ওয়েব ডেস্ক : আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর কেটে গিয়েছে ৩ মাস। এখনও পর্যন্ত বহু মানুষের ক্ষতিপূরণ মেলেনি। ক্ষতিপূরণ নিয়ে এতদিন রাজ্য সরকারকে বিস্তর জটিলতার মুখে পড়তে হয়েছে। তার ওপর আবার বিধানসভা নির্বাচন ক্রমশ এগিয়ে আসছে। তাই এই পরিস্থিতিতে জনগণের বিরুদ্ধে কোনো কাজই করতে নারাজ রাজ্য। ফলে আমফান ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের টাকা আর এক মুহূর্তও ফেলে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ৫ জেলার সাথে প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিলেন রাজ্য সরকার৷ রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, যেই যেই জেলায় আমফানের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এখনও পর্যন্ত বাকি রয়েছে, তাদের আগামী তিন দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
করোনার কারণে এবছর সামনাসামনি প্রশাসনিক বৈঠক না হলেও নবান্ন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম সহ এই ৫ জেলার সাথে প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাগুলি করোনা পরিস্থিতিতে কি কি কাজ করেছেন তা খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের বৈঠকের মাঝেই আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে সময়সীমা বেঁধে দিলেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”আমফানের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ ৩, ৪ দিনের মধ্যে শেষ করে ফেলুন। আর ফেলে রাখবেন না।” এবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সুর টেনে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান, ”ক্ষতিপূরণের তালিকা তৈরির কাজ কোনও কোনও জেলায় ১ থেকে ২% বাকি আছে। যেটুকু কাজ বাকি, তা দ্রুত শেষ করতে হবে, ৭ দিনের মধ্যেই যেন তা সমাপ্ত হয়।”
চলতি বছর ২০ মে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আমফানে প্রায় তছনছ হয়ে গিয়েছিল গোটা দক্ষিণবঙ্গ। বিশেষত দুই ২৪ পরগনা, মেদিনীপুরে মতো উপকূলবর্তী এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছিল। কলকাতার রাস্তায় ভেঙে পড়েছিল একের পর এক গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি। প্রায় সপ্তাহ খানেকের জন্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বিদ্যুৎ পরিষেবা। এর কিছুদিন পরই রাজ্য সরকারের তরফে আমফানের ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শুরু হতেই প্রায় সব জায়গাতেই শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ জমা পড়তে থাকে। আদতে দেখা যায়, যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারাই বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি প্রাপ্য থেকে, এবং ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন শাসকদল ঘনিষ্ঠরা। কোনও জায়গায় আবার এসব রুখতে তড়িঘড়ি নিজেই মাঠে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্নীতির অভিযোগে কড়া ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ ওঠামাত্রই দলের বেশ কিছু নেতাকে শোকজ করেন। প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এরপর ফের নতুন করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নতুন করে তৈরি করার নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যেই সেই কাজ সম্পন্ন। এবার দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার কাজও শেষ করে ফেলতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সেকারণেই মঙ্গলবার নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে আরফান ক্ষতিগ্রস্ত দের ক্ষতিপূরণ দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার কড়া নির্দেশ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।