যৌবনকাল

✍️কলমে: দীপ মুখোপাধ্যায়

পর্ব-৫

কখনও বাজার সরকার কখনও বা জ্যোতিষীর অনুপস্থিতির কারণে তাঁর হয়ে ভবিষ্যৎবাণী,কীযে লিখিনি তখন। সুধাংশু মাধব দে ছিলেন আমাদের নিউজ-এডিটর। লেট সিটি এডিশনের জন্য এক কলম ফাঁকা স্পেস বরাদ্দ থাকত। কোনও জুতসই স্টোরি না থাকলে সেই ফাঁক আমি ভরাট করতাম গালগল্প ফেঁদে। যেমন একবার ব্যাঙের হার্ট বর্ষাকালে প্রতি সেকেন্ডে কতবার কাঁপে এই নিয়ে ছিল আমার মনগড়া প্রতিবেদন। পরদিন কাগজ বেরোতে সিনিয়র সাব এডিটর পথিক গুহ বলেছিলেন, তুই কল্পবিজ্ঞান লিখলে একদিন বাংলার অ্যাসিমভ হয়ে যাবি। আসলে এই কাল্পনিক স্টোরি ফাইল করার কারণ অতিরিক্ত পঞ্চাশ টাকা প্রাপ্তি। অবশ্য সেই পয়সায় আমি, সুধাংশুদা আর রবিবারের পাতার সাহিত্য সম্পাদক কল্যাণ্যাক্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় হাড়কাটা গলিতে দু-পাত্তর করে গলা ভিজিয়ে আসতাম। কল্যাণদা,(পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ির দৌহিত্র বংশজাত) থেকে যেতেন তাঁর বাঁধা মেয়েমানুষের ঘরে। তবে সেই বসুমতীর গদগদ সুখ বেশিদিন টেকেনি। সেই বছর শারদ সংখ্যায় উৎপল দত্তর লাইফস্টাইল নিয়ে একটি নিবন্ধে তাঁর অকম্যুউনিস্ট সুলভ যাপনচিত্র প্রকাশ করতেই আমার বাইলাইন বন্ধ হয়ে গেল।

চাকরিবিচ্যুত না হলেও কোনও কাজ নেই তখন।সরকার অধিগৃহীত সংস্থা বলে মাইনেটা নিয়মিত পাচ্ছিলাম। বসার চেয়ার অবধি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সবমিলিয়ে এক বিমর্ষ পরিবস্থা। সেই সময় আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম নিখিল সরকার(শ্রীপান্থ)মশাই-এর সৌজন্যে। তিনি আমায় চুক্তিবদ্ধ করালেন আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর চাষবাস বিষয়ক ভূমিলক্ষ্মী নামের একটি সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েডে। সম্পাদক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। চাষবাস কিছুই বুঝি না। আমার বেগতিক অবস্থা আঁচ করে শ্যামলদা বলেছিলেন,তুমি প্রতি সপ্তাহে প্রত্যন্ত গ্রাম ঘুরে সহজ ভাষায় একটা ফিচার লিখবে। আপাতত এটাই তোমার অ্যাসাইনমেন্ট।

মহুয়ার বহুগুণ,ঘাটালের ঘটপুজো,মাজরা পোকার অত্যাচার- এর মতো স্টোরি ফাইল করেছি গলার রগ ফুলিয়ে ফুলিয়ে। সেই সঙ্গে নিখিল বাবুর আনুকূল্যে রুটিনমাফিক সপ্তাহে একটা কলকাতার কড়চা আর মাসে একটা বুকরিভিউ। রোজগারপাতি মন্দ হচ্ছিল না। তবু মনের গুমোট হালকা ফুরফুরে হয় না। সন্তোষ কুমার ঘোষ মশাই মাঝে মধ্যে ফিচার লেখাতেন আনন্দবাজার রবিবাসরীয়তে। শিশুতোষ গল্প বেরুত শক্তিদার দায়িত্বে থাকা দৈনিকের আনন্দমেলায়।আনন্দবাজার বা দেশ পত্রিকায় সৃজনশীল লেখার সুযোগ না পেলেও কৃত্তিবাস,চতুরঙ্গ আর পরিচয় পত্রিকায় আমার গল্প বেরুল। তবুও মনে হতো,আমি যেন হৃদয় আর মানবতার দ্যুতি ক্রমে হারিয়ে ফেলছি।চাকরিটাও পাকাপোক্ত হচ্ছে না। দেখার চোখ দুটো ভোঁতা হয়ে আসছে। সংবাদপত্রের ক্রীতদাসদের হয়তো এমনটাই হয়ে থাকে। মাকড়শার জালে জড়িয়ে পড়ছি কিঞ্চিৎ শিক্ষা,দীক্ষা আর রুচি থাকা সত্ত্বেও।জঙ্গম জৈবিকতা নিয়ে এ যেন একটা যান্ত্রিক জীবনধারণ। ভীষণ ক্লেদাক্ত সেই স্মৃতি।

(ক্রমশ প্রকাশ্য)

RELATED ARTICLES

Most Popular