নিজস্ব সংবাদদাতা , খড়গপুর : শেষ রক্ষা হলনা IIT তে । এক ছাত্রের হাত ধরে করোনা প্রবেশের পরই সব ছাত্রকেই ক্যাম্পাস ছাড়তে বলেছিল আইআইটি। ২৩ তারিখ, রবিবারই ছিল সেই ক্যাম্পাস ছাড়ার শেষ দিন আর সেই শেষ দিনেই বড়সড় দুঃসংবাদ এসে পৌঁছেছে ক্যাম্পাসে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব মোতাবেক আরও ৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসে। আর এবার আর শুধু ছাত্র নয়, ছাত্রদের হোস্টেলের প্রাচীর টপকে করোনার থাবা এবার কর্মচারী আবাসনে গিয়েও পড়ল। স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ বছর, ২১ বছর ও ১৮বছরের তিন ব্যক্তি।
জানা গেছে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২ছাত্র ও ১জন স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন। আক্রান্ত ২ছাত্র পূর্বের আক্রান্ত ছাত্রের মতই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের। একজন দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার আর অন্যজন চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পড়ুয়া। প্রথম আক্রান্তের সঙ্গেই এরা থাকত
। অন্যদিকে অন্য ব্যক্তি আইআইটি বি সি রায় হাসপাতালের নার্সিং আ্যসিসটেন্ট মেল, যাকে হাসপাতালের পরিভাষায় আ্যডভান্স ট্রেইন্ড মেডিক্যাল নার্সিং আ্যসিসটেন্ট বলা হচ্ছে। প্রথম আক্রান্ত পড়ুয়ার নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
মাত্র ৪দিন আগে, বুধবার আইআইটিতে প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। লকডাউন পর্ব পেরিয়েও শেষ অবধি ক্যাম্পাসে থেকে গিয়েছিল কিছু ছাত্র যাদের সংখ্যা আড়াইশ থেকে তিনশ। সেই ছাত্রদের মধ্যে উত্তর ভারতের দিল্লি সংলগ্ন এলাকার এক বি.টেকের ছাত্র প্রথম আক্রান্ত হন। কোনও ঝুঁকি না নিয়েই সাথে সাথে ওই ছাত্রকে বিশেষ আ্যম্বুলেন্স করে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়। এরই পাশাপাশি আইআইটি ছাত্র সম্পর্কিত ডিন ও হল ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান একটি যৌথ স্বাক্ষরিত সার্কুলার জারি করে হোস্টেলগুলির ওয়ার্ডেনদের জানিয়ে দেন যে রবিবারের মধ্যেই হোস্টেল ছেড়ে দিতে হবে ছাত্রদের। আজই সেই রবিবার যেদিন আইআইটির জন্য এই বড়সড় দুঃসংবাদটি চলে এল।
আরও পড়ুন – করোনায় আক্রান্ত আইআইটির পড়ুয়া! ২৩ তারিখের মধ্যে হোস্টেল খালি করে দিতে বললেন আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ
জানা গেছে ওই পড়ুয়ার পজিটিভ আসার পরই আইআইটির তরফে সম্ভাব্য কিছু ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মত ২১ আগষ্ট ৬জনের নমুনা সংগ্রহ করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি ল্যাবে পাঠানো হয় যার মধ্যে ওই তিনজনের পজিটিভ আসে।
করোনা কাল থেকেই প্রায় সামরিক কায়দায় নিরাপত্তার বেড়াজাল তৈরি করেছিল আইআইটি। সেই নিরাপত্তার বলয় ভেদ করে কারও ভেতরে প্রবেশ করাই মুশকিল।
ক্যাম্পাসে ঢোকার চারটি মূল ফটকের তিনটিই পুরোপুরি বন্ধ চারমাস। যাওয়া আসার একটি পথে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, থার্মাল স্ক্যানার, বায়বীয় স্যানিটাইজ পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই প্রবেশ করতে হত হাতে গোনা কিছু তালিকাবদ্ধ লোককে। যেমন জরুরি বিভাগের কর্মী, ক্যান্টিনের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহকারী ঠিকাদার, ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা দোকানের মালিক, কর্মচারী। ভেতরে থাকা কর্মীরা শুধুমাত্র বাইরে বের হতে পারতেন ২ঘন্টার জন্য গাড়ির জ্বালানি ভরতে। কিন্তু কোনও অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিলনা। কিন্তু তার পরেও সেই বাঁধ যেন বালির বাঁধেই পরিনত হতে চলেছে। করোনার অমাবস্যা কোটাল যেন সেই বাঁধ ভেঙেই ভেতরে ঢুকে পড়ল।