নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুরের মহকুমা প্রশাসন ও পুলিশ যেমনটাই আশঙ্কা করছেন ঘটছেও তাই। খড়গপুর শহরকে লক ডাউনের শেকল পরাতে না পারলে শহরে বেলাগাম সংক্রমন যে রুখে দেওয়া যাবেনা তা ফের প্রমানিত হল রবিবার। রবিবার গভীর রাতে পাওয়া জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী যে ২ জনের পজিটিভ এসেছে তাঁরা ২ জনেই হয় শহরের বাইরে থেকে এসেছেন অথবা শহর ছেড়ে বাইরে গিয়ে ফের শহরে ফিরেছেন।
এদিন যে দুজনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে তাঁদের একজন খড়গপুর সভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাপের বাড়িতে এসেছেন অন্য জন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। জানা গেছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়ার এক অবসর প্রাপ্ত রেলকর্মীর বৃদ্ধা স্ত্রী সঙ্কট জনক অবস্থায় রেলের গার্ডেনরিচ হাসপাতালে ভর্তি। খবর পেয়ে মা কে দেখার জন্য দিল্লি থেকে ৩২বছরের মেয়ে ছুটে আসে। ১৬ তারিখ রাজধানী এক্সপ্রেসে আসেন ওই মহিলা। খড়গপুরে এসে ভাইদের সঙ্গে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন এমনটাই উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু গোল বাধে পাড়াতে আসার পর। পাড়ার লোকেরা পরিষ্কার জানিয়ে দেয় করোনা পরীক্ষা না করালে তারা থাকতে দেবেন না। বাধ্য হয়ে ১৭ তারিখ খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নমুনা দেন তিনি যা কিনা শনিবার অমীমাংসিত এলেও রবিবার দ্বিতীয় দফার পরীক্ষায় পজিটিভ আসে।
অন্যদিকে নিমপুরা ১২নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ানমাড়ো এলাকার ৫০ বছর বয়সী যে ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন তিনি টাটা মেটালিকের কর্মী। ১৫ তারিখ ওই ব্যক্তি ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায় যান। সকালে গিয়ে বিকালে ফিরে আসেন তিনি। ১৬ তারিখ তাঁর জ্বর এবং অস্বস্তি বোধ শুরু হয়। সন্দেহ জনক মনে হওয়ায় ১৭ তারিখ খড়গ পুর মহকুমা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য সোয়াব দিয়ে যান। ১৯ তারিখ তাঁর ও পজিটিভ আসে। যদিও বর্তমানে এই দুজনের কারুরই উপসর্গ নেই।
পুলিশের পরামর্শ হল দুজনই চাইলে বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকতে পারেন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মহিলার ক্ষেত্রে পাড়ার লোকেরা করোনা আক্রান্ত পাড়ায় থাকুক তারা চাইছে না। প্রথম দিনের মতই তারা মহিলার বাপের বাড়ির সামনে এসে মহিলাকে হয় হাসপাতালে কিংবা অন্য কোথাও থাকার জন্য জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের পরিষ্কার কথা বাকিদের স্বার্থে তাঁরা কোনও করোনা আক্রান্ত কে এলাকায় থাকতে দেবেননা।
অন্যদিকে টাটা মেটালিক কর্মচারী জানিয়েছেন বাড়িতে থাকার মত পরিকাঠামো তাঁর নেই। তিনি হাসপাতালেই থাকতে চান। এদিকে পুলিশের সমস্যা হল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কিংবা আয়ুশ হাসপাতালের শয্যা প্রায় নেই বললেই চলে। যে সামান্য কয়েকটি রয়েছে তা বেশি সংক্রমিত বা সঙ্কট জনক অবস্থায় রয়েছেন এমন রোগী দের জন্য রাখতে হয়েছে। এই অবস্থায় এই দুজনকে নিয়ে কি করা যায় তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশ।
পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, শালবনীর কিছু শয্যা সন্ধ্যের মধ্যে খালি হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে যদি তাই হয় তাহলে কিছুটা সুরাহা হবে নচেৎ দুজনকে কোথায় সরানো যায় সেটা ভাবতে হবে। উল্লেখ্য মৃদু সংক্রমন রয়েছে এমন রোগীদের জন্য রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় সেফ হোম থাকলেও পশ্চিম মেদিনীপুরে তা এখনও গড়ে ওঠেনি। খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল সহ ৬টি জায়গায় মৃদ সংক্রামকদের জন্য সেফ হোম গড়ার কথা ছিল যা এখনও গঠনের পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশের বক্তব্য হল খড়গপুরের মত শহর যেখানে অবিরত বাইরে যাওয়া বা বাইরে থেকে আসার ঘটনা ঘটছে এতে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা না বহাল করা অবধি সংক্রমন রুখে দেওয়া কার্যত অসম্ভব। পুলিশ জানিয়েছে এখনও অবধি ৪০ জনের কাছাকাছি আক্রান্ত হয়েছেন শহরে। এরমধ্যে গুটি কয়েকের সংক্রমন সূত্র উদ্ধার করা সম্ভব না হলেও বেশির ভাগই আমদানি হয়েই এসেছে।