নিজস্ব সংবাদদাতা: জরুরি বিভাগ ছুঁয়ে সরাসরি ওয়ার্ডে চলে যায় রোগি। পরে করোনা পরীক্ষা। ফলাফল আসতে ২দিন। ততদিনে রোগি মিশে গেছে পুরো ওয়ার্ড, চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী কিংবা অন্য রোগিদের সাথে। পরে ফল আসে পজিটিভ। তখন তড়িঘড়ি ওয়ার্ড সিল করে দেওয়া, রোগিদের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া, সবার নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত, ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসকর্মী কোয়ারেন্টাইন।
সম্প্রতি এমনি অবস্থা দেখেছে খড়গপুর হাসপাতাল। পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে অভিনব উদ্যোগ নিল খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল। জরুরি বিভাগ থেকে মূল ওয়ার্ডে যাওয়ার আগে এবার রোগিকে থাকতে হবে মধ্যবর্তী একটি ওয়ার্ডে যার নাম দেওয়া হচ্ছে করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড।
খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী জানালেন, ” মহিলা মেডিক্যাল ওয়ার্ডকে এবার রূপান্তরিত করা হচ্ছে এই করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ১০টি করে ২০টি শয্যা থাকবে এখানে। জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি করতে হবে এমন রোগি প্রথমে এখানে আসবেন। তার করোনা পরীক্ষার পর ফল না আসা অবধি এই ওয়ার্ডেই থাকবেন। ফলাফল নেগেটিভ আসলে বরাদ্দ ওয়ার্ডে পাঠানো হবে। পজেটিভ হলে করোনা হাসপাতালে অথবা আইসোলেশনে। এর ফলে একটা পুরো ওয়ার্ডকে সংক্রমনের ভয়ে বন্ধ করে দিতে হবেনা।”
পাশাপাশি মহিলা মেডিক্যাল ওয়ার্ডটি আপাতত মহিলা সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পাশাপাশি চলবে বলে জানিয়েছেন সুপার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এটি একটি অভিনব পদ্ধতি যা জেলার অন্য হাসপাতাল গুলিতেও নেওয়া হবে কারন সংক্রমনের জন্য হাসপাতাল সাময়িক বন্ধ করলে রোগিরা অসুবিধায় পড়ছেন। পাশাপাশি বড় আকারের কোয়ারেন্টাইন হয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা কর্মীরা। ফের কর্মীদের করোনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে ফলে সময় নষ্ঠ হচ্ছে। খড়গপুর যে উদ্যোগ বর্তমান গ্রহন করতে চলেছে তা ওই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
এদিকে দ্রুত করোনা পজিটিভ কিনা জানার জন্য শনিবার থেকে আ্যন্টিজেন পরীক্ষা শুরু হল খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। এরফলে জরুরি ভিত্তিতে করোনা পজেটিভ বা নেগেটিভ জানা যাবে। এই পদ্ধতিতেই শনিবার মর্গে আসা একটি মৃতদেহকে পরীক্ষা করে মাত্র ৩০মিনিটে জানা গেছে তাঁর করোনা হয়েছিল। এদিন মোট ১৭ জনের এই টেস্ট হয়েছে। আগামী দিনে এই টেস্টের পরিমান আরও বাড়ানো হবে।
শনিবার ফের খড়গপুর শহরে ৫জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে যার মধ্যে তিনজন রেলের। যার মধ্যে একজন মহিলা ২জন রেলের কমার্শিয়াল ও সিগন্যাল কন্ট্রোলের কর্মী। ডিআরএম অফিসের মধ্যে এদের অফিস। ৪২বছরের মহিলা নিউ সেটেলমেন্ট রেল আবাসনে ও ৪৩ বছর বয়সী পুরুষটি নিজে ভাড়া নেওয়া বাড়ি ২৮নম্বর ওয়ার্ডের তল ঝুলির বাসিন্দা।
তৃতীয় আক্রান্ত ব্যক্তি ৫২ বছরের একজন আরপিএফ কর্মী। তিনি আরপিএফ ব্যারাকেই থাকতেন। এঁদের কারুরই কোনও বিশেষ উপসর্গ ছিলনা শুধু তলঝুলির আক্রান্ত ক’দিন ধরে খাবারের স্বাদ পাচ্ছিলেন না।
এদিন ঝাপেটাপুরেই আরও এক ২৫ বছর বয়সী আক্রান্ত যুবককে পাওয়া গেছে। তবে পঞ্চম আক্রান্ত গোলবাজের এক ১২ বছরের বালিকার সংক্রমন চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোলবাজারে ফল বিক্রি করে ওই পরিবারটি যাদের মেয়ে আক্রান্ত। তার বাবা মা আক্রান্ত নয়। তার নিজেরও কোনো উপসর্গ নেই। কি ভাবে আক্রান্ত ওই বালিকা তা জানার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য দপ্তর।