নরেশ জানা: মাত্র ১০ টাকায় সার্জিক্যাল মাস্ক! তাও আবার বিশ্বমানের কারিগরি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইআইটি খড়গপুরের তৈরি? অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি এমনটাই দাবি করেছেন আইআইটির একদল গবেষক যাঁরা ইতিমধ্যেই ক্ষেত্র সমীক্ষা বা ফিল্ড স্টাডির কাজ শেষ করে ফেলেছেন। ‘আ্যনিজিয়েন টেকনিক্যাল টেক্সটাইল’ নামক এই সদ্য গড়ে ওঠা উদ্যোগ এই উন্নত মানের ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্ক (পি-৩) বানানোতে সফল হয়েছেন বলে জানা গেছে যা কিনা মাত্র ১০ টাকায় মানুষ হাতে পাবেন। আইআইটির বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি উদ্যোগ বা সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এন্টারপ্রেনারশিপ পার্ক বিভাগের(STEP) আওতায় একটি গবেষকদল এই কাজটি করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
আইআইটি খড়গপুর সূত্রে জানা গেছে ভারতের সেই সমস্ত মানুষ যাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছেন তাঁদের মধ্যে বিশেষ করে যে অংশটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি নানা পেশায় নিযুক্ত এঁদের কথা ভেবেই এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল যা কিনা সফলতার সঙ্গেই উর্ত্তীর্ণ হয়েছে এখন এটিকে বাজার জাত করার জন্য উৎপাদন উপযোগী করে তোলার কাজ চলছে। লক্ষ্য এক মাসে এক লক্ষ মাস্ক উৎপাদন।
সদ্য গড়ে ওঠা এই কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্য নিয়ে বাজার পর্যবেক্ষনের কাজ সেরে নিয়েছে। পর্যালোচনা করা হয়েছে বাজার গত ঝুঁকিরও। “সব দিক থেকেই আমরা উৎসাহপূর্ন ও আশাব্যঞ্জক ফল লাভ করেছি। আমরা এখন প্রতি মাসে ১লক্ষ মাস্ক উৎপাদনের বাজারকে লক্ষ্য করেই পূর্ন মাত্রায় উৎপাদন শুরু করতে চলেছি যা মাত্র ১০ টাকায় মানুষের হাতে প্রথম শ্রেণীর মাস্ক পৌঁছে দেবে। এই ধরনের গুনমানের ত্রিস্তরীয় মাস্ক আপনি ৫০টাকা প্রতি পিসের নীচে পাবেননা।” জানালেন কোম্পানির এক সদস্য।
সদ্য গড়ে ওঠা এই উদ্যোগপতি প্রতিষ্ঠান, আ্যনিজিয়েন টেকনিক্যাল টেক্সটাইল’ য়ের ডিরেক্টর তথা আইআইটি খড়গপুরের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের গবেষক ডক্টর সত্যব্রত ঘোষ বলেন, ‘ আমরা মাথায় রেখেছি সমাজের সেই মানুষগুলির কথা যারা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল বলে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হন, যাঁরা অভাবের জন্যই ব্যয়বহুল স্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে এড়িয়ে চলেন। পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’ র সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষন হল কোভিড-১৯ বা করোনা বিশ্বের সঙ্গে মানুষের লড়াই দীর্ঘতর হতে চলেছে। এখনও দুর্বল হয়ে পড়েনি জীবানু ফলে একে মোকাবিলা করতে আরও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে মানব সভ্যতাকে। করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে এখনও ঢের দেরি আর সেই পথে মানুষের এখন জরুরি অনুষঙ্গ মাস্ক। স্বাভাবিক ভাবেই মাস্কের চাহিদা ক্রমশ গগনচুম্বি হয়েই চলেছে। এমনই পরিস্থিতিতে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আইআইটি খড়গপুরের মত উন্নতমানের প্রযুক্তি ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এমনটাই জানিয়েছেন আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারী।
অধ্যাপক তেওয়ারী বলেন, ” বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের বুনিয়াদি প্রয়োজনগুলি তাঁর আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে পেতে সাহায্য করাটা এখন খুবই জরুরি। এই ধরনের উদ্যোগ তৈরি করতে আমাদের সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এন্টারপ্রেনারশিপ পার্ক যে কাজ করে চলেছে তা প্রশংসনীয়। আমি এই গবেষক গোষ্টিকে ধন্যবাদ জানাই কারন বর্তমান সময়ে এঁরা আমাদের দেশ ও জাতিকে নিরাপদ রাখার জন্য এগিয়ে এসেছেন।”
আইআইটি খড়গপুর এবং ভারত সরকারের বস্ত্র মন্ত্রকের সহায়তায় সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এন্টারপ্রেনারশিপ পার্কের মধ্যে এই গবেষনা মূলক উদ্যোগটি পুরোপুরি বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন সাযুজ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে কারন জাতিকে সাহায্য করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সফল উদ্যোগপতি গড়ে তোলাই এখানকার লক্ষ্য। ” পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের লক্ষ্য বিভিন্ন ফলের আঁশ থেকে মাস্ক তৈরি করা যা কিনা প্রকৃতি বান্ধব ও পরিত্যক্ত হলে সহজেই প্রকৃতিতেই মিশে যেতে পারে।”