নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৫ই আগষ্ট কাকভোরে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি থানার ভুলাভেদা এলাকায় সারি সারি পোষ্টার দেখেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর সেই সময়েই রটে গেছিল যে, পচাপানি গ্রামের তিন ব্যবসায়ীকে লেভি চেয়ে হুমকি দিয়েছে মাওবাদীরা। যে তিন ব্যবসায়ীকে এই হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাঁদের মধ্যে এক ব্যবসায়ী রান্নার গ্যাস সরবরাহকারী একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির এজেন্ট। বৃহস্পতিবার সেই ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালালো অজ্ঞাতপরিচয় কিছু মানুষ। বরাত জোরে সেই ব্যবসায়ী বেঁচে গেলেও গুলির আতঙ্কে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালাতে গিয়ে পা ভেঙে আহত হয়েছেন ব্যবসায়ীর স্ত্রী। বিষয়টি জানার পরই আতঙ্ক ছড়িয়েছে সমগ্র বেলপাহাড়ি জুড়েই। মাওবাদীদের আঁতুড় ঘর বলে একদা কথিত এই এলাকায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ব্যবসায়ী ও সাধারন মানুষ। গ্রামবাসীরা নিশ্চিত ফের সক্রিয় হচ্ছে মাওবাদীরা।
বেলপাহাড়ি শিমূলপাল গ্রামপঞ্চায়েত বরাবরই মাওবাদীদের ঘাঁটি ছিল। ঝাড়খন্ড লাগোয়া বাংলার এই সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থানগত সুবিধা ব্যবহার করে মাওবাদীরা। সেই কারনে পচাপানি গ্রামও তাদের সহজগম্য। জুলাইয়ের ২৭ তারিখে সেই লেভি চেয়ে পাঠানোর মধ্যে খুব অস্বাভাবিকতা কিছু ছিলনা কিন্তু বিষয়টি পুলিশ স্বীকার করেনি আর মাত্র ২দিনের মেয়াদে সেই লেভি দেওয়ার তারিখ ২৯জুলাই পেরিয়ে গিয়েও কিছু না হওয়াতে ভুলেই গেছিল সবাই। মাঝখানে ১৫ই আগষ্ট ভুলাভেদায় কালোদিবস পালনের দাবি জানিয়ে পোষ্টার ফের সেই আলোচনাকে কিছুটা জাগিয়ে ফের বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ঠিক ১ মাসের মাথায় আগষ্টের ২৭ তারিখই ঘটে গেল ঘটনাটা!
বিভিন্ন সূত্র মারফৎ জানা গেছে ২৭শে আগষ্ট, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ বিদ্যুৎ দাসের বাড়ির সামনে হাজির হয় কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় লোক। তাঁর নাম ধরে ডাকা হয়। মনে একটা কিন্তু কিন্তু ছিলই তাই সরাসরি সামনের দরজা খুলে বাইরে না বেরিয়ে ছাদের ওপরে উঠে বিষয়টি দেখতে যান বিদ্যুৎ দাস। পেছনে পেছনে ও তাঁর স্ত্রী মীরা দাস। বন্দুকধারী দলটির সম্ভবত মনে হয়েছিল ছাদে উঠে পেছনের দিকে কোনও রাস্তা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছেন স্বামী স্ত্রী। তাই হয়ত কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা। সেই সময় আতঙ্কে ছাদ থেকে ঝাঁপ মারেন মীরা। বাইরে থেকেই বিদ্যুৎকে শাসিয়ে যায় ওই ব্যক্তিরা।
জানা গেছে গত ২৭ জুলাই লেভি চেয়ে বিদ্যুতের বাড়িতে যে চিঠি এসেছিল তাতে মাওবাদী নেতা মদন মাহাত সই করে দু’লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। সেই ‘নির্দেশ’ না মানলে ‘চরম শাস্তি’-র হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়েছিল। ঠিক একমাসের মাথায় হামলা এই ঘটনা মাওবাদীরা ছাড়া আর অন্য কারও হতেই পারেনা বলেই মনে করছেন বিদ্যুৎ ও গ্রামবাসীরা। পুলিশ অবশ্য এ নিয়ে সরাসরি কিছুই বলেনি। এটা কী সত্যি মাওবাদীদের নাকি অন্য কারও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।