নিজস্ব সংবাদদাতা: শালবনীর করোনা লেভেল ফোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেবরা থানার বারাটি গ্রামের গ্রামীন চিকিৎসক ভালই আছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে যদিও নতুন করে তাঁর স্ত্রী ও পুত্র আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে রবিবার রাতে। গত সপ্তাহে ওই গ্রাম থেকে ২০০মিটার দুরত্বে বাকলসা সেবকরাম গ্রামে জ্বরে আছন্ন পোস্ট মাস্টারকে শেষ বারের মত চিকিৎসা করতে গিয়েছিলেন এই গ্রামীন চিকিৎসক। পাড়া প্রতিবেশী যখন কার্যত ভয়েই সিঁটিয়ে ছিল তখনও নিজের দায়িত্ব থেকে সরে আসেননি এই চিকিৎসক। সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যান। যদিও সব চেষ্টা ব্যর্থ করেই মৃত্যু হয় পোস্ট মাস্টার মশাইয়ের। পরে করোনা পরীক্ষায় দেখা যায় তিনি পজেটিভ ছিলেন। এরপরই ওই মৃতের পরিবারের সঙ্গেই নমুনা জমা দেন তিনি।
বাকলসার পোস্ট মাস্টারের পরিবারের ৭ জনের সঙ্গে পজিটিভ হয়ে পড়েন এই চিকিৎসক। এরপরই অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও শালবনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫৬বছরের ওই চিকিৎসক আপাতত সুস্থ। এদিকে চিকিৎসক করোনা পজিটিভ হওয়ার পরই কয়েক দফায় বারাটি গ্রামের ২০ জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়। যার মধ্যে রবিবার জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ওই চিকিৎসকের ৪৮ বছর বয়সী স্ত্রী এবং ২৭বছরের পুত্র আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও এঁদের কারুরই উপসর্গ নেই বলেই জানা গেছে। সোমবার এঁদের অবস্থা পর্যবেক্ষন করার পরই স্বাস্থ্য দপ্তর ঠিক করবে এঁদের ডেবরা সেফ হোম বা অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।
এই চিকিৎসকের মতই মৃত পোস্ট মাস্টারের পরিবারের আক্রান্ত সদস্যরাও ভাল আছেন বলেই জানা গেছে। এই পরিবারের যে ৭ জন করোনা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তাঁর মধ্যে ওই পোস্ট মাস্টারের ৭৮ বছর বয়সী মা এবং ৫৭বছর বয়সী দাদার বয়সই সব চেয়ে বেশি তাই তাঁদের নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল বেশি। বিশেষ করে মাত্র ৫১ বছরের পোস্ট মাস্টারের মৃত্যু আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল বেশি। যদিও এখনও অবধি সবাই সুস্থ আছেন এটাই বড় সুখের খবর।
উল্লেখ্য ডেবরাতে করোনা আক্রান্তের তালিকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স এমনকি পুলিশ কর্মী অবধি আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সৌভাগ্যর যে মৃত্যুর ঘটনা ওই একটি তবুও সেই মৃত্যুর কারন সময় মত হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়া। দিনের পর দিন জ্বরে ভোগার পরও হাসপাতালে নিয়ে যায়নি পরিবার। এরকমই আরেকটি ঘটনা গোলগ্রামের খাসকেন্দু বাগিচা গ্রামে। এই গ্রামেরও এক ব্যক্তি অজানা জ্বর নিয়ে মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের তিনজন করোনা আক্রান্ত হন যদিও মৃত ব্যক্তির করোনা পরীক্ষা না হওয়ার কারনে তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা জানা যায়নি। দুর্ভাগ্য জনক যে এখানেও রোগীর প্রকৃত চিকিৎসা হয়নি। এই দুটি ঘটনা বাদ দিলে ডেবরার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনেই রয়েছে।
এখনও অবধি এই থানা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ জন। এর মধ্যে অর্ধেকই পুরোপুরি করোনা মুক্ত হয়েছেন। একটি মৃত্যুর কলঙ্ক ছাড়া বাকিরাও ভাল হয়ে উঠছেন দ্রুত। শুধু একটাই বিষয় সামান্য হলেও ভাবনার যে এই ৩০ জনের মধ্যে ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন ২ মাসে কিন্তু বাকি অংশ আক্রান্ত হয়েছেন এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে। অর্থাৎ সংক্রমনের হারটা দ্রুত। এটা কমানোর জন্য করোনা বিধি মেনে চলা আর সাবধানতা অবলম্বন করা ব্যতিরেকে অন্য পথ নেই। এমনটাই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।