নিজস্ব সংবাদদাতা: বাড়িতে ২ জন করোনা যোদ্ধা, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী। করোনা যুদ্ধে অংশ নিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেই সূত্র ধরে আক্রান্ত হয়েছেন পরিবারের ৫ জন। পুলিশ কন্টেনমেন্ট জোন করে দিয়েছে বাড়ির সামনে। কিন্তু রান্না বান্নার উপাদান, খাওয়ার জল, মহিলাদের প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস আসবে কোত্থেকে? ৭ জনের পরিবার তার মধ্যে ২জন নেগেটিভ। সবাই উপসর্গহীন, পুলিশের পরামর্শ বাড়িতেই থাকুন। সেভাবেই থাকা। যে দুজন নেগেটিভ বা আক্রান্ত নন থাকছেন পৃথক ঘরে। বাকি আক্রান্তরা আলাদা।
যে দুজন নেগেটিভ তাঁর ১জনের বয়স ৭৫, অন্যজন তরুণী। তরুণীর ওপরই ভার পড়েছে দোকান থেকে বাড়ির সামনে রেখে যাওয়া খাবার জল, শাক সবজি, চাল ডাল ঘরের মধ্যে নিয়ে যাওয়া। যাঁরা এসব দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা রেখে যাচ্ছেন কন্টেনমেন্ট জোনের ওপারে, বাকিটা ওই তরুণীকে আনতে হচ্ছে। কিন্তু সেটা আনতে গেলেই রে রে করে তেড়ে আসছে কিছু মানুষ অথবা অ-মানুষ। অভদ্র অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘ একেবারে বাড়ির বাইরে বেরুনো যাবেনা, করোনা ছড়াবে নাকি, না দেখলেই নয়?’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কারা এরা? বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে বসে থাকা ১২ ঘন্টা আড্ডাবাজের দল। কোনও বস্তি বা গ্রামের ঘটনা নয়, ঘটনা খোদ মেদিনীপুর শহরের মিরবাজারের!
বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে এক নিদারুণ অসহায়তার কথা লিখেছেন ওই তরুণী। বলছেন,”কারোর কোনও সাহায্যতো পাওয়াই যাচ্ছেনা উল্টে গালিগালাজ চেঁচামেচি। বাড়ির সামনেই বসে আছে কয়েকজন, সকাল থেকে রাত ১১টা অবধি দফায় দফায় আড্ডা। কারোরই মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দূরত্ব মানা নেই। আমাদের বাড়িতে ২জন স্বাস্থ্যকর্মী অথচ ওরা আমাদেরকেই তড়পে চলেছে। কে তাহলে আমাদের খাবার জল দিয়ে যাবে, কে দিয়ে যাবে নানান প্রয়োজনীয় জিনিস? অত্যন্ত অসহায় লাগছে।”
ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করতেই তরুণী জানালেন, ‘ আমি তো আক্রান্ত নই। আমার বাবাও নয়। বাকি মা, ভাই, কাকা, কাকিমা, বোন আক্রান্ত। পুলিশ বলেছে, বাড়িতেই থাকুন, উপসর্গ যখন নেই তখন অসুবিধা নেই। তাহলে ওরা আইসোলেশনে।ওদের দেখবে কে? আমি ছাড়া? আমি বাইরে কোথাও যাচ্ছিনা। কন্টেনমেন্ট জোনের ওপারে দোকানের লোক জল, খাদ্য শস্য, ইত্যাদি রাখছে। আমি শুধু সেটা এনে ঘরে তুলছি। তাতেই রে রে করে উঠেছে ওই ঠেকের ছেলে মেয়েরা। বাড়ির দরজা খুললেই চিল চিৎকার, বাইরে বেরুনো যাবেনা। কারন কি? না, ওঁদের আড্ডা বন্ধ হয়ে যাবে!”
বৃহস্পতিবার ফেসবুকে এই ঘটনার পরই গর্জে উঠেছেন মেদিনীপুর খড়গপুরের মানুষ। এঁদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই বেশি। অনেকেই নিজের ফোন নম্বর দিয়ে জানিয়েছেন, কোনও প্রয়োজন হলে বলবেন। আমরা আছি। এঁদেরই কেউ কেউ জানিয়েছেন পুলিশ ও প্রশাসনকে। শুক্রবার কেউ কেউ পৌঁছে দিয়েছেন খাবার দাবার ছাড়াও মহিলাদের প্রয়োজন হতে পারে এমন কিছু জিনিস। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততায় পিছু হটেছে আড্ডাবাজরা। নির্লজ্জ্ব আড়চোখে দেখেছে মানুষের প্ৰয়োজনে কীভাবে মানুষ এগিয়ে আসে, রা কাড়েনি। পুলিশও জানিয়েছে, কোনও ভয় নেই। অসুবিধায় পড়লেই জানান, বাকিটা বুঝে নেবে পুলিশ। অবশেষে স্বস্তিতে করোনা যোদ্ধার পরিবার। জানিয়েছেন, ভাল আছি। ভরসা পাচ্ছি, ধন্যবাদ সব্বাইকে।