আহারে বাহারে ইলিশ! ইলিশের রকমারি
সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দেখতে দেখতে ৫ মাস পেরিয়ে গেলো করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই.. কখনো গৃহবন্দী অবস্থায়, কখনো মারাত্মক আশংকা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু আতঙ্ক, আশংকার সাথে আমরা খাদ্য রসিক বাঙালিরা জিভে জল আনা খাবার গুলো সুযোগ পেলেই বানিয়ে ফেলছি। হলফ করে বলতে পারি, খবর কাগজের বয়ে আনা আবহ দপ্তরের নিম্নচাপের খবর ও তার তীব্র ধারাপাত লক ডাউন র দিনটাকে বাঙালির ঘরে ঘরে খিচুড়ি, বেগুনি ভাজা, চাটনি, পাঁপড় দিয়ে একটা ট্রাডিশনাল পরিবেশ তৈরী করে দিয়েছে। পরিবেশটা আরো রাজকীয় হয়ে উঠলো যখন এক পুরানো ছাত্র ফোন করে বললো, ম্যাডাম, বন্ধুরা মিলে কোলাঘাট এসেছি, প্রচুর ইলিশ উঠেছে বাজারে, নিয়ে যাবো? অমনি, মনটা নেচে উঠলো, রকমারি ইলিশ রান্নার প্রস্তুতি তে। ছেলের বায়না, “ইলিশ পাতুরি” হোক, কর্তা বলেন , “ভাপা ইলিশ” ই ভালো। শাশুড়ি মা বলেন, “কালোজিরে দিয়ে” ইলিশ বেগুন বাহার “করলে মন্দ হয়না।
তাই সবার বায়নাক্কা সামলাতে আজ লেগে পড়লুম “ইলিশের রকমারি”তে। আসুন, খুব কম সময়ে বানিয়ে ফেলি বাঙালির রসনা তৃপ্তির রকমারিতে।
#ভাপা ইলিশ #
উপকরণ :5/6টুকরো ইলিশের জন্য, বড়ো চামচের এক চামচ সাদা সর্ষে, পোস্ত একচামচ, স্বাদ মতো লবন, ছোট্ট চামচের একচামচ হলুদ, লাল লঙ্কাগুঁড়ো, কাঁচা লংকা 4/5টি, টক দই (বাড়িতে থাকলে ভালো, না থাকলেও কোনো অসুবিধে নেই ), নারকোল কোরা এবং অবশ্যই সর্ষের তেল। কারণ রিফাইন অয়েল নয়, ইলিশের স্বাদ পেতে গেলে রান্না করুন খাঁটিসর্ষের তেলে। হাইপ্রেসারের পেসেন্ট দের জন্য বাজার চলতি লাইটসল্ট /লবন ব্যবহার করতে পারেন, যা রক্ত চাপ কম করতে সাহায্য করে।
:মাছের টুকরো গুলিকে পরিষ্কার করে একটি পাত্রে রেখে, এক এক করে স্বাদমতো লবন, বেটে রাখা সাদা সর্ষের পেস্ট, টক দই, পোস্তবাটা, হলুদ, লংকাগুঁড়ো ভালো করে মাখিয়ে মাছের সঙ্গে নিতে হবে। নারকোল কোরা থেকে দুধ নিংড়ে বের করে মাছের ওপর দিতে হবে। নারকোল কোরা না থাকলে জল দিয়ে ও মিশ্রণটি কে একটু ঝোলের রূপ দেওয়া যায়। ওপর থেকে একটু নারকোল কোরা, সর্ষের তেল এবং 3/4টি কাঁচালঙ্কা ছড়িয়ে দিলে স্বাদ অন্য মাত্র পাবে। এরপর আমরা একটি স্টিল এর টিফিন বক্স এ মিশ্রণসহ ইলিশ মাছগুলি রেখে, ঢাকনা চেপে লাগিয়ে দিয়ে, অন্য একটি ঢাকনা দেওয়া কড়া, বা প্রেসার কুকার এ জল দিয়ে টিফিন বক্স টি 15মিনিটের জন্য ফুটতে দেবো। 15মিনিট পর বক্স টি ঠান্ডা হয়ে গেলে ঢাকা খুলে পরিবেশন করুন। চাইলে কেও মাইক্রোওভেন এও ইলিশভাপা করতে পারেন।
#ইলিশ পাতুরি #
উপকরণ :ইলিশ মাছের টুকরো গুলি বাঁধার জন্য কলা পাতা বা লাউপাতা, সাদা ও কালো দুই রকম সর্ষে, মিষ্টি দই, সুগার পেশেন্ট দের জন্য টকদই, পরিমান মতো লবন, হলুদ, কাশ্মীরি লাল লঙ্কা গুড়ো, একটু বেশি ঝাল খেতে চাইলে গোলমরিচের গুঁড়ো, কাঁচা লংকা, এবং অবশ্যই সর্ষের তেল।
প্রণালী :ইলিশ মাছের টুকরো পরিষ্কার করে ধুয়ে, তবে মাছের পেটে ডিম থাকলে ধুয়ে ফেলবেননা, বরং ডিম সমেত মাছের টুকরো কাটতে ও রাখতে পারলে স্বাদ বাড়বে। এরপর কলাপাতা গুলি কে লম্বা মতো করে কেটে নিয়ে শুকনো গরম ফ্র্যাই প্যান এ সেঁকে নেবো, যাতে পাতাটি মারতে গেলে ফেটে না যায়। এক এক করে পেস্ট করে রাখা সাদা ও কালো সর্ষে, লবন , হলুদ, লঙ্কাগুঁড়ো,গোলমরিচ গুঁড়ো, দই, একটু বেশি করে সর্ষের তেল একসাথে মিশিয়ে মাছের টুকরোগুলোতে মাখিয়ে দেবো। এরপর মশলা মাখানো একটি ইলিশের টুকরো, একটি কলাপাতার ওপর রেখে একটি গোটা কাঁচা লংকা মাছের ওপর রেখে পাতাটি মুড়ে দেবো। যাতে খুলে না যায়, তারজন্য সুতো দিয়ে কলাপাতা টি বেঁধে দেবো। এরপর একটি ফ্র্যাই প্যান এ সর্ষের তেল গরম করে কলাপাতাই বাঁধা ইলিশ এপিঠ ওপিঠ করে 15মিনিট ধরে সেঁকে নেবো। খুব সাবধানে উল্টাবেন, তাড়াহুড়ো করলে পাতার ভেতরে থাকা মাছ ভেঙে যেতে পারে।
পাতা খুলে গরম ভাতের সঙ্গে এই ইলিশ পাতুরির স্বাদ অতুলনীয়।
#বেগুন ইলিশ বাহার #
উপকরণ :ইলিশ মাছ, কালোজিরে,বেগুন, লবন, চাইলে সামান্য হলুদ, কাঁচালংকা, সর্ষের তেল।
প্রণালী :
ইলিশের টুকরো গুলো ধুয়ে নিয়ে লবন লংকা মাখিয়ে হালকা ভেজে নিন। একটি কড়া তে সর্ষের তেল দিয়ে, গোটা কালোজিরে ফোড়ন দিন। হালকা আঁচে লম্বা করে কাটা বেগুন ভেজে নিন। এরপর খানিকটা কালোজিরে বেটে কড়া তে দিয়ে দিন.। খুব সামান্য হলুদ, ও স্বাদমতো লবন দিয়ে কোষে নিন। এরপর জল দিয়ে দিন। জল ফুটতে থাকলে ইলিশের টুকরো কড়া তে দিয়ে দিন। একটু ঘন হয়ে গেলে কাঁচা সর্ষের তেল ও কাঁচা লংকা ছিঁড়ে ঝোলের ওপর দিয়ে দিন। ব্যাস, ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন ইলিশের বেগুন বাহার। খুব সামান্য সময়ে বাঙালির সোহাগের ইলিশ বানিয়ে ফেলে বাড়ির সবার মনে জয় করুন।।