নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা আক্রান্ত উত্তর ভারতের বি.টেক ছাত্রকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছে আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ। বুধবার আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ ফল আসার পর একটুও ঝুঁকি নিতে চায়নি আইআইটি, বিশেষ আ্যম্বুলেন্স করে ওই দিনই কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে তাকে। এমনিতে ওই ছাত্র ভালই আছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ছাত্রটির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় যথেষ্টই বিরক্ত কর্তৃপক্ষ। করোনা সংক্রমনের বিরুদ্ধে আইআইটি খড়গপুরের যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বানচাল করে দেওয়ার মতই দায়িত্ব জ্ঞানহীন আচরনে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “কোথায় এঁদের কাছ থেকে বাকিরা শিখবে, জাতির জন্য আদর্শ হবে এরা তা না করে এরাই বিপদে ফেলে দিচ্ছে আইআইটিকে।”
ইতিমধ্যে আগামী ২৩ তারিখের মধ্যে পড়ুয়াদের অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। একটি সার্কুলার জারিও করা হয়েছে। জোর করছেনা কর্তৃপক্ষ কিন্তু চাইছে যে যার বাড়ি ফিরে যাক। আইআইটির ওই আধিকারিকের কথায় ,অনেকেই হয়ত অসুবিধার জন্য বাড়ি ফিরে যেতে পারেনি তেমন অনেকেই থেকে গেছে শুধু বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাবে বলেই।
লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই আইআইটি পড়ুয়াদের অপশন দিয়েছিল বাড়ি যাওয়ার। তখুনি প্রায় ৯ হাজার পড়ুয়া ক্যাম্পাস ছাড়ে কিন্তু হাজার চারেক ছাত্র থেকে যায়। লকডাউন শুরু হওয়াতে আর কিছু বলেনি আইআইটি। লকডাউন শিথিল হতে শুরু করলে আইআইটি ফের নোটিস জারি করে মে মাসের ২১ তারিখের মধ্যে হোস্টেল খালি করে দেওয়ার কড়া বার্তা দিয়েছিল আইআইটি। এবার আর অপশন নয় আইআইটি এবার কঠোর ভাবে ক্যাম্পাস খালি করে দিতে বলে। কিন্তু তারপরেও আইআইটিকে সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসতে হয় কারন বেশ কিছু ছাত্র তখনও দাবি করতে শুরু করে পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় তারা ফিরতে পাচ্ছেনা। পড়ুয়াদের এই অংশটাকেই আইআইটি লালবাহাদুর শাস্ত্রী আর মদন মোহন মালব্য হোস্টেলে রাখে। মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০জন মত ছাত্র রয়ে গিয়েছিল যাদের মধ্যে ওই বি. টেকের ছাত্রটি করোনায় আক্রান্ত হয়।
কিন্তু কী ভাবে ওই ছাত্র করোনায় আক্রান্ত হল তা ভেবে পাচ্ছেনা আইআইটি কর্তৃপক্ষ। করোনা কাল থেকেই প্রায় সামরিক কায়দায় নিরাপত্তার বেড়াজাল তৈরি করেছিল আইআইটি। সেই নিরাপত্তার বলয় ভেদ করে কারও ভেতরে প্রবেশ করাই মুশকিল। ক্যাম্পাসে ঢোকার চারটি মূল ফটকের তিনটিই পুরোপুরি বন্ধ পাঁচমাস। যাওয়া আসার একটি পথে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, থার্মাল স্ক্যানার, বায়বীয় স্যানিটাইজ পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই প্রবেশ করতে হত হাতে গোনা কিছু তালিকাবদ্ধ লোককে। যেমন জরুরি বিভাগের কর্মী, ক্যান্টিনের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহকারী ঠিকাদার, ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা দোকানের মালিক, কর্মচারী। ভেতরে থাকা কর্মীরা শুধুমাত্র বাইরে বের হতে পারতেন ২ঘন্টার জন্য গাড়ির জ্বালানি ভরতে।
কিন্তু কোনও অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিলনা। আইআইটি কর্তৃপক্ষের একটি অংশের ধারনা আইআইটির ভেতরে খোলা থাকা একমাত্র একটি বেসরকারি ক্যান্টিন এই সংক্রমনের উৎস হতে পারে কারন কয়েকজন পড়ুয়ার সাথে ওই ছাত্র ওখানে রাতের খাবার খেতে গেছিল বলে জানা গেছে। আইআইটি কর্তৃপক্ষের সমস্যা হল আইআইটি ক্যাম্পাসের ভেতরে ছাত্ররা ছাড়াও বড় অংশের কর্মচারী, অধ্যাপক ও তাঁদের পরিবার থাকে যাঁদের নিরাপত্তাটাই এখন সব চেয়ে বড় অগ্রাধিকার।
আর সেই কারনে দ্রুত পড়ুয়ারা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাক চাইছে আইআইটি। আইআইটির রেজিষ্টার ভৃগু নাথ সিং জানিয়েছেন, “যেহেতু এখন হোস্টেলগুলি ফাঁকা এবং পড়ুয়ার সংখ্যা একেবারেই নগন্য তাই অন্যদের সংক্রমনের কোনোও সুযোগ নেই বললেই চলে। তবুও প্রতিটি হোস্টেল আমরা স্যানেটাইজ করে দিচ্ছি।”