল তাকে পুলিশ সুরক্ষা দিয়ে চারদিকে ঘোরাচ্ছে ৷ আর সে বিজেপির কর্মীদের জোর পুর্বক তৃণমূলে যোগদান করাচ্ছেন ৷ জঙ্গলমহলের মানুষ এটা মেনে নিতে পারেনা।”
সব মিলিয়ে ছত্রধর মাহাতকেই নিশানা করে সামনের বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চাইছে বিজেপি এটা পরিষ্কার। জঙ্গলমহলের বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক কিংবা উন্নয়ন ইত্যাদি চিরাচরিত ধারনার বাইরে গিয়ে লড়াইটা কে ‘রক্তাক্ত ও প্রাণঘাতী দুঃস্বপ্নের স্মৃতি নির্ভর করাই লক্ষ্য মুকুল রায়। ভোট কুশলী মুকুল রায় জানেন, ২০১৮ লোকসভায় জঙ্গলে বিজেপির অঢেল সমর্থনকে ধরে রাখতে হলে ‘দুঃস্বপ্নের স্মৃতি’র চেয়ে ভাল হাতিয়ার কিছু হয়না।