নিজস্ব সংবাদদাতা: জমির বেআইনি লেনদেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গিয়ে অতিমারি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখালেন খোদ শাসক দলের নেতাই। পাশাপাশি সরকারি আধিকারিককে আঙুল তুলে শাসানি, টেবিলে ফাইল আছড়ে ফেলার মত কান্ডও ঘটিয়ে ফেললেন তিনি। অতিমারি আইনের দোহাই দিয়ে যখন বিরোধীদের একের পর এক কর্মসূচি আটকে দেওয়া হয়, যখন বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয় তখন শাসক দল বলে আইন ভেঙে পার পেয়ে যায় কী করে? প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
ঘটনা বৃহস্পতিবার দুপুরের নারায়নগড় ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক (বিএলএলআরও)কর্মীদের বিরুদ্ধে জাল রেকর্ড বানিয়ে জমি কেনাবেচার দুর্নীতিতে সহযোগিতার অভিযোগ তুলে ভূমিরাজস্ব দপ্তরে অভিযান চালান জেলাপরিষদ সদস্য ও নারায়নগড় ব্লক তৃণমূলের নেতা সূর্যকান্ত অট্ট। এই অভিযান চালানোর সময়ে অট্ট নিজে মাস্ক পারেননি। সঙ্গে ডজন খানেক অনুগামী নিয়ে গেছিলেন যা এই অতিমারির সময়ে একেবারেই বেআইনি কাজ। ওই নেতা দাবি করেন, কয়েক বছর আগে একটি বেসরকারি কোম্পানির নামে কেনা জমির রেকর্ড জালিয়াতি করে বিক্রি করছে এক শ্রেণীর জমি মাফিয়ারা।
এই ঘটনায় জমি মাফিয়াদের সহযোগিতা করছেন নারায়ণগড় ব্লক ভূমি রাজস্ব দফতরের এক শ্রেণীর কর্মচারী। গত সপ্তাহে এই বিষয়ে লিখিত ভাবে ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিককে জানানো সত্বেও কোন সুরাহা না হওয়ায় বৃহস্পতিবার দফতর সদলবলে অভিযান চালান জেলাপরিষদ সদস্য ।তিনি রীতিমত টেবিলের ওপর ফাইল ছুঁড়ে মারেন পাশাপাশি অধিকারিককে রীতিমত হুমকি দেন শেষ দেখা দেখে নেওয়ার। এমনটাই অভিযোগ।
পরে অবশ্য সূর্যকান্ত অট্ট দাবি করেন যে তিনি কথা কাটাকাটির সময় হয়ত জোরে কথাবার্তা বলে ফেলেছেন কিন্তু হুমকি দেওয়ার মত কিছু করেননি। তিনি এও বলেন, এলাকায় জাল দলিল বানিয়ে জমি বিক্রির যে দালাল চক্র গড়ে উঠেছে তার প্রতিবাদ করতেই গেছিলেন। বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য তথা নারায়নগড়ের দায়িত্বে থাকা নেতৃত্ব গৌরী শঙ্কর অধিকারী বলেন,”জাল দলিল, দালাল চক্র ইত্যাদি তো সূর্যবাবুদেরই অবদান। এই এলাকায় জমি বিক্রি, দালালি করছে কারা, সরকারে কারা রয়েছে? বেলদা নারায়নগড় এলাকায় জমি নিয়ে প্রমোটারি তো ওনারাই করছেন। চুরি, বেআইনি কাজ, দুর্নীতি ওনারাই তার জন্য দায়ী। ভূমি রাজস্ব দপ্তরকে দুর্নীতির আখড়া ওনারাই বানিয়েছেন।আজ ওনার হয়ত স্বার্থে আঘাত লেগেছে, ভাগে কম পড়েছে তাই প্রতিবাদ করতে গেছেন।”
অধিকারী বলেন, “তারপরও যদি কোথাও অন্যায় হয়ে থাকে তার জন্য যথাযথ জায়গায় অভিযোগ জানানো যেত। করোনা আবহে বিশেষ করে যেখানে নারায়নগড় বেলদায় করোনা বাড়ছে সেখানে এই বেআইনি ভাবে জমায়েত করে অভিযান চালালেন কেন? এটা চূড়ান্ত নিন্দা করছি এই নোংরামির।”
ঘটনাটি কে অবাঞ্ছিত ঘটনা বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ। তিনি বলেন , জেলার নেতারা নিশ্চই বিষয়টি দেখবেন। উল্লেখ্য কিছুদিন আগেও বেলদা শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ঠাকুরচক নামক স্থানে কয়েক হাজার লোকের জমায়েত করেছিলেন সূর্যকান্ত অট্ট। ওই জমায়েতে করোনা সংক্রমন ঘটতে পারে এমনই যুক্তি দেখিয়ে পরের দিন এলাকায় স্যানেটাইজ করেন সূর্যকান্ত অট্টর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা কর্মীরা। উল্লেখ্য গত জেলা পরিষদের আমলে কর্মাধ্যক্ষ থাকলেও চলতি বোর্ডে ঠাঁই হয়নি এই নেতার।