Homeআবহাওয়াসর্বনাশা বজ্রপাতে অনাথ ৭ বছরের কন্যা! ২৪ ঘন্টা পরেও জানেনা বাবা-মা নেই

সর্বনাশা বজ্রপাতে অনাথ ৭ বছরের কন্যা! ২৪ ঘন্টা পরেও জানেনা বাবা-মা নেই

Thunderstorms claimed 28 lives on Monday. There is no recent instance of such a terrible thunderstorm in the state. Hooghly 11, Murshidabad 9, two Medinipur and Bankura 2 each. One person also died in Nadia but no one was in pain like Raikar. For a second grader who has been orphaned overnight, this cursed day will last a lifetime. No one can tell the truth to the little girl who is in a terrible trauma. Is it so easy to tell such an extreme truth, such a tragic truth, such a horrible truth?

নিজস্ব সংবাদদাতা: কি ভাষায় মেয়েটাকে জানানো হবে যে তার বাবা-মা আর নেই বুঝে উঠতে পারছেনা আত্মীয় বন্ধু বান্ধব প্রতিবেশীরা। সোমবার মাঠ থেকে যখন দেহ দুটি তুলে এনে ঘরে পাশাপাশি শোয়ানো হয়েছিল তখনও মেয়েটা জানে বাজপড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাবা মা। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল নয়, শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হেমন্ত আর মালবিকাকে। হুগলি জেলার খানাকুল থানার প্রান্তিক একটি গ্রাম বালিপুর। সেই বালিপুর গ্রামের শ্মশানেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১০বছরের দাম্পত্য জীবন। শুধু উত্তরাধিকার হিসাবে তাঁরা রেখে গেলেন ৭ বছরের রাইকা কে। এক হৃদয়স্পর্শী মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতবাক হয়ে আছে বালিপুর গ্রাম। রাতারাতি অনাথ হয়ে যাওয়া মেয়েটিকে স্বান্তনা জোগানোর ভাষা নেই কারুরই মুখে।

সোমবার সেই অভিশপ্ত দিন। দক্ষিণবঙ্গের ৬টি জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। আর এই ২৭ জনের মধ্যে হুগলি জেলায় মৃত্যু হয়েছে সর্বাধিক ১১জনের। এই ১১ জনের ২জন হলেন হেমন্ত গুছাইত ও তাঁর স্ত্রী মালবিকা। হেমন্তর ৪২ আর মালবিকার ৩৮ বছর বয়স। বালিপুর গ্রাম লাগোয়া বিঘা চারেক জমি রয়েছে হেমন্তের। সেই জমিতে এবার চিনা বাদামের চাষ করেছিলেন। আগের দিনই শেষ হয়েছে বাদাম তোলার কাজ। মাঠের মধ্যে জড়ো করে রাখা ছিল সেসব। একটু রোদ খাইয়ে তুলে নেওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকাল নামার মুখে দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশ কালো করে সেজে ওঠা মেঘ দেখেই প্রমাদ গুনেছিল স্বামী-স্ত্রী। হাতে একটা ত্রিপল নিয়ে দৌড়ে ছিল হেমন্ত মালবিকা। সেই প্রথম প্রেমবেলার মত বৃষ্টি ভেজার জোড়া দৌড় নয়, ফসল বাঁচানোর তাগিদ।

প্রতিবেশী প্রণয় সামুই জানিয়েছেন, ” অত্যন্ত সৌখিন মানুষ ছিল হেমন্ত। খানাকুল বাজারে একটা স্টুডিও ছিল তাঁর। সেখানেই ছবি তুলত সে। ছবি তোলায় দারুন হাত ছিল তাঁর। মাঝে মধ্যে ক্যামেরা নিয়ে স্ত্রী আর মেয়ের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ত আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলতে। অনেকবারই বাবা নেওটা মেয়েটার সঙ্গে গলা জড়িয়ে থাকা আদুরে ছবি তুলে আমাদের দেখাত। স্বামী-স্ত্রী আর মেয়ে তিনজনের সংসার। হেমন্তের ভাইরা আলাদা থাকে। জমি কখনও নিজের হাতে চাষ করতনা হেমন্ত। ভাগেই দিয়ে দিয়েছিল কিন্তু কাল করল গতবছর থেকে শুরু হওয়া লকডাউন। মাসের পর মাস দোকান বন্ধ ছিল গতবছর। ওদিকে জমিতেও মজুর পাওয়া যাচ্ছেনা বলে ভাগচাষী চাষ করেনি। বাধ্য হয়ে এবছর নিজেই বাদাম লাগিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের পুরোদমে স্টুডিও চালু করবে এমন ইচ্ছা ছিল কিন্ত সে আর হল কই?”

মাত্র তো ১০টা বছর! সংসারের চাপে শুকিয়ে যায়নি প্রেম। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দুটিতে ছুটেছিল মাঠের দিকে। হাতে কালো তার্পোলিন। যাওয়ার আগে রাইকাকে বলে গিয়েছিল, এখুনি ফিরব, বাইরে বের হবিনা একদম। না, আর মেয়ের কাছে ফেরা হয়নি তাঁদের। মাঠে আরও অনেকেই ছিল। যার যার বাদাম ক্ষেতে কাজে ছিল। তাঁরাই জানিয়েছেন, হঠাৎই কানে তালা লাগানো আওয়াজ আর আগুনের ঝলকানি। মুহুর্তে চারদিক অন্ধকার। ধকল কাটিয়ে উঠতে লেগেছিল প্রায় মিনিট দুয়েক। তারপরই কেউ কেউ দেখতে পান যেন হওয়ায় মিলিয়ে গেছেন হেমন্ত আর মালবিকা। কোথায় তাঁরা? পরক্ষনেই নজরে পড়ে গায়ে গা লাগিয়ে পড়ে আছে দুটি দেহ। চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্নাকাটির মধ্যেই দেহদুটি তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।

সোমবার ২৭টি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বজ্রপাত। রাজ্যে এমন ভয়াবহ বজ্রপাতের সাম্প্রতিক নজির নেই। হুগলি ১১, মুর্শিদাবাদ ৯, দুই মেদিনীপুর আর বাঁকুড়া ২টি করে মৃত্যু গুনেছে। নদিয়াতেও মারা গেছেন ১জন কিন্তু রাইকার মত যন্ত্রনা কেউ পায়নি। রাতারাতি অনাথ হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু ছাত্রীর কাছে এই অভিশপ্ত দিনটি সারা জীবন বয়ে বেড়ানোর। ভয়ঙ্কর একটা ট্রমার মধ্যে রয়ে যাওয়া ছোট্ট মেয়েটার কাছে সত্যি কথাটা বলতে পারছেনা কেউ। এত চরম সত্যি, এত মর্মান্তিক সত্যি, এত ভয়ঙ্কর সত্যি বলা কী এতই সহজ? ছবি : ফেসবুক ও পারিবারিক এ্যলবাম

RELATED ARTICLES

Most Popular