দিঘায়া রিয়া ও সাদ্দাম |
নিজস্ব সংবাদদাতা: কখনও বলা হচ্ছে এসকর্ট সার্ভিস বা দেহ ব্যবসার সংগে যুক্ত আবার কখনও বলা হচ্ছে খুনি সাদ্দামকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছিল মা ও মেয়ে। কখনও পুলিশ বলেছে বলে চালানো হচ্ছে, আবার কখনও সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ। আর সব কিছু মিলিয়ে যেটা গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা সেটা হল পশ্চিম বাংলায় এত বড় নারকীয় কান্ড স্মরণাতীত কালের মধ্যে হয়নি। হায়দ্রাবাদের পশু চিকিৎসক তরুনী পুজা রেড্ডিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল দেশ কিন্তু তার চাইতে এঘটনা তো আরও মারাত্মক, দু’জন মহিলাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হল কিন্তু তেমন হৈ চৈ নেই ! মেইনস্ট্রিম সংবাদমাধ্যম, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীরা যেন অন্ধ আর বধির হয়ে রয়েছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
আর খুব সুকৌশলে, সুচারু ভাবে ফিস ফিস করে কানে কানে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, খারাপ মেয়ে , খারাপ মেয়ে। যদি খারাপ মেয়েই হয়ে থাকে তো ? পুড়িয়ে মারার অধিকার আছে ? আইনের চোখে কি খারাপ মেয়েদের পুড়িয়ে মারা , ভাল মেয়েদের পুড়িয়ে মারার চেয়ে কম অপরাধের? নিশ্চিতভাবেই নয়। তাহলে ? আসলে সামাজিক ভাবে নারীকে ‘খারাপ’ প্রতিপন্ন করতে পারলে অপরাধী অনেকটাই ‘রিলক্সেশন’ পেয়ে যায়। অনেক বড় জঘন্য অপরাধেরও অপরাধীও সমাজের আম জনতার কাছে কিছুটা ছাড় পেয়ে যায়। ব্যাপারটা ঠিক এরকমই যে, ‘কাজটা ভাল হয়নি ঠিকই কিন্তু মেয়েটাও বা কম কিসের?’
যদিও হলদিয়ার ঝিকুরখালিতে মা ও মেয়েকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার জঘন্য নৃশংস খুনি সেখ সাদ্দাম হোসেনকে এতটা ভোলে ভালে গোবেচারা আর হঠাৎ করে বসা অপরাধ কিংবা ধারাবাহিক ব্ল্যাকমেলের কবলে পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে খুনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঠিক এরকম একটা সহজ সরলীকরন ব্যাপার কিনা ভাবাও দরকার।
 
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
রীতিমত পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে দু’জনকে। খুনের আগে, কিভাবে অচেতন করা হবে, কোথায় রেখে অচেতন করা হবে, তারপর দেহ দুটিকে কিভাবে , কোন গাড়িতে, কোথায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সব, সব কিছুই পরিকল্পনা করে, ছক কষে রাখা হয়েছিল। ছক করে রাখা হয়েছিল খুনি সাদ্দামের সাথে আর কে কে সঙ্গি হবে খুন ও লোপাট করার ষড়যন্ত্র সংঘটিত করার জন্য।
রিয়া ও তার মায়ের সাথে সমুদ্র স্নানে সাদ্দাম |
খারাপ বা ভাল মেয়ে সাজানোর চেয়েও বড় কথা সাদ্দাম বিয়ে করেছিল মেয়েটিকে এবং সেই সুবাদে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্কও ছিল। এই বিবাহিত স্ত্রী এবং তাঁর মা অর্থাৎ শাশুড়িকে নিয়ে সাদ্দাম বহু জায়গায় বেড়াতে গেছিল। তার একাধিক ছবি রয়েছে পুলিশের কাছে এবং সেই সব ছবি খুন হয়ে যাওয়া রিয়া বা আয়েশা তাঁর নিজের ফেসবুকে আপলোড করেছিল। জানা গেছে সাদ্দাম রিয়াকে বিয়ের আগেই বিবাহিত। তারপরও সে বিয়ে করে রিয়া বা আয়েশাকে। রিয়া সাদ্দামের আগের বিয়ের কথা জানতনা। পুলিশের বক্তব্য, সাদ্দাম বিবাহিত জানার পর থেকে রিয়া বা আয়েশা এবং তাঁর মা সাদ্দামকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে। তাদের ঘনিষ্ট ছবি, ভিডিও ইত্যাদি ফাঁস করার কথা বলে তার কাছ থেকে ২০লক্ষ টাকা দাবি করে। এরপরই মা মেয়েকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সাদ্দাম।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
প্রশ্ন হচ্ছে যদি এই ঘটনা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে সাদ্দাম আইনের সাহায্য নিতে পারত কিন্তু তা না করে সে দুজনকে খুনের সিদ্ধান্ত নিল কেন ? কারন প্রথমতঃ সাদ্দাম নিজেও অপরাধ করেছিল। নিজে বিবাহিত হওয়া স্বত্তেও সে দ্বিতীয় বার বিয়ে করে এবং রিয়াকে নিয়ে বহু জায়গা ঘুরে বেরিয়েছে, ফুর্তি করেছে। অর্থাৎ এক্সট্রা স্ফূর্তি লোভ সে এড়াতে পারেনি। এই অপরাধের জন্য সে পুলিশের দ্বারস্থ হতে পারেনি। দ্বিতীয়ত: সাদ্দাম খুনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এই কারনেই যে এই কাজটা সে সহজেই হাসিল করতে পারবে বলে মনে করেছিল। এরজন্য প্রয়োজনীয় লোকবল, পরিকাঠামো তার ছিল। কার হাত ধরলে জোড়া খুনের মত ঘটনা ঘটিয়েও পার পাওয়া যায় এটাও তার ভাবনায় ছিল। হয়ত বা তার এ বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতাও বর্তমান।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এই দ্বিতীয় কারনটাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভয়ংকর কারন শুধুই সাদ্দামের গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে এই অপরাধের শেকড় ওপড়ানো যাবেনা। সাদ্দামের গ্রেপ্তার , তার জেলও যদি হয় তবুও তার খুনের আরও অনেক সহযোগী, খুনের পরিকাঠামো এবং সাদ্দামকে এই অপরাধ থেকে মুক্ত করতে পারে এমন শক্তি জেলের বাইরেই থেকে যাবে এবং পুনর্বার অপরাধ সংগঠিত করবে। মা ও মেয়েকে ‘খারাপ’ প্রতিপন্ন করার চেষ্টাটা তাই সেই অপরাধী গোষ্ঠিটিকেই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা যা কিনা আরও বৃহত্তর অপরাধের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।