নিজস্ব সংবাদদাতা: বেলদা, দাঁতন, সাউরি, জাহালদা আর মাত্র ২৪ঘন্টা আগে লাগোয়া এলাকা মান্ন্যা বস্তাপুরা গ্রামেও করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। যাতে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে সংলগ্ন গ্রামগুলির এলাকা জুড়ে সক্রিয় রয়েছে করোনা ভাইরাস। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট যে উপসর্গহীন বহু সক্রিয় করোনা আক্রান্ত মানুষের এই এলাকায় থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এত সবের মধ্যেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা থানার অন্তর্গত ঠাকুরচকের এখনও একটাই আশার যে, ঘনবসতি পূর্ন বড় একটি বাজার ও গঞ্জ এলাকায় এখনো কোনও পজিটিভ কেস পাওয়া যায়নি। কিন্তু রবিবারের পর সেই আশা কার্যত আতঙ্কে পরিনত হয়েছে শাসকদলের এক নেতার অবিবেচনা পূর্ন শক্তির আস্ফালন দেখানোর মরিয়া চেষ্টায়।
রবিবার বিকেলে ঠাকুরচক এলাকায় দলের নামেই একটি মিছিল ও সভার আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে হাজির ছিলেন হাজার দেড়েক মানুষ। সমবেত হয়েছিলেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধক্ষ্য তথা তৃনমূলের নারায়নগড় ব্লক সভাপতির বিরোধী গোষ্টির নেতা সূর্যকান্ত অট্ট। মিছিলে সূর্যকান্ত অট্টর অনুগামীদের পাশাপাশি আশেপাশের গ্রামগুলির সেল্ফ হেল্ফ গোষ্টির মহিলারা উল্লেখ যোগ্য ভাবে উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন প্রচুর মানুষ এসেছিলেন করোনা আক্রান্ত এলাকা থেকেও। এলাকার সাধারন মানুষের প্রশ্ন করোনা আবহে যেখানে মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ সেখানে একজন নেতা হয়ে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরন করে কেন ঠাকুরচকের মানুষকে বিপদে ফেলে দিলেন সূর্য।
স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ ওই সব মানুষ শুধু মিছিল বা সভা করেছেন তাই নয় পান, গুটকা ইত্যাদি খেয়ে গোটা এলাকায় থুতু ফেলেছেন। যদি তাঁদের মধ্যে কেউ উপসর্গ হীন করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে এলাকায় করোনার জীবানু মজুত করে ফিরে গেছেন যার থেকে এখানকার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। এলাকার মানুষের বক্তব্য এরপর যদি ঠাকুরচক এলাকায় করোনা ছড়ায় তবে তার দায়িত্ব কে নেবে?
স্থানীয় এক ব্যক্তি জানালেন, ” রবিবার সকাল অবধি আমাদের এই এলাকা নিরাপদ ছিল কিন্তু তারপর কী হবে কেউ জানেনা। আমাদের একমাত্র বাজার এই এলাকা যেখানে আমরা, আমাদের বাড়ির মহিলারা বাচ্চারা নিঃসঙ্কোচে যাওয়া আসা করতাম। রবিবার বিকেলের পর থেকে আমরা রীতিমত আতঙ্কে রয়েছি। এখন এই বাজারে আসাটাই ভয়ের হয়ে দাঁড়ালো। সূর্যবাবুর ক্ষমতা দেখানোর থাকলে নিজের এলাকা বেলদা শহরেই দেখাতে পারতেন। শুধু শুধু আমাদের এই অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিয়ে গেলেন কেন?”
অবাক করার বিষয় হল, “এলাকায় এতবড় মিছিল সভা সম্পর্কে কিছুই জানেননা স্থানীয় তৃনমূল নেতা থেকে ব্লক স্তরের নেতারাও। স্থানীয় তুতরাঙা অঞ্চলের দলীয় সভাপতি গোবিন্দ হুই জানিয়েছেন, আমরা জানিইনা কিসের মিছিল আর কিসের সভা হল, আমরা কোনও মিছিল বা সভার আয়োজন করিনি। এমনকি যারা এসব করলেন তাঁরা আমাদেরও কিছু জানাননি। আমরা নিজেরাও অবাক হচ্ছি যে এত মানুষকে সমবেত করে মিছিল মিটিং করার কি প্রয়োজন ছিল। ”
তৃণমুকের নারায়নগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ বলেন, আমি জানিনা ওই মিছিলের জন্য পুলিশের অনুমতি ছিল কী না তবে আমাদের দলের পক্ষ থেকে সেদিন ওখানে কোনও কর্মসূচি ছিলনা বলেই জানি। বাকিটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”
এদিন সূর্য অবশ্য খোশ মেজাজেই ছিলেন। দলের প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের প্রতি যথারীতি অনাস্থা প্রকাশ করেই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “২০১১সালে আমি যখন বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হই তখন এই তুতরাঙা অঞ্চলে আমি ৫০০ ভোটে জিতেছিলাম। সেই তুতরাঙাতে আজ আমাদের সংগঠনের হাল এত খারাপ কেন তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।” তুতরাঙা অঞ্চলের সূর্য বিরোধী গোষ্ঠির জবাব, “সংগঠনের বাকি যেটুকু ভাল ছিল সেটাও আজ সূর্যদা খারাপ করে দিয়ে গেলেন। যদি ঠাকুরচকে এরপর কেউ করোনা আক্রান্ত হন তবে মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না।” বলাবাহুল্য রবিবারের ঘটনায় ঠাকুরচকের ক্ষোভের আগুন টের পেয়েছেন এই নেতা।