ওয়েব ডেস্ক : ফের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার গাফিলতি। গত কয়েকদিন ধরে প্রত্যেকদিন কখনো বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু, কখনো বেড খালি না থাকার বাহানায় ভর্তি নিতে অস্বীকার বিভিন্ন ঘটনায় শিরোনামে এসেছে কলকাতা মেডিক্যাল। মঙ্গলবারও সেই একই ঘটনার সাক্ষী থাকলো গোটা কলকাতা। বৃহস্পতিবার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাবাকে কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি করেছিলেন ছেলে। এরপর পরিবারের তরফে হাসপাতালে হেল্পলাইন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। প্রত্যেকবারই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। হাসপাতালের আশ্বাসে বিশ্বাস করেছিলেন রোগী পরিবার৷ টানা ছ’দিন পর বাবার খোঁজে ছেলে হাসপাতালে গেলে চক্ষু চড়কগাছ। বাবার বেডে শুয়ে রয়েছেন অন্য কেউ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করলে জানা যায় ভরতির দিনই মারা গিয়েছেন হাওড়ার সলপের অজয় মান্না নামে ওই প্রৌঢ়। মেডিক্যাল কলেজের এই গাফিলতিতে রোগী নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে গত একবছর ধরে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলে৷ হাওড়ার সলপের অজয় মান্না। জুন মাসের শেষের দিকে তাঁর সামান্য জ্বরও ছিল। বৃহস্পতিবার শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় আর দেরি করেনি বাড়ির লোক। তড়িঘড়ি প্রথমে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অজয়বাবুকে। সেখানে লালারসের নমুনা পরীক্ষার পর জানা যায় তিনি করোনা পজিটিভ৷ এরপর হাসপাতালের তরফে তাকে এমআর বাঙুরে স্থানান্তরিত করা হয়৷ এদিকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রোগীকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও ভর্তি নেয়নি রোগীকে৷ তাঁরা জানায়, এমআর বাঙুরে শুধুমাত্র করোনা পজিটিভ হলেই ভরতি রাখা যায়। এরপর রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। করোনা উপসর্গ থাকায় অজয়বাবুকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভরতি করা হয়। ওয়ার্ডে রেখেই তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়। পজিটিভ হলে তবে ভরতি করা হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কোভিড ওয়ার্ডে। এরপর হেল্প লাইন নম্বর দিয়ে পরিবারের লোকেদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷
গত কয়েকদিনে কলকাতা মেডিক্যালের কয়েকটি ঘটনা রীতিমতো গা শিউরে ওঠার মতো। এর আগে গত শুক্রবার হাসপাতালে বেড থাকা সত্ত্বেও ভর্তি নিতে অস্বীকার করায় বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন ইছাপুরের বছর ১৮-র শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শুধু যে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যতেই থেমে থেকেছে তা নয় মৃত্যুর পর দেহ নিয়েও হাসপাতালের চরম অমানবিক ব্যবহার উঠে এসেছে। শুক্রবারের পর সোমবার টাইফয়েডে আক্রান্ত জয়নগরের এক যুবকের চিকিৎসা চলাকালীন জ্বর-শ্বাসকষ্ট লক্ষ করায় করোনা পরীক্ষা না করেই করোনা উপসর্গ বলে দক্ষিণ বারাসাতের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কোভিড হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। এদিকে রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন থাকলেও হাসপাতালের তরফে ভর্তি নেওয়ার আগে ফের একবার শারীরিক পরীক্ষা করে। এদিকে অক্সিজেনের অভাবে ভর্তি নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বছর ২৬-এর অশোক।
এদিকে মৃত্যুর পর হাসপাতালের তরফে বলা হয় করোনার উপসর্গ রয়েছে তাই দেহ পরিবারকে দেওয়া যাবে না। পরিবারের তরফে একাধিকবার টাইফয়েডের বিষয়টি জানালেও তা শুনতে নারাজ হাসপাতাল। এরপর সোমবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো সরকারি বেসরকারি হাসাপাতালে বেড পাননি খোদ চন্দননগরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মেডিক্যাল কলেজে গেলে সেখানেও বেড না পেয়ে অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মারা যান রাজ্যের আমলা। এরপর মঙ্গলবার ফের সেই মেডিক্যাল কলেজেই একই রকম ঘটনা ঘটায় একটাই প্রশ্ন বারংবার উঠে আসছে, আদৌ কি রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল গুলিতে রোগী নিরাপত্তা আছে?
অজয়বাবুর ছেলের অভিযোগ, হেল্পলাইন নম্বরে নিয়মিত ফোন করলে বলা হত, “অজয়বাবু স্থিতিশীল আছেন।” এরপর ৬ দিন পর মঙ্গলবার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখেন গ্রিন বিল্ডিংয়ের ‘করোনা সাসপেক্ট’ ওয়ার্ডে যেই ভেডে তার বাবা শুয়ে রয়েছে। বিষয়টি দেখামাত্র হাসপাতাল সুপারের কাছে গেকে তিনি বলেন, তার বাবা ভর্তির দিনই মারা গিয়েছেন। আপাতত তার দেহ মর্গে রয়েছে৷ প্রশ্ন উঠছে এখানেই, বৃহস্পতিবার যে রোগীর মৃত্যু হয়েছে কেন মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন নিয়ম করে কেন জানানো হল তিনি স্থিতিশীল? কেনইবা মৃত্যুর কথা পরিবারকে জানানো হলনা? তবে কি সত্যিই হাসপাতাল কর্মীদের গাফিলতি নাকি এর পিছনে বড়ো কোনো কারণ লুকিয়ে রয়েছে এটাই এখন ভাবাচ্ছে রোগী পরিবারকে।