নিজস্ব সংবাদদাতা: কেরলে গর্ভবতী হাতির মৃত্যু ঘিরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিল গোটা দেশ। তবে ঢেঁকির স্বর্গে গিয়ে ধান ভাঙার মত এই নিয়ে বাজার মাত করতে বাজারে নেমেছিল বিজেপির মিডিয়া সেল আরও বেশি করে বললে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ যারা প্রায় হাতির মৃত্যুর পেছনে স্বয়ং কেরলের কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এবার যে ঘটনা ঘটেছে বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় তা হাতি মৃত্যুর ঘটনার চেয়ে কোনও অংশে কম নয় কারন এক্ষেত্রে সরকারের কাছে সরাসরি সাহায্য চাওয়া হয়েছিল নিরীহ অবলা প্রানীগুলিকে বাঁচানোর জন্য যা কিনা সরকার কর্ণপাতই করেনি আর স্রেফ না খেতে পেয়েই মৃত্যু হয়েছে ৮০টি গরুর। আইন করে গো রক্ষার কথা ঘোষণা করেছিল যে সরকার ঘটনা সেই বিজেপি শাসিত হরিয়ানার মর্মান্তিক ছবি এবার প্রকাশ্যে এল।
হরিয়ানার সাড়ে তিন একর জমির উপর তৈরি শ্রীকৃষ্ণ গোশালায় থাকত মোট ১ হাজার ৮৫০টি গরু। লকডাউনের ফলে গরুগুলিকে পর্যাপ্ত খাবার জোগাতে না পারার ফলেই না খেতে পেয়ে মারা গেল ৮০টি গরু। গোশালার মালিক পক্ষের দাবি, না খেতে পেয়ে তিল তিল করে মারা গিয়েছে গরুগুলি। সরকারের সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন কোনও সাহাষ্য করেনি। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকার জেরে মালিক পক্ষের খাবার জোগাড়ের কোনও পথ ছিল না। ফলে গরুগুলি না খেতে তাদের চোখের সামনেই মারা যায়। হরিয়ানার শ্রীকৃষ্ণ গোশালার এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
হরিয়ানার সামালখা চুলাকানা অঞ্চলের শ্রী কৃষ্ণ গোশালায় আরও অনেক গরু রোগাক্রান্ত হয়েছে। মালিক পক্ষ জানাচ্ছে, সেই গরুগুলিও মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। বারবার সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সাহায্যের আবেদন করেও লাভ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন চলছে। যার ফলে গরুদের খাবার জোগাড় করে উঠতে পারছে না মালিক পক্ষ। তার উপর কোনও গরু রোগে আক্রান্ত হলে তখুনি সেটির চিকিৎসা করানোও সম্ভব হয়নি। ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। লকডাউনের পর থেকে প্রবল খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে গোশালায়। ঘটনায় ক্ষোভে হরিয়ানার সরকারকে দুষছেন অনেকে। হরিয়ানার সরকার গরুর স্বার্থরক্ষায় একাধিক আইন প্রণয়ন করেছে। এদিকে তাদের রাজ্যেই ৮০টি গরু না খেতে পেয়ে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়ে মারা গেল!
শ্রীকৃষ্ণ গোশালায় গরুদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মনজের কুলদীপ বলেছেন, এখনও অনেক গরু অসুস্থ। দ্রুত তাদের চিকিৎসা করা প্রয়োজন। না হলে গরু মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মনজের জানিয়েছেন, অনেক গরু এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে খাবার দিলে উঠে খেতেও পারছে না। গোশালার ছবি শেয়ার হওয়ার পর থেকে অনেক পশুপ্রেমী সরব হয়েছেন। মর্মান্তিক সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গোশালায় মরে পড়ে আছে গরু। আর গরুর মৃতদেহ থেকে মাংস খুবলে খাচ্ছে কুকুর, কাক।
দেশ জুড়ে গরুকে ঘিরে একের পর এক নৃশংসতা দেখেছে এই দেশ। কখনও গরুর মাংস আছে এই অজুহাতে বাড়িতে ঢুকে পিটিয়ে মারা হয়েছে মানুষকে। কখনও আবার গরু পাচারের অভিযোগে মারা হয়েছে মানুষকে। সর্বত্রই অভিযোগ উঠেছে বিজেপি অথবা আরএসএস মদতপুষ্ট দুষ্কৃতিদের দিকেই। গরুপ্রীতির সেই আসল কারন যে আসলে গরুর জন্য, ভোটের জন্যই এমনই কটাক্ষ এবার নেট দুনিয়ায় ভাসছে এই মর্মস্পর্শী ছবি বাইরে আসার পর। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন হাতির মৃত্যুর পর যিনি বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সেই মানেকা গান্ধি এখন কোথায়? নেটিজেনরা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, হাতির মৃত্যুকে যিনি ভারতীয় সংষ্কৃতির সঙ্গে যায়না বলেছিলেন সেই প্রকাশ জাভরেকার জবাব দিন, ৮০টি গরুর অনহারে মৃত্যু কোন ভারতীয় সংস্কৃতির বাহক?