নিজস্ব সংবাদদাতা: অনিবার্য ছিল সরাসরি সংঘাত, শুরুও হয়ে গেল সেই প্রক্রিয়া। ছেঁটে ফেলা হল রাজ্য কর্মচারী ফেডারেশনের দায়িত্ব থেকে, সর্বোচ্চ পদের পাশাপাশি কমিটি থেকেই সরিয়ে দেওয়া হল রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে । সোমবার তৃণমূল ভবনে এক বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। শুভেন্দুর সেই দায়িত্বে এসেছেন দিব্যেন্দু রায়কে। দিব্যেন্দু একক ভাবেই সেই দায়িত্ব সামালাবেন বলেই জানা গেছে। এতদিন এক তরফা দলের এবং সরকারের মিটিং ও অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলেছেন অধিকারী। বিষয়টি নিয়ে এ যাবৎ কালে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু এবার কথায় বুঝিয়ে দিল দল।এই কমিটিতে চিফ মেন্টর পদে ছিলেন শুভেন্দু। সঙ্গে আরও তিনজন আহ্বায়ক ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে নতুন ৪১ জনের নতুন কমিটিতে একক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দিব্যেন্দু রায়কে।
২০২১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। মূখ্যমন্ত্রী পদে অভিষেক ব্যানার্জীর অভিষেক হতে চলেছে ধরে নিয়েই দলের থেকে ক্রমশ দূরত্ব বাড়িয়েই চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন তাঁর সেই মাথায় উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনোও নেতাকে যে তিনি মানতে পারবেননা এমনটা জানিয়ে দিয়েছিলেন বহু আগেই। কিন্তু তৃণমূলের ভবিতব্য যে অভিষেকই এটা বুঝে গিয়েছেন তিনি আর তাই দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেই চলেছেন, নিজের মত করে কাজ শুরু করে দিয়েছেন নিজস্ব অনুগামীদের নিয়ে।
পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে ‘দাদা’র হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে চলেছেন তাঁর অনুগামীরা। লক্ষ্য বিধানসভায় এই পাঁচ জেলা থেকে যতদূর সম্ভব আসন বের করে আনা এবং জোরালো ধাক্কা দেওয়া। প্রথম লক্ষ্যে কতটা সফল হবেন সেটা সময় দেখবে কিন্তু দ্বিতীয় লক্ষ্যে যে পৌঁছাবেনই এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই অর্থাৎ এই পাঁচ জেলায় বড়সড় ক্ষতি হতে চলেছে তৃণমূলের কারন এখানে দলের অভ্যন্তরে যেমন কোন্দল রয়েছে তেমনি রয়েছে শুভেন্দু গোষ্ঠীর বিরাট প্রভাব। আর পূর্ব মেদিনীপুরের সংগঠনের ৮০ভাগই শুভেন্দুর কব্জায়।
শুভেন্দুকে সরাসরি সরানোর প্রক্রিয়া এই প্রথম হলেও শুভেন্দু গোষ্ঠীর লোকেদের বিভিন্ন পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়ে গেছিল। ২০২১ সালের নির্বাচনকে পাখির চোখ করে কমিটির খোলনলচে বদলের নির্দেশ ছিল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর তাকেই কাজে লাগিয়ে একের পর শুভেন্দু অনুগামীদের বিভিন্ন পদ থেকে সরানো হয়েছে এবং এখনও সেই প্রক্রিয়া চলছে। যার সাম্প্রতিক বলি হয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া যুব তৃণমূল সভাপতি তথা ময়নার বিধায়ক সংগ্রাম কুমার দলুই। বদলে আনা হয় প্রায় অপরিচিত নেতা পার্থ মাইতিকে। শুভেন্দু এমন কি দলেরও বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন পার্থ। সরাসরি শুভেন্দু গড়ে দলের এই সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দিয়েছিল সংঘাতের পথ প্রস্তুত করছিল তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। তারপরেই এই ধাক্কা। এবার রাজ্য কর্মচারীর মেন্টর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল তাঁকে।
জানা গেছে সোমবার তৃণমূল ভবনে বৈঠকে বসেছিলেন সুব্রত বক্সী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, এই সরকারি আধিকারিক দিব্যেন্দু রায় কমিটির আহ্বায়ক পদে ছিলেন। বাকি দুজন সৌম্য ঘোষ ও স্বপন ঘড়ুই অবসর নিয়ে নিয়েছেন। ফলে কমিটির অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়েছিল। জেলাস্তরে কমিটি গঠনের কাজ থমকে ছিল। দিব্যেন্দু রায় জানিয়েছেন, “জেলায় জেলায় কর্মচারীদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে নজর রাখতে কমিটি গঠন হবে। নতুন উদ্যোগ নিয়ে ঝাঁপানো হবে। “
শুভেন্দু অধিকারীকে সরানোর যুক্তি হিসাবে দলের আন্দরে বলা হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই কর্মচারী ফেডারেশনের বৈঠকে গরহাজির থাকছিলেন মন্ত্রী। ফেডারেশনের কাজে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না। যা নিয়ে ফেডারেশনের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল বলে অভিযোগ। এরপরই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও যুক্তির বদলে এটাকে অজুহাত বলেই মনে করছেন শুভেন্দু অনুগামীরা।